Cvoice24.com


ফের বিআরটিএ’তে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালাল

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৯
ফের বিআরটিএ’তে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালাল

ছবি : সিভয়েস

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালাল। বর্তমানে তাদেরকে নিয়মিত বিআরটিএ’র অভ্যন্তরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিআরটিএ কার্যালয়ে গেলে ভূক্তভোগীরা এসব তথ্য জানান।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর বিআরটিএ’তে ফিটনেস হালনাগাদ এবং লাইসেন্স নবায়নের হিড়িকের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল, এমনই অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। তবে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দালালরা এ সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ কর্মকর্তাদের।

বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) উসমান সরোয়ার আলম জানান, সচেতনতার অভাবে সাধারণ মানুষ দালালদের শরনাপন্ন হচ্ছেন। নিজে যদি আন্তরিক হয়ে কাজ করেন তাহলে দালাল ধরতে হবে না। আর বিআরটিএ’তে জনবল সংকট রয়েছে। আগের তুলনায় এখন কাজের পরিধি বেশি। সে তুলনায় আমাদের কর্মী নেই। কয়েকজনে মিলে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত লোক সাময়িকের জন্য নিয়োগ দিতে পারলে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি কমে যেতো। আমি নিজেও চাই মাঠে রাউন্ডে থাকতে, যাতে দালালরা সুযোগ না পায়। আবার ওইদিকে থাকলে অফিসিয়াল অনেক ফাইল জমা হয়ে যায়। সুতরাং যতটুকু সম্ভব সেবা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, আগের তুলনায় ফিটনেস হালনাগাদ এবং লাইসেন্স নবায়ন বৃদ্ধি পেলেও নতুন লাইসেন্স আবেদনের (লার্নার) সংখ্যা কমে গেছে। তার কারণ হচ্ছে- সরকার নতুন আইনে চালকদের নূন্যতম ৮ম শ্রেণি পাস বাধ্যতামূলক করেছে। তাই আমরা নূন্যতম ৮ম শ্রেণি পাস না হলে লার্নার দিচ্ছি না।

লার্নার না দিলেও তো চালকরা রাস্তায় গাড়ি চালাবে তা রোধ করবেন কেমনে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছে ৮ম শ্রেণি পাস না হলে লার্নার না দেওয়া তাই আমরা দিচ্ছি না। আর কেউ যদি লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তারা ধরা পড়বে এবং শাস্তি ভোগ করবে।

এদিকে সেবা গ্রহীতাদের দাবি, সাময়িক জনবল বাড়িয়ে কাজের গতি বাড়ানো ও যেকোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং দালালের দৌরাত্ম কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সরেজমিনে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সামনে খোলা জায়গায় সারিসারি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কার, মাইক্রো, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের পূর্ব পাশেও মোটর সাইকেলের ফিটনেসের জন্য লাইন। তবে নম্বরপ্লেট নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলের লাইন বেশি লক্ষ্য করা যায়। অফিস কম্পাউন্ডে জায়গা না থাকায় কম্পাউন্ডের বাইরে হাটহাজারী-মুরাদপুর সড়কের দু’পাশেও ছিল গাড়ির জটলা।

এদিকে, অন্যান্য দিনের তুলনায় ফিটনেস হালনাগাদ এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য লাইন ধরেছেন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন ব্যক্তি। সেখানেও অভিযোগের শেষ নেই। একজনে পাঁচ থেকে ১০টি গাড়ির টাকা একসাথে জমা দিচ্ছেন। যেখানে জনপ্রতি দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে সেখানে একজনে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় নষ্ট করছেন।

লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তি মোক্তার হোসেন বলেন, এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি একই জায়গায়। কোনো তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি না। প্রতিজনে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ির টাকা জমা দিচ্ছেন।  ব্যাংকের উচিত একজনের এতগুলো গাড়ির টাকা না নেওয়া।

