দিনে কর্ম কমিশনের অফিস সহায়ক, রাতে দোকানি, তাও মূল ফটকের সামনে!
নগরের চকবাজার থানা এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পূর্ব গেইটের বিপরীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ভবনটি। দিনে বেশ ভালো দেখালেও রাতের অবস্থা দেখলে চমকে যান অনেকে। দেখে বুঝার উপায় থাকে না এটা যে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের একটি অফিস। খোদ অফিসের মেইন গেইট দখল করে নানান মালামাল সাজিয়ে দোকান খুলে নিজেই ব্যবসায় চুকিয়ে যাচ্ছেন কর্ম কমিশন অফিসের অফিস সহায়ক মো: মানিক। শুধু তাই নয় অফিসের ভেতর পরিবার নিয়ে বসবাসের কোনো লিখিত অনুমতি না থাকলেও তিনি বসবাস করছেন পরিবার নিয়ে। কর্ম কমিশনের অফিস সহায়ক মো. মানিকের এমন কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক ও বিস্মিত অনেকেই। তার এই কর্মকাণ্ড যেন ফুটপাত দখলদারীদেরও হার মানিয়েছে।
সন্ধ্যায় দোকানের উপরে সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠেন ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার্থী মুশফিক। তিনি সিভয়েসকে বলেন, বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের মত সরকারি উচ্চ পর্যায়ের অফিসের সামনের গেইট এবং ফুটপাত দখল সত্যি লজ্জাজনক,সন্ধ্যার পর গেইটের বা অফিসের দিকে থাকালে তো বুঝার উপায় নেই এটা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের অফিস।
সরেজমিনে দেখা যায় ,এই সরকারি কর্মচারী রাস্তার ধারে বা উন্মুক্ত কোনো জায়গায় দোকান দিয়ে ফুটপাত দখল করেনি বরং সরকারি কর্ম কমিশন অফিসের মেইন গেইটসহ ফুটপাত দখল করে বানিয়েছেন ভ্রাম্যমান দোকান। বেচা-বিক্রি করে বেশ হাশিখুশিতে সময় পার করছেন। একদিকে মাস শেষে সরকারি মায়নে অন্যদিকে জায়গার ভাড়া বা সালামি না দিয়ে স্বল্প পুঁজি লাগিয়ে ভালো ব্যবসা,অন্যদিকে বাসা ভাড়া বাঁচানো। সব মিলিয়ে বেশ আরামদায়ক জীবন-যাপন করছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রতিদিন অফিস আওয়ার শেষ হলে সন্ধ্যা নামতে নামতেই মো. মানিক বিক্রির জন্য মালামালের পসরা সাজিয়ে বসেন অফিস গেইটের সামনে। তার ব্যবসার সামগ্রীর মধ্যে বালতি, কাপড়, বেড, বালিশ, ঝাড়ু, বদনা ইত্যাদি রয়েছে। মেডিকেলে ভর্তিরত রোগীদের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা স্বজনদের কাছে তার সমাগ্রীগুলো বিক্রি হয়। এছাড়া মূল্যের তালিকা না থাকায় বেশি দাম দিয়ে এই সামগ্রীগুলো রোগীর স্বজনদের কিনতে হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবনের সামনে দোকানদারী করায় তেমন কোনো পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হয় না তাকে।
সরকারি ভবনের গেইট দখল করে রকমারি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্ম কমিশনের অফিস সহায়ক মো. মানিক সিভয়েসকে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছি। স্ব-পরিবারে থাকি অফিস ভবনেই। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস টাইম শেষে অফিসের গেইটে নিজের কিছু পুঁজির জন্য দোকান বানিয়ে ব্যবসা করি দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে মাঝে পুলিশি ঝামেলা হলেও ম্যানেজ করে ফেলি। অফিসের বড় স্যারেরাও এ ব্যাপারে অবগত আছেন।
কীভাবে সরকারি কর্ম কমিশন অফিসের সামনে অফিস সহায়ক মো. মানিক ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল খায়ের পাটোয়ারী সিভয়েসকে বলেন, "আমি এ ব্যাপারে অবগত আছি, অফিসের গেইট দখল করে দোকান না বসানোর জন্য তাকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কারো কথা আমলে না নিয়ে দোকান প্রতিনিয়ত করেই যাচ্ছে। আমি আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
-সিভয়েস/এসসি
ইব্রাহিম জুলহাজ নীল