Cvoice24.com


চট্টগ্রামে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিলবোর্ড, মেয়রের কড়া হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৭ মে ২০২০
চট্টগ্রামে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিলবোর্ড, মেয়রের কড়া হুঁশিয়ারি

ছবি: সিভয়েস

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রধান সড়কে গত কয়েক বছর ধরে নয়নভরে সবুজ প্রকৃতি দেখার সুযোগ হলেও এখন তা আবার বিলবোর্ডে ঢেকে যাচ্ছে। পাহাড় সম বাধাকে মাড়িয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হরণকারী ‘বিলবোর্ড’ উচ্ছেদের মত দুঃসাহসিক কাজ করে দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছিলেন। তবে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হবার পরপরই ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের চিহ্নিত ওই বিল ব্যবসায়ীরা। বিলবোর্ডে ঢেকে দিচ্ছে পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পট।   

মেয়র আ জ ম নাছিরের মেয়াদ আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত থাকলেও কীভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি স্পটে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতনমহলেও। এমনকি বিস্ময় প্রকাশ করে বিলবোর্ডমুক্ত চট্টগ্রাম নগরী উপহার দেওয়ার দৃঢ় ঘোষণা এসেছে মেয়র আ জ ম নাছিরের কাছ থেকেও ।

চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরীর অবৈধ বিল বোর্ড উচ্ছেদের পাশাপাশি নীতিমালা করে বৈধ বিলবোর্ডও উচ্ছেদ করে ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। ওই সময় জেলা প্রশাসন ও সিএমপির সহযোগিতায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যহরণকারী এসব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে অনেক বাধার মুখেও পড়তে হয়েছিল সিটি করপোরেশনকে। তবুও দমে যাননি মেয়র নাছির উদ্দিন। নগরবাসীকে সবুজ একটি নগরী উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিলেন তার দৃঢ় মনোবল আর নগরবাসীর ব্যাপক সমর্থনের কারণে। একাজের জন্য প্রসংশিতও হয়েছিলেন মেয়র নাছির।

তবে মেয়র নাছিরের মেয়াদের শেষ দিকে এসে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছেন বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েক জায়গায় পুরানো রূপে দাঁড়িয়ে গেছে বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড। নগরীর জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, দেওয়ানহাটসহ বেশ কয়েক জায়গায় বিজ্ঞাপন চেয়ে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। এনিয়ে নগরবাসীর অনেকে ফেসবুকে নানা মন্তব্য করছেন। 

মইনুর রহমান মইন নামে একজন লিখেছেন, 'ব্রেকিং নিউজ...চট্টগ্রাম শহরে বিলবোর্ড দস্যুরা তাদের দস্যুতা শুরু করেছে....চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ....দেওয়ান হাটের পর এইবার জিইসি তে বিলবোর্ড রাতারাতি দৃশ্যমান!'

মইনের এই পোস্টের কমেন্টসে জিইসি মোড়ের দুটি বিলবোর্ডের ছবি পোস্ট করেছেন বিএমএ নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। অনেকে বলেছেন, এইতো তাদের আসল রূপ বের হয়ে আসছে।

তবে কারা এসব করছে তা স্পষ্ট করেননি কেউই। আ জ ম নাছিরে অনুসারীদের অভিযোগ, যারা মেয়র নাছিরের মনোয়ন বঞ্চিত করার পেছনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন তারাই এসব বিলবোর্ড উঠিয়েছেন। তারাই মূলত নিজেদের টাকা লগ্নি করছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পেছনে। তাদের বিলবোর্ড ব্যবসায় ধ্বস নামানোয় আ জ ম নাছিরের পেছনে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। আর সেখানে সফল হওযায় তারা বিলবোর্ড উঠানোর মাধ্যমে ফের স্বরূপে ফিরছেন। 

মূলত চট্টগ্রাম শহরে এই বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাও এই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে নগরের সৌন্দর্যও নষ্ট করেছিলেন তারা। তাদের অধিকাংশই মেয়র নাছিরের এন্টি বলয়ে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত। 

এ প্রসঙ্গে 'পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের' সগ সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া সিভয়েসকে বলেন, 'সিটি করপোরেশনের  উদ্যোগে এক সময় বিলবোর্ডমুক্ত হয়েছিল নগরীর রাস্তাঘাট। এখন আবার কেন একই মেয়রের মেয়াদের শেষে তা উঠছে সেটা বোধগম্য নয়। আইন না মেনে এই সব কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সিটি করপোরেশনকেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে এই ধরণের অন্যায় কাজের সাহস বেড়ে যাবে। আমি মনে সিটি করপোরেশন দ্রুতই এসব বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। মেয়র যেহেতু এখনো দায়িত্বে তিনি এসবের দায় এড়াতে পারেন নাহ।'

একই সংগঠনের নির্বাহী সদস্য ও নগর পরিকল্পনাবিদ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার সিভয়েসকে বলেন, 'মেয়র নাছিরের মেয়াদের শেষের দিকে যারা এসব বিরবোর্ড উঠাচ্ছে তারাই তার মেয়াদ শেষে যে পুরো নগরীকে বিলবোর্ডে ছেয়ে দিবেনা তার গ্যারান্টি কি? এসব যারাই করুক তারা অবশ্যই স্বার্থবাদী মহল। নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে হরণ করে, মানুষের জীবনকে বিলবোর্ডের কারণে ঝুঁকিতে ফেলে তারা তা করতে পারেনা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্য। মেয়র নাছির নমিনেশন পাননি বলেই তার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় এরকম বিলবোর্ড উঠানোর দৃশ্যটা শুভকর নয় আগামীর চট্টগ্রামের জন্য। আশা করি সচেতন নগরবাসী এর বিরুদ্ধে আগের মত আওয়াজ উঠাবেন আর মেয়রও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।'

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, 'কদিন দিন ধরে নগরীর বেশ কয়েক জায়গায় বিলবোর্ড উঠার খবর আমার নজরেও এসেছে। যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হরণকারী এই বিলবোর্ড উচ্ছেদে সারা চট্টগ্রামবাসী আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমি শত বাধা উপেক্ষা করে বিলবোর্ডমুক্ত নগরী উপহার দিতে পেরেছি। সেখানে আমার মেয়াদেই এই কাজ কারা করছে কি তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা তা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে।'

মেয়র আরও বলেন, 'আমরা আছি সবাই করোনার এই মহাসংকটে মানুষের পাশে। আর বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা আছে তাদের ধান্ধায়। তবে কেউ যদি মনে করে আমি মেয়র আর থাকব না তাই এই বিলবোর্ড ব্যবসা চালিয়ে যাবে নগরীর সৌন্দর্য হরণ করে। মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তা করতে দেওয়া হবে না। আমি আ জ ম নাছির মেয়র থাকলেও এই বিলবোর্ড আর উঠাতে দিবনা আর মেয়র না থাকলেও তা উঠতে দিব না। নগরবাসীকে সাথে নিয়ে আমি তা প্রতিরোধ করবো।'

সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটকে এসব অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের জন্য নির্দেশের পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরেরও নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়