ফিটনেস করাতে আসা জাকারিয়া হোসেন বলেন, ফিটনেস করাতে এসে দেখি মরার উপর খরার ঘা। যেখানে ফিটনেস দিবো এক হাজার টাকা সেখানে দালাল এসে বলতেছে আমাকে দুই  হাজার টাকা দিন, আমি সব কমপ্লিট করে দিচ্ছি। অর্থাৎ আমার অতিরিক্ত আরও এক হাজার টাকা বেশি চাচ্ছে।

আপনি সহকারী পরিচালককে অভিযোগ দিচ্ছেন না কেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে একবার অভিযোগ দিয়েছিলাম। তখন আমার কাজটি আর হয়নি। তখন রেগে চলে গিয়েছিলাম, আজকে আবার এসেছি। দেখি কি হয়।

ভূক্তভোগী এম এইচ চৌধুরী বাবলু বলেন, গাড়ির হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র উত্তোলন করতে সকাল ১০টায় এখানে (বিআরটিএ) এসেছি। প্রথমে এক কাউন্টারে গেলাম, তখন ওই কাউন্টারের ব্যক্তি বলেন অমুক কক্ষে যান। পরবর্তী কক্ষে গেলে তিনি আরেক রুম দেখায় দেন। এভাবে কয়েক কক্ষ ঘোরাঘুরি করার পরও কাঙ্খিত ব্যক্তির সাথে দেখা মেলেনি। এখানে দালালদের সাথে অফিসারদের কন্টাক্ট রয়েছে। তারা কাগজপত্র দেখালেই সব সাইন করে কিন্তু সাধারণ কেউ নিজ উদ্যোগে আসলে নানা অজুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করান।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, আগে যেখানে দৈনিক ৩০০ গাড়ির ফিটনেস নেওয়া হতো, এখন ৭০০ মানুষ ফিটনেসের জন্য আসছে। ফিটনেস শাখায় সেকশন ইন্সপেক্টর আছেন মাত্র তিনজন, সহকারী পরিদর্শক দুই জন এবং অফিস সহকারী রয়েছেন তিনজন জন। এই জনবলে দ্বিগুণ কাজ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার লাইসেন্স নবায়নও বেড়ে গেছে আগে দৈনিক ২০০টি হলেও এখন দৈনিক ৬০০টি করে নবায়ন করতে হচ্ছে। জনবল কম থাকা সত্তে¡ও গত ১ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলা মিলিয়ে ফিটনেস হালনাগাদ হয়েছে ৪ হাজার ৩২৩টি এবং লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৬০০টিরও বেশি।

ফিটনেস শাখার মোটরযান পরিদর্শক কে. মো. সালাহউদ্দিন বলেন,  আমাদের দেশের বড় লোকেরা নিজের কাজ নিজে করতে চায় না। তারা মনে করে আমি অমুক বা আমি অনেক বড় নেতা আমি কেন লাইনে দাঁড়াবো ? আমার কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করাবো। এভাবে দালালদের টাকা দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করাচ্ছে। তাহলে এখানে দালালদের দোষ কোথায়? আমাদের ভাবতে হবে আমার কাজ আমি করবো, অন্য কারও সাহায্য নিবো না। তাহলে দালালরা আর প্রশ্রয় পাবে না।

মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খীসা বলেন, ‘নতুন সড়ক আইন কার্যকরের পর ফিটনেস শাখার কাজ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তারপরেও কাউকে খালি হাতে ফেরত দিচ্ছি না, আমাদের কষ্ট হলেও সাধ্যমত মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, নতুন আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যান চালালে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটরযান চালালে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধানসহ জেল-জরিমানাও অনেক বেশি। সে ভয়ে বিআরটিএ অফিসের সব বিভাগে কাগজপত্র হালনাগাদ করতে ভিড় বেড়েছে।

-সিভয়েস/এমআইএম/এসসি

বিশেষ প্রতিবেদক :

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়