Cvoice24.com


অমর প্রেমের গল্প টেকনাফের ‘মাথিন কূপ’

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
অমর প্রেমের গল্প টেকনাফের ‘মাথিন কূপ’

ছবি : সিভয়েস

প্রেমের এক উজ্জ্বল নিদর্শন কক্সবাজারের টেকনাফের মাথিনের কূপ। টেকনাফ থানায় অবস্থিত কূপটির নিথর জলে মিশে আছে বিষাদ আর বেদনাবিধুর এক অমর প্রেমের গল্প। জমিদার কন্যা মাথিন ও পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের অতৃপ্ত প্রেমের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই কূপটি। প্রেমের এই নির্দশন দেখতে প্রতিবছর ভীড় করে পর্যটকরা।  

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে সুদুর কলকাতা থেকে দুর্গম টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসেন সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য। আর ওই থানার কূপ থেকে জল নিতে আসা স্থানীয় জমিদার কন্যা মাথিনের সাথে প্রেম হয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের। গভীর প্রেমের পরে দুইজনই সিন্ধান্ত নেয় বিয়ে করার। সে সময় বাদ সাদলেও অতি আগ্রহের কারণে রাজী হয় মাথিনের বাবা ওয়াং থিন। কিন্তু ইতোমধ্যে এই অসম প্রেমের কথা ধীরাজের ব্রাহ্মণ পিতা জেনে গেলে জরুরি টেলিগ্রাফ মারফত অসুস্থতার কথা বলে ধীরাজকে দ্রুত কলকাতা ফিরে যেতে বলে। শেষ পর্যন্ত ধীরাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন কলকাতায় ফিরে যাবেন। সেই যাওয়ায় ধীরাজ আর ফিরে আসেনি।

এদিকে, ধীরাজের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কঙ্কালসার হয়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মাথিন।

১৯৩০ সালে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে লেখা ‘যখন পুলিশ ছিলাম‘ গ্রন্থে তার অতৃপ্ত ভালোবাসার স্মৃতি প্রকাশ হওয়ার পরে স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা‘র (বর্তমান প্রথম আলো পত্রিকার কক্সবাজার অফিস প্রধান) সংবাদ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের ১৪ এপ্রিল একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মাথিনের কূপ নাম দিয়ে সংস্কার করা হয় ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে। এটি হয়ে ওঠে পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান।

বেড়াতে আসা পর্যটকরা বলছে পুলিশ কর্মকর্তা আর রাখাইন তরুণীর ভালবাসার এই নির্দশনে ধীরাজের ভাষ্ককর্যের পাশাপাশি মাথিনের গুরুত্ব ওঠে আসা দরকার।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসার পর স্বামীকে নিয়ে এই ভালবাসার নিদর্শন দেখতে আসা সাইমা সুলতানা জানান, মাথিন আর ধীরাজের ভালবাসার গল্প পড়ে তিনি খুবই মুগ্ধ। মাথিন ভালবাসার জন্য জীবন দিয়ে প্রমাণ করল ভালবাসা সবার উপর। ভালবাসার জন্য মার্থিনের এতবড় ত্যাগ থাকলেও ধীরাজের ভাষ্ককর্যের পাশে মাথিনের কোনো ছবি বা ভাষ্ককর্য না থাকায় তিনি অসন্তুষ্ট।

আরেক পর্যটক রায়হান কবির জানান, মাথিন আর ধীরাজের অতৃপ্ত ভালবাসার গল্প বিষাদ আর বেদনাবিধুর এক অমর প্রেমের কাহিনী। ভালবাসার জন্য জীবন দিতে পারার কথাটি আবারো প্রমাণিত করল এই নিদর্শন।
   
বর্তমানে ধীরাজের জায়গায় বসা টেকনাফ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আজকের ধীরাজ ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, অতৃপ্ত ভালবাসার একমাত্র নিদর্শনটি অতিযত্নে সংস্কার করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে পুরো দেশবাসীর কাছে মাথিনের কূপ হয়ে উঠবে এক আকর্ষণীয় স্থান।

মাথিন ট্র্যাজেডিটি দায়ী কার? পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের ফিরে না আসা-নাকি সেদিনের সমাজ ব্যবস্থা। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও সচেতন মহল বলছেন, ভালবাসার এই নির্দশন হয়ে উঠতে পারে ভাল বাসাবাসি মানুষের জন্য এক মিলন স্থল।

-সিভয়েস/এসসি

ওমর ফারুক হিরু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়