Cvoice24.com


মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ধোঁয়াশা, কে নাড়ছে কলকাঠি?

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০
মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ধোঁয়াশা, কে নাড়ছে কলকাঠি?

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার কথা। কিন্তু প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘোষণা হয়নি নতুন কমিটি। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে নগর ছাত্রলীগের তৃণমূলের কর্মীরা। তৃণমূলের কর্মীদের দাবি উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত এ কমিটি নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

মেয়াদোত্তীর্ণ নগর কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নীরবতা ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া উদ্যোগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নির্দেশে চলছে মহানগর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড। বিতর্কিত এই কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে ধোঁয়াশাই থেকে যাচ্ছে। অদৃশ্য এমন কোন শক্তি ছাত্রলীগ পরিচালনা করছে- তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে চলছে মাতামাতি। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ছয় মাস চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা না করায় বিভিন্ন কলেজ, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতৃত্ব শূন্যতায় রয়েছে ছাত্রলীগ।

সম্প্রতি থানা পর্যায়ে কয়েকটি কমিটি ঘোষণা করেছে নগর ছাত্রলীগ। কারো সাথে সমন্বয় না করে থানা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণার অভিযোগে বিক্ষোভ করছে পদবঞ্চিতরা। মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের কোন দিক নির্দেশনা তোয়াক্কা করেনা অভিযোগ করেন তারা। তারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতারা নিজেদের ইচ্ছেমত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। পদবঞ্চিতদের দাবি-ঘোষিত কমিটিতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অস্ত্রধারীদের, যাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও কার্যনির্বাহী সভা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ এনে   সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের ‍উপর অনাস্থা জানিয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটির ছাত্রলীগের ৪৬ নেতা।

আরও পড়ুন: সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনাস্থা

২০১৩ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন নুরুল আজিম রনি। পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় জাকারিয়া দস্তগীরকে।

অভিযোগ রয়েছে, গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি ঘোষণার সময় ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিলো ২৭ বছর। পরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে আরো এক বছর সময়সীমা বাড়িয়ে ২৮ বছর করেন। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুসরণ না করে ২৯ বছর বয়সী অনেক বিবাহিত নেতাকেও কমিটিতে রাখা হয়। অনেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায়ও দীর্ঘ ১০ বছর পর গঠিত ছাত্রলীগের ওই কমিটিতে স্থান পান। তখনও পদবঞ্চিতরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অরভিন সাকিব ইভান সিভয়েসকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটি সম্পর্কে জানিয়েছি। তখন কেন্দ্রীয় কমিটির কোন নির্দেশনা ছাড়া যাতে মাহনগর ছাত্রলীগ কোন কমিটি না দেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির এ নির্দেশনা অমান্য করে মেধাবী ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অস্ত্রধারী ও দখলদার সন্ত্রসীদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখান করে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। নবঘোষিত এসব কমিটি বাতিল করে মেধাবী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে নতুন করে কমিটি ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল আলম রনি সিভয়েসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই-তিনবার সম্মেলন হলেও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কোন অদৃশ্য শক্তি এর পেছনে কাজ করছে তা আমার জানা নেই। 

তিন থানায় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটির সমালোচনা করে এই নেতা বলেন, একটা কমিটি ঘোষণা করলে অনেক যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। যেমন, যে এলাকায় আমি কমিটি দিব সেখানে যাওয়া, সম্মেলন করা, বায়োডাটা সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজন হলে সাবেক ছাত্রনেতাদের মতামত নেয়া, আওয়ামী প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারীদের মতামত ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া না মেনে অসাংগঠনিকভাবে অসাংগঠনিক ছেলেদের নিয়ে তারা তিন থানায় কমিটি ঘোষণা করেছে। 

আওয়ামী নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মেধাবী, শিক্ষিত, সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা কেন মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

