Cvoice24.com


স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল: লাল বাতি দেখেও থামেন না চালকরা

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৯
স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল: লাল বাতি দেখেও থামেন না চালকরা

ছবি: সিভয়েস

প্রায় একযুগ পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে চালু হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল। তবে পূর্বের মতো যন্ত্রনির্ভর না হয়ে, এবার যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশের হাতে। দীর্ঘ একযুগ পর স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল বাতি সমৃদ্ধ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চালু হলেও এই নিয়ম মানছেন না অনেকেই। 

লাল বাতি জ্বলছে। ঠিক তখন ট্রাফিক পুলিশের হাত উঁচিয়ে দিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা। একদিকে থামানোর চেষ্টা অন্যদিকে সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ির ছুটে চলা। হাতের ইশারায় কাজ হয়নি। রাস্তার একপ্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রাপ্ত না আসা পর্যন্ত কে কার কথা শোনে। তবুও ঝোপ বুঝে মোটরসাইকেল চালকদের ছুটে চলার চেষ্টা। পিছিয়ে নেই সিএনজি চালকরাও। ট্রাফিক সিগন্যাল মানাতে রীতিমত তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিত্রটি রোববার বিকেলে আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার।

সরেজমিনে নগরের আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিং, চৌমুহনী, বাদামতল, টাইগারপাস, ওয়াসা, দুই নম্বর গেইট এলাকায় ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। সিগন্যাল বাতি এবং ট্রাফিকের হাতের ইশারা কোনটিই থামাতে পারছে না এসব সিএনজি ও মোটর সাইকেল চালকদের।

নগরের বিভিন্ন পয়েন্টের ট্রাফিক সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রিমোটের সাহায্যে সিগন্যাল বাতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় কিছু কিছু যানবাহন চালকেরা এই নিয়ম মানছেন না। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে আরও কিছু সময় লাগবে। এ জন্য সবার মাঝে ট্রাফিক সচেতনতা প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন তারা।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) জনাব হারুন-উর-রশিদ হাযারী। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যালগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। অনেক চালকেরা বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত নয়। সবকটি সিগন্যাল বাতি বসানো হলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরো বলেন, ’চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় আমরা এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি, পর্যায়ক্রমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদসহ ছয়টি মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে।’

সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও মোটর বাইক চালক তৌহিদুল ইসলাম আবির সিভয়েসকে বলেন, ‘আইন না মানার সংস্কৃতিতে সবাই অভ্যস্থ হয়ে যাওয়ায় সিগন্যাল মানতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। মোটর বাইক ছোট যান হওয়ায় অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশরাই হাতের ইশারায় লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়, যা দেখে অন্যান্য গাড়িগুলোও নিয়ম ভঙ্গ করে। তবে আমি মনে করি প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি এবং সাধারণ জনগনের আন্তরিকতা থাকলে ট্রাফিক সিগন্যাল মানাটাই আমাদের অভ্যাসে পরিনত করা সম্ভব।’

১৩ লাখেরও বেশি গণপরিবহন, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে নগরীর রাস্তায় ১৭টি রুটে। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাই নগরীর বিভিন্ন মোড়ের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের একমাত্র ভরসা। ফলে একদিকে যেমন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে অন্যদিকে যানজট বাড়ছে ক্রমাগত। এই সমস্যার সমাধানে ২০ অক্টোবর নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম চালু করেছে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (ট্রাফিক-উত্তর) বিভাগ। তবে এই কতটুকু কার্যকর হবে এই বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

শুধু বাতিই নয় সম্পূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের বাতি ও জ্রেবা ক্রসিংসহ আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানে হবে, এমনটাই বলছেন অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন সব ধরণের সহযোগিতা করবে বলে জানা গেছে।

এদিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ জনগণ। তারা বলছেন, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার তদারকি এবং চালক ও জনগণের সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত সড়কে নানান ধরণের সমস্যা ও দূর্ঘটনা ঘটছে। আইন থাকলেও তা অনেকেই মানেন না, আবার অনেকে আইন সম্পর্কে জানেন না। এই নতুন আইনের যদি কার্যত প্রয়োগ ঘটে তাহলে এই ধরণের সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে। 

প্রসংগত, ১৯৯০ সালের দিকে চট্টগ্রামে ট্রাফিক সিগনাল চালু করা হয়। তবে মেরামতের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে এই ব্যবস্থাপনা প্রায়ই বিঘ্নিত হতো। ২০০৪  সালের পর তা পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যায় তা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে পুনঃরায় স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়।

জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়