Cvoice24.com


১৯ এ সড়কে প্রাণ ঝরেছে ১৮'র চাইতে বেশি

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ৮ জানুয়ারি ২০২০
১৯ এ সড়কে প্রাণ ঝরেছে ১৮'র চাইতে বেশি

ফাইল ছবি।

২০১৯ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫২২৭। ২০১৮ সালে মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৪৩৯ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৭৮৮ জন বেশি। ২০১৭ সালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৬৪৫। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রায় ২৩.৩৬ শতাংশ কম ছিল। গত বছর ২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় শতকরা ১৫ শতাংশ বেশি নিহত হয়ছে।

২০১৯ সালে মোট ৪৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৯৫৩ জন লোক আহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ৩১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল ৭৪২৫ জন, যা ২০১৮ আহতের সংখ্যা ৪৭২ জনেরও কম। গত বছরের তুলনায় আহতের সংখ্যা এবার প্রায় ৬ শতাংশেরও কম।

তারমধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২০১৯ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয়। ২২৬টি দুর্ঘটনারমধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৯৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫৫ জন। ২০১৮ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১৬৯, এতে নিহত হয়েছেন ১৯৯ জন এবং আহত হয়েছেন ২৮১ জন। যা ২০১৮'র তুলনায় ১৯ এ ৫৭টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, একইসাথে বেড়েছে নিহতের সংখ্যা ১০০ জন। তবে কমেছে আহতের সংখ্যা। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম জেলায় গত বছরের তুলনায় (২০১৮) আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬ জনের মত।

২০১৯ সালে বাস, ট্রাক ও কাভার্ড- ভ্যান মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে যা সড়ক দুর্ঘটনার ৩৯%। এছাড়াও মটরসাইকেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা শতকরা ১৯%। গেল বছরে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৯৮টি এবং এতে নিহত হয়েছেন ৬৪৮ জন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এটাও একটি বড় কারণ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ সিভয়েসকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কিছুকিছু বিষয় সকলের কাছে দৃশ্যমান। নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রায়শই দেখা যায় জেব্রা ক্রসিং, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস থাকা সত্যেও পথচারীরা এগুলো দিয়ে পারাপার না হয়ে যত্রতত্র পারাপার, রাস্তায় চলা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহার করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। আমরা যত দিন পর্যন্ত নিজে আইন সম্পর্কে সচেতন এবং শ্রদ্ধাশীল হবো না ততো দিন পর্যন্ত দুর্ঘটনা কমবে না।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশ সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে নিচ থেকে ২য় পর্যায়ে ছিলো কিন্তু  ২০১৯ সালের অবস্থান এখনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় বড় শহরগুলোতে উল্টোপথে গাড়ি চলাচল একটি অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এমনকি মাঝে মধ্যে সরকারি আমলাদেরকেও নিয়ম বর্হিভুতভাবে উল্টোপথে যাতায়াতের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। আইন প্রযোগকারী সংস্থাগুলো মাঝে মাঝে উল্টোপথে চলার প্রবণতাকে থামানোর জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলেও নিয়মিত পর্য্যবেক্ষণ ও প্রযোগের অভাবে তা কার্যকরী হয় না।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ক্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণের ক্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইন ও তার যথারীতি না প্রয়োগ ইত্যাদিই এসব দুর্ঘটনার জন্য মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তাছাড়া সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এখনও পুরোপুরি কার্যকরী না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নিসচার চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সিভয়েসকে বলেন, ”২০১৯ সালে গত দুই বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে, যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আইন অমান্য করে ধীর গতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে।”

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয়গুলো অন্তুর্ভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করা, যত্র-তত্র গাড়ি রাখা, নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যাত্রী তোলা বা নামানো, ওভারটেক করা, প্রতিযোগিতা বা বেপরোয়া গাড়ি চালনা, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকার পরও তা ব্যবহার না করার প্রবণাতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সকল মহাসড়কে এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। উঁচু সড়ক বিভাজক নির্মাণ করে দিতে হবে। মহাসড়ক ও প্রধানসড়কগুলো অন্তত চার লেইনের হতে হবে। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করা, যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে তৈরি করা, নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে ফুটপাত দখল বন্ধ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্র ও বেকার যুবকদের বিনা বেতনে অথবা ঋণ দিয়ে দক্ষ চালক হিসাবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি উদ্যোগে সব জেলায় একটি করে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সরকার কর্তৃক গৃহীত ‘সেইফ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১,৪১০জন গাড়ি চালক প্রশিক্ষক তৈরি ও ৩ লক্ষ গাড়ি চালকদের আপগ্রেডিং এর জন্য ১২ ও ২৪ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার  পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা  হলে লাইসেন্সবিহীন চালকরা ২৪ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে বৈধ লাইসেন্সের আওতায় আসবে এবং হালকা ও মধ্যম গাড়ির চালকরা ১২ দিনের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এ ভারী গাড়ির লাইসেন্স পাবে যা দেশে দক্ষ চালক সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।

-সিভয়েস/এসসি

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়