মহানগর ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দীন কুতুবি’র একটি গনমাধ্যমকে জানানো মতে, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ২৯১ সদস্যের কমিটিতে ৫৬ জন বিবাহিত ও ১৬২ জন অছাত্র। এরা হলেন, সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সহ-সভাপতি মো.তালেব আলী, ইমতেয়াজ বাবলা, লুৎফুল এহশান শাহ, নাজমুল হাসান রুমি, শহিদুল ইসলাম শহিদ, রাজা মিয়া, একরামুল হক রাসেল, সারোয়ার উদ্দীন, ইয়াসিন আরাফাত কচি, ফররুখ হোসন পাবেল, মাইনুল হাসান চৌধুরী শিমল, দিদারুল আলম, আব্দুল খালেক, আবু মো.আরিফ, মো. শাকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনুর রহমান মঈন, রিয়াজুল করিম বিলাস, ফরহাদ হোসেন মিষ্টি, সুজন বর্মন, অমিতাব চৌধুরী বাবু, গোলাম সামদানি রনি; সাংগঠনিক সম্পাদক মঈন শাহরিয়ার, খোরশেদ আলম, হাসমত আলী রাসেল, শওকত আলী রনি, আয়াজ উদ্দিন, ইরফানুল আলম জিকু, সাইফুল ইসলাম; স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. দেবাশিষ দেবু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল, উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তুষার দর, উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, উপ প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম মান্না, উপ সম্পাদক আবদুল হালিম মিন্টু, মোফাজ্জল তুষার, অভিক দাস, রাসেল উদ্দিন তালুকদার, সহ সম্পাদক শাহজাহান সাজু, এহসানুল কবির ববি, রাহুল দাস, রোকন উদ্দিন চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন জিকু, শাহেদ মিজান, আবু সায়েম সেতু, জিয়াউল হক জিয়া, সাব্বির সাকির, উপ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন টিটু, উপ সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রনি তালুকদার, সদস্য তানজিরুল হক, সৈকত দাশ, শাখাওয়াত হোসেন পেয়ারু, গাজী আক্কাস, ফয়সাল অভি, মো. শরিফ আহাম্মেদ।

ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে নগরীতে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের অনেক কর্মকাণ্ড সরকার এবং দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। জেলা ও মহানগর পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মারামরি এবং ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন। এছাড়া কমিটিতে পদ দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগও পেয়েছেন।  

রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগ নেতাদের এমন আচরণের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোরবার্তা না দিলে কোনো সুফল আসবে না। এতে করে দলটি ক্রমান্বয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। এছাড়া ছাত্রলীগকে সমাজে ভালো কিছু উপহার দিতে হলে অবশ্যই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বেছে নিতে হবে। 

মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক অরভিন সাকিব ইভান বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের এই কমিটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর। কিন্তু এই কমিটির মেয়াদ সাত বছর পেরিয়ে বর্তমানে আট বছর চলছে। আমরা বারংবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানানোর পরও নতুন কমিটি ঘোষণা করছে না। কিন্তু কোন অশুভ শক্তির কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ঘোষণা করছে না তা আমরা জানি না। তবে এ ধরণের কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে আগামীতে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। আর চলমান সমস্যা থেকে উত্তরণের একটাই বিকল্প পথ আছে তা নতুন কমিটি ঘোষণা করা। 

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল সিভয়েসকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ২৯১ সদস্যের কমিটিতে হাতেগোনা ১০/১৫ জন ছাড়া বাকিরা অছাত্র ও বিবাহিত।তিনি দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান।

বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগের চলমান অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ রেজাউল আলম রনি বলেন, ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য ছাত্রলীগকে ছাত্রলীগের কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। জাতীয় দিবসগুলো পালন করতে হবে, স্ব স্ব ইউনিটে কাজ করতে হবে, বিভিন্ন সভা সেমিনার, সিমপোজিয়াম, ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে উত্তোরনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে জানতে হবে, স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে হবে, শেখ হাসিনাকে জানতে হবে; এভাবে চর্চার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং ছাত্রলীগকে ছাত্র সংগঠনে রূপান্তর করার এটাই একমাত্র পন্থা। এছাড়া আর কোনো পন্থা নেই বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

সিভয়েস/এমএম/এসএএস

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়