Cvoice24.com

জুমাতুল বিদা’য় তুমুল হট্টগোল
সাতকানিয়ায় মসজিদ কমিটি নিয়ে বিরোধে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২৩ মে ২০২০
সাতকানিয়ায় মসজিদ কমিটি নিয়ে বিরোধে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫

সাতকানিয়ায় মসজিদ কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হলেও একজনকে গুরুতর অবস্থায়  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার সময় উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের কাটগড় মিয়া খলিলুর জামে মসজিদ এলাকায়।

সংঘর্ষে আহতরা হলেন কাটগড় ফকিরার বর বাড়ি এলাকার সাবের আহমদের ছেলে আজিজুর রহমান(৪০), তার সহোদর আক্কাস উদ্দিন(৩০), পশ্চিম কাটগড় এলাকার মৃত আবদুল মোনাফের ছেলে মাহবুবুল আলম(৩৭), একই এলাকার শামসুল ইসলামের ছেলে নিজাম উদ্দিন(৩০) ও নুরুল আমিনের ছেলে মো. আউয়াল(২৫)। 

জানা যায়, মিয়া খলিলুর রহমান জামে মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলহাজ্ব মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি মাষ্টার নুরুল ইসলামের মৃত্যুর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও নতুন কোন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়নি। সভাপতি ও সেক্রেটারি ছাড়া পূর্বের কমিটি দিয়েই মসজিদ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া সভাপতি ও সেক্রেটারি না থাকায় মসজিদ ফান্ডের টাকাও ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছেনা বিধায় মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও স্থবির হয়ে আছে। অপরদিকে পূর্বের মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে কালিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাফেজ আহমদ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। 

এদিকে নতুনভাবে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য মৃত সদস্যদের স্থলে এরফানুর রহমান সুমন, আনোয়ার হোসেন ও মাষ্টার শহীদুল ইসলামসহ ৩ জনকে বর্তমান পরিচালনা কমিটির আহ্বানকৃত সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে নতুন সদস্য হিসেবে আত্মীকরণ করা হয়। স্থানীয় মুসল্লি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানিয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি  ও সদস্য এরফানুর রহমান সুমনকে মসজিদের নতুন কমিটির সভাপতি করার জন্য মুসল্লিদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক দু’টি গ্রুপ সৃষ্টি হয় এবং দু’গ্রুপের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। একটি গ্রুপ ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতিকে সভাপতি করতে চান। অন্যগ্রুপ পশ্চিম কাটগড় এলাকা থেকে এরফানুর রহমান সুমন কে সভাপতি করতে তৎপর। এদিকে মসজিদের  নিয়মিত খরচ পোষানোর জন্য সাপ্তাহিক চাঁদার টাকা ব্যাংকে জমা না করে কমিটির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র কাছে গচ্ছিত রেখে মসজিদের আনুসাংগিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। 

গতকাল শুক্রবার জুমাতুল বিদার খুতবা দেয়ার আগ মুহুর্তে ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির সহ-সভাপতি মাইকে মসজিদ নিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এখানে কেউ চাঁদা দিবেন না। ইমাম মোয়াজ্জিনের বেতনে ঘাটতি হলে তা’ তিনি পূরণ করে দেবেন। আগামী শুক্রবার নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সকল এলাকা থেকে দুজন প্রতিনিধি পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করার পর নতুন কমিটির কাছে মসজিদের আয়-ব্যয় সব হিসাব দাখিল করতে হবে।  এসব বক্তব্য রাখলে এরফানুর রহমান সুমন মাইকে চেয়ারম্যানের চাঁদাবাজ কথার প্রতিবাদ করে বক্তব্য প্রদান করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মসজিদে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় বলে মুসল্লিরা জানান। ইট পাটকেলের আঘাতে মসজিদে থাকা উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত আজিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় হট্টগোল সৃষ্টি হলে ইমাম জুমার নামাজ শুরু করে দেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজ শুরু হলেও বাইরে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল ছুড়াছুড়ি চলতে থাকে। ফলে অধিকাংশ মুসল্লিই নামাজ আদায় না করে পালিয়ে যান। ভেতরে কয়েকজন মুসল্লি ইমামের সাথে জুমার নামাজ আদায় করেন। 
যোগাযোগ করা হলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও কালিয়াইশ  ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাফেজ আহমদ বলেন, সুমন সভাপতি হওয়ার জন্য মসজিদের ভেতর গ্রুপিং করে আসছে। তিনি কোন সময় এ সমজিদে আসেন না। জুমার নামাজ অন্য মসজিদে আদায় করেন। গতকালকে এ ধরনের একটা বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতসহ দলবল নিয়ে তিনি মসজিদে এসেছেন। আমি নতুন কমিটির গঠনের কথা বলার সাথে সাথে তিনি উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন কমিটি গঠন না করে মসজিদ কমিটির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, সদস্য খোরশেদ, মাওলানা জামাল উদ্দিন ও তার ভাই কামাল উদ্দিন মুসল্লিদের কাছ থেকে মসজিদের নামে চাঁদা তুলে তা আত্মসাৎ করে আসছেন। হিসাবে দিতে গড়িমসি করে কাল ক্ষেপন করে আসছেন। এসব কাজের পেছনে ইন্দন দিয়ে আসেছন ইউপি সদস্য জামায়াত ক্যাডার সিহাব উদ্দিন। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য সিহাব উদ্দিন বলেন, আমি জামায়াত নাকি ওনি জামায়াত ক্যাডার এলাকার লোকজন ভাল করে জানেন। আসলে সকল এলাকাবাসীর ন্যায় আমিও চাই মসজিদের  একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হোক। মূল কথা হচ্ছে তিনি কমিটির সভাপতি হবেন। তাকে কমিটির সভাপতি করতে হবে। তার গদি ঠিক থাকতে হবে। ওনার সভাপতি’র পদটি পাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর কোন ধরনের ঝামেলা হবে না। 

এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির নতুন সদস্য এরফানুর রহমান সুমন বলেন, নামাজের আগে চেয়ারম্যান হঠাৎ করে মাইকে কমিটির সবাইকে পাইকারীভাবে চাঁদাবাজ বলতে থাকলে আমি প্রতিবাদ করি। এ সময় আমি মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ গ্রহন করলে এটা চাঁদাবাজি হবে কেন জিজ্ঞেস করি। তাছাড়া মানুষ মসজিদের জন্য স্ব-ইচ্ছায় টাকা দিচ্ছে জোর করে নেয়া হচ্ছেনা। এটাকে আপনার চাঁদাবাজি বলা ঠিক হয়নি। এটা বলার সাথে সাথে তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন মিন্টুসহ আরো দু’য়েকজন আমার মাইক কেড়ে নিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি, সবার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজন হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে।  

সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মূলত মসজিদের কমিটি নিয়ে ঘটনাটি ঘটে। জুমার নামাজে মসজিদের উঠানো টাকার কোন হিসাব নাই, তাই চাঁদা উঠানো যাবে না, এ কথা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বললে এতে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। পরে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়ে কয়েকজন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেছে। এ ব্যাপারে থানার কোন পক্ষই অভিযোগ বা মামরা করেনি।
 

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়