Cvoice24.com


প্লাস্টিক ফুলের সয়লাবে কদর কমেছে কাঁচা ফুলের

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২০ জানুয়ারি ২০২০
প্লাস্টিক ফুলের সয়লাবে কদর কমেছে কাঁচা ফুলের

ছবি : সিভয়েস

এক সময় পাইকার ব্যবসায়ীরা লাইন ধরত কাঁচা ফুল কেনার জন্য। এখন আর সেদিন নেই। বাজার এখন প্লাস্টিক ফুলে সয়লাব। বিয়ে জন্মদিন সভা সব অনুষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে প্লাষ্টিক ফুল। গত তিন বছর ধরে মার্কেটে প্লাষ্টিকের তৈরি ফুল বাজরে সয়লাব হ্ওয়ার পর আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ছে কাঁচা ফুল। শুধু গোলাপই নয় গাঁদা রজনিগন্ধাসহ সব ফুলেরই কদর কমছে দিনের পর দিন। চাষিরাও আগ্রহ হারাচ্ছে ফুল চাষে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৭/১৮ সালেও যেখানে গোলাপ ৫হেক্টর, গাঁদা ১০হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হলেও বর্তমানে তা কমে ২০শতাংশে নেমে এসেছে। গুমানমর্দন, নাঙ্গলমোড়া, এনায়েতপুর, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুল চাষ হলেও এখন দু এক জায়গায় হচ্ছে মাত্র। ফুল চাষের জন্য অধিক উপযোগি হলেও ফুলের কদর না থাকায় চাষাবাদ কমে গেছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সবচেয়ে বড় গোলাপ চাষি আলমপুর এলাকার ডাঃ আবুল খায়ের বলেন, চার একর কমে মাত্র ১.৫ একরে নেমে এসেছে গোলাপ চাষ। আগে একশ’ গোলাপ নিম্নে চার টাকা ছিল। হাটহাজারীতে চাহিদা মিটিয়ে চলে যেত নগরসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। গত তিন বছর ধরে মার্কেটে প্লাষ্টিকের তৈরী ফুল বাজারজাতকরণের ফলে আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ছে আসল ফুল। শুধু গোলাপ নয় গাঁদা রজনিগন্ধাসহ সব ফুলেরই কদর চলে যাচ্ছে।

বর্তমানে চকরিয়ার বড়ইতল এলাকার চাষিরা নগরে পাইকার হিসেবে ফুল দিলেও বাজারটি একসময় হাটহাজারীর ছিল।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রথম শের আলী নামের একজন কৃষক ভারত থেকে শিখে এসে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুল চাষ শুরু করেন। পরবর্তী সময় তাঁর দেখাদেখি হাজার হাজার কৃষক ফুল চাষে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শার্শা, ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৬টি গ্রামের দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। ছয় হাজার তালিকাভুক্ত কৃষক এই ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। আর ফুল কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত দুই লাখ মানুষ। চাষিরা উন্নতমানের গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও গ্লাডিওলাস ফুল উৎপাদন করেন। গদখালী এলাকার ফুলই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বিক্রি হয়।
সত্যতা স্বীকার করে কৃষি কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ ওয়াহেদ বলেন, অনেক ফুল চাষি ফুল চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী। প্লাষ্টিক ফুলের আনাগোনায় ব্যবসা মন্দা হওয়ায় চাষ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সরকার উদ্যোগি না হলে হয়ত প্লাষ্টিক ফুলের ভিড়ে হারিয়ে যাবে গোলাপ, গাঁদাসহ অসংখ্য ফুল।

গোলাপ চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, এক সময় গোলাপ বিক্রি করে দৈনিক ৪/৫ হাজার টাকা আয় করতাম। কিন্তু বর্তমানে পেশা পরিবর্তন না করলেও আগের মত সে আয় নেই ফুল চাষিদের। তিন চার বছর আগেও চার একর জায়গার উপর গোলাপ চাষ হত। কাজের জন্য ছিল ৮জন শ্রমিক। দেখাশুনায় সারাদিনটা কেটে যেত। এখন ভাল চাষ হলেও বিক্রির জন্য বেশ কয়েকজন পাইকারকে ফোন দিতে হয়। কে একটু বেশি দাম দিবে। কারণ প্লাষ্টিক ফুলের রাজত্ব দেশ জুড়ে। অনেকে এ পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়েছেন নিজেকে।

সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান চায়না, থাইল্যান্ড থেকে কাগজ ও প্লাস্টিকের ফুল এনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন বিপণিবিতানে প্লাস্টিকের ফুল বিক্রিও হচ্ছে। এছাড়া্ও ফুলের পাশাপাশি কদর বাড়ছে মুশরির। বিয়ে, জন্মদিনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে মুশরির কদর তুলনামূলক হারে বেশি। পাশাপাশি রয়েছে ককসিট সামগ্রী।সহসা এই কৃত্রিম ফুলের বাজারজাত বন্ধ না হলে ফুল ব্যবসায় বিপর্যয় হতে পারে।

-সিভয়েস/এসসি

মোঃ বোরহান উদ্দিন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়