Cvoice24.com


সাতকানিয়ায় পাহাড় ঘেঁষে ইটভাটা, প্রশাসনের লোকদেখানো অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ জানুয়ারি ২০২০
সাতকানিয়ায় পাহাড় ঘেঁষে ইটভাটা, প্রশাসনের লোকদেখানো অভিযান

সাতকানিয়া ও বাঁশখালী সীমান্তের লটমনি ও চুড়ামনি এলাকায় পাহাড় ঘেঁষে স্থাপিত ৬টি ইটভাটার বিরুদ্ধে পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে।  মাসিক এবং বার্ষিক চাঁদার আদায় করে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা লোকদেখানো একটি অভিযান পরিচালনা করে।

গত মঙ্গলবার সকালে দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী লটমনি ও চুড়ামনি এলাকার পাহাড় কাটার দায়ে মোহাম্মদ হাসান লিটনের বিবিসি ব্রিকস ও মো. করিমের কেএমবি (বাদশা) ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটার চুল্লি ও কাঁচা ইটে পানি ছিটিয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নেয়া দমকল বাহিনীর লোকজন। অভিযান পরিচালনাকারীরা দাবি করছেন দু’টি ভাটাই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হাতির গায়ে নুনের ছিটা মাত্র। অল্প পানির ছিটাতে কোন ভাটার জলন্ত আগুন কখনো নিভেনা।

সকাল ১১টা থেকে অভিযান শুরু করলেও বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘন্টায় দুটি ইটভাটায় পানি ছিটিয়ে অভিযান শেষ করেছেন। একই জায়গায় আরো ৪টি অবৈধ ইটভাটা থাকলেও অভিযানকারীরা সেদিকে ফিরেও তাকাননি। অথচ দূরত্ব মাত্র ২০ থেকে ৩০ফুট। অভিযানমুক্ত ওইসব ভাটার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, ধানী জমির টপসয়েল কাটা ও সরকারি-বেসরকারিভাবে সৃজিত বাগান সাবাড় করার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযান সংশ্লিষ্ট সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বলছেন, সময়ের অভাবে অন্য ভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসের কর্তাব্যক্তিদের মাসোহারায় হেরফের হওয়ায় এ লোক দেখানো অভিযান। অপরদিকে ভাটা মালিকদের ভীতির মধ্যে রাখতে অভিযানের নামে আইওয়াশ করা হয়েছে।  

দীর্ঘ এ অভিযান পরিচালনা করেন সাতকানিযা উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার, বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বশিরুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক হারুন অর-রশিদ পাঠান, সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাজেদুল আলমসহ সাতকানিয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন। 

এদিকে সাতকানিয়া উপজেলার এঁওচিয়া চুড়ামনি এলাকায় জুড়ে রয়েছে মোট অবৈধ ১৭টি ইটভাটা। তন্মধ্যে রয়েছে টিনের চিমনিসহ ধানী জমি ও সরকারী বন ঘেঁষে। অজ্ঞাতকারনে মঙ্গলবারের অভিযানে ওইসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার ভাবসাব মনে হয়েছে তিনি এসব ভাটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। 
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক হারুন অর-রশিদ পাঠান বলেন, কোন কোন ইটভাটায় পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করে কাঁচা ইট তৈরি করা হচ্ছে, তার তালিকা তৈরি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া ওই এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।    

সাতকানিয়া উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরির দায়ে পানি ছিটিয়ে দুটি ভাটার চুল্লি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওই ভাটা দুটির কাঁচা ইটও নষ্ট করা হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে অন্য ভাটাগুলোতে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। আগামীতে ওই ভাটাগুলোতে আিভযান চালানো হবে।


 

জাহেদ হোসাইন, সাতকানিয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়