Cvoice24.com


করোনাকাল/ ইফতার বাজারে নেই সেই জৌলুশ, পাড়ার দোকানে মানছে না নিয়ম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১ মে ২০২০
করোনাকাল/ ইফতার বাজারে নেই সেই জৌলুশ, পাড়ার দোকানে মানছে না নিয়ম

সারাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন চলার মধ্যেই মুসলিমদের জন্য পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। প্রতিবছর রমজানে নগরীতে উৎসবমুখর পরিবেশে রোজার প্রথমদিন থেকে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে দেখা যায়। কিন্তু এই বছর সেটার বিপরীত চিত্র। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল সীমিত। 

এদিকে রমজান মাসজুড়ে ঘরের বাইরে প্রতিদিন ইফতার করে অনেক মানুষ। ঘরে ইফতার তৈরি করা হলেও বাহারি আইটেমের জন্য অনেকটা নির্ভরশীল বাজারে বানানো ইফতারির ওপর। পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, হালিম, বোরহানি, জিলাপি, ছোলা ও নানা রকম ফল ছাড়াও বাহারি খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সাজানো হয় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। রমজান মাসজুড়ে থাকে এ বাজারের জমজমাট আয়োজন। কিন্তু এ বছরটা সেটা আর হচ্ছেনা। 

অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট-বড় হোটেল-ক্যান্টিনগুলোও মেতে উঠতো  ব্যতিক্রমী সব খাবারের আয়োজন নিয়ে। করোনার প্রভাবে নগরের ব্যস্ততম ইপিজেড, কেইপিজেড, কাটঘর, নেভাল এলাকায় ইফতারি বেচার কোনো হিড়িক নেই।

সরেজমিনে শুক্রবার (পহেলা মে) পতেঙ্গার নামি-দামি রেস্টুরেন্টে রিভারিয়ান, বাসমতি, এলাচি, গ্রান্ড পতেজ্জা, কয়লা, তাকবির সবগুলো ই বন্ধ। সেখানে নেই কোনো বাহারি রং বে রং এর ইফতার। অলি গলির কিছু দোকানে ইফতার নিয়ে বসলেও সে গুলো তে পাওয়া যাচ্ছে চিরায়ত মেন্যু।

গার্মেন্টস ছুটিকে ঘিরে ইপিজেডে বসত বাহারি ইফতার সামগ্রী দোকান। এখন দোকানগুলো যেনো মরুভূমি।

প্রতিবছর নগরীর চকবাজার বিভিন্ন ইফতারির দোকানে রমজানের পড়ন্ত বিকেলে বাহারি ডিজাইনের বিভিন্ন রকমের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসে থাকা; দোকানির সে জৌলুস আর এই রমজানে চোখে পড়ছে না। সামান্য কিছু দোকান খোলা থাকলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রিতভাবে সন্ধা ৬ টার পর বন্ধ করছে প্রশাসন।

রিজু আরা বেগম নামে এক গৃহনী জানান, ইফতারি নানা রকম আইটেম রাখা হত প্রতি বছর। কিন্তু এ বছর বিপরীত চিত্র। বাসা থেকে বের হয়ে দোকানে যেতে ভয় করছে। ছেলের যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে সব কিছু বাসাতে ইফতারি আয়োজন করা হচ্ছে। 

এদিকে জাকারিয়া নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, আজ একমাস যাবত হোটেল বন্ধ। রমজানে আশা করেছিলাম খুলতে পারলে ব্যবসা হবে। কিন্তু সীমিতভাবে খোলা থাকলে আগের মত ক্রেতা নেই। সামন্য জিলাপিসহ কয়েকটি আইটেম তৈরি করা হচ্ছে। তা ভালভাবে বিক্রি হচ্ছে না। সামনে এ রকম হতে থাকলে ঈদে কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস দিতে কষ্ট হয়ে যাবে।

তবে নামিদামি রেস্টুরেন্টে সামাজিক দূরত্ব মানার চেষ্টা থাকলেও পাড়ার দোকানগুলোতে যে কজন ক্রেতা আসে তাদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। পাঁচলাইশের বাসিন্দা সাইফুল সেজান বলেন, এলাকার প্রায় দোকানপাট বন্ধ। যে কটি দোকান খোলা রয়েছে সেসব দোকানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। বিকাল শুরু হতেই ইফতারির দোকানে সৃস্টি হচ্ছে জটলা।

গুলজার মোড়ের বাসিন্দা মো. লিটন বলেন, সাদিয়াস কিচেন এবং সবুজ হোটেল ছাড়া প্রায় সবকটি বড় হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট কিছু দোকান পাট খোলা রয়েছে। যেগুলোতে ইফতার আইটেমগুলো বিক্রি চলছে। তবে সামাজিক দূরত্ব সেভাবে মানা হচ্ছে না। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে দেখা যায় জটলা। কারো মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই।

লালখান বাজারের বাঘগুনা এলাকার বাসিন্দা মো. মারুফ বলেন, এলাকার দোকানপাটে সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই চলছে ইফতার বেচা বিক্রি। কোনো নজরদারি নেই। যার যেমন ইচ্ছা চলাফেরা করছেন।

বেটারিগলির সারা নাঈম বলেন, যে সময় সামাজিক দূরত্ব খুব বেশি মেনটেইন করা উচিত তখন সেটা করা হচ্ছে না। ইফতার বেচা বিক্রি চলছে সর্বত্রই। যেটা খুব খারাপ হচ্ছে। বলা যায়, আতংক সাথে নিয়ে দিন পার করছি।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নেজাম উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা করার জন্য দোকান হোটেলকে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।  কিছু মানুষ এসব আমলেই নিচ্ছে না। তবে এলাকা পুলিশি নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি প্রণব চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, প্রায় সবগুলো এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করে বলা হয়েছে। এরপরও কিছু কিছু দোকানপাট এসব মানছেন না। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়