Cvoice24.com


শব্দদূষণের মাত্রা রেকর্ডেই সীমাবদ্ধ পরিবেশ অধিদপ্তর

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৯
শব্দদূষণের মাত্রা রেকর্ডেই সীমাবদ্ধ পরিবেশ অধিদপ্তর

ছবি : প্রতীকি

শব্দদূষণের মাত্রা রেকর্ড করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম এমন অভিযোগ নগরবাসীর। সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের কারণে নগরবাসীর শ্রবণশক্তির ক্ষতিসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন হাইড্রোলিক হর্নের পাশাপাশি কলকারখানার নিয়ন্ত্রণহীন শব্দ দিনের দিন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠেছে।

নগরবাসীর অভিযোগ পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট, নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও শব্দদূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ আইন অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর। চালানো হয় না কোনো অভিযান। ফলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েই চলছে শব্দদূষণ।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৭৫ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, আর মিশ্র এলাকায় ৬০ ডেসিবেল। কিন্তু সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে দ্বিগুণ।

শব্দদূষণের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডা. মো. মামুন ইবনে আমিন সিভয়েসকে বলেন, ' শব্দ দূষণের কারণে মানুষ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের। তাদের বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। গর্ভবতী নারীর মৃত সন্তান জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এছাড়া ভয়াবহ শব্দ সৃষ্টির ফলে হূদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে, পুরাতন হূদরোগীর অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে, মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, হজমক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে, মাংসপেশীতে খিঁচুনি হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপে হর্ন গণনা পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে হর্ন গণনার ফলাফল অনুযায়ী “বহদ্দারহাট” এলাকা হর্ন ব্যবহারের দিক থেকে সবার শীর্ষে। সেখানে ১০ মিনিটে ৬৭২টি হর্ন বাজানো হয়, যার মধ্যে ৮৭টি হাইড্রালিক হর্ন এবং ৫৮৫টি সাধারণ হর্ন বাজানো হয়। অপরদিকে হালিশহর এলাকায়  হর্ন বাজানোর পরিমাণ খুবই কম ছিল অর্থাৎ ১০ মিনিটে সর্বোচ্চ ১৭ এবং সর্বনিম্ন ১০ বার সাধারণ হর্ন বাজানো হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে নগরীর শাহ ওয়ালিউল্লাহ  আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৭০ দশমিক এক ডেসিবেল, পাঁচলাইশ এলাকায় পাওয়া গেছে ৭৯.১ ডেসিবেল, সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় পাওয়া গেছে ৭০.৭ ডেসিবেল এবং খুলশীতে ৬৯.২ ডেসিবেল। এভাবে অন্যান্য আবাসিক এলাকায়ও পাওয়া গেছে প্রায় অভিন্ন মাত্রার শব্দদূষণ।

মিশ্র এলাকার মধ্যে আগ্রাবাদে ৮০, চকবাজারে ৮১.৭ সাত, চমেক হাসাপাতাল এলাকায় ৭৫.৭, অলঙ্কার বাসস্টেশন এলাকায় ৮০ .৭, বহদ্দারহাটে ৮৪, জিইসি মোড়ে ৮২.২ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ পাওয়া যায়।

বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর মধ্যে খুলশী রোড এলাকায় ৭৪.৩, পাঠানটুলী এলাকায় ৭৬.৪, আলকরণ এলাকায় পাওয়া গেছে ৭৯.৭ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডা. মো. মামুন ইবনে আমিন আরো বলেন, নির্দিষ্ট ডেসিবেলের চেয়ে শব্দের মাত্রা বেশি হলে মানুষের শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসে। তাছাড়া শ্রবণেন্দ্রিয়তে নানা সমস্যা তৈরি করে উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ। বিশেষ করে যারা কলকারখানায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন কিংবা এ ধরনের এলাকায় বসবাস করেন তাদেরও শ্রবণশক্তি দ্রুত কমে যায়।

চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে ইপিজেড (ফ্রি পোর্ট মোড়) এ সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। শব্দদূষণের দিক থেকে চট্টগ্রাম শহরের পোর্ট কলোনী মোড় এ সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকলেও সেখানেও শব্দের মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ’অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরেজমিনে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শব্দ দূষণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি এবং আইনের আওতায় এনেছি। এছাড়া ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে মানমাত্রার বাইরে হর্ন বাজানো, বিকট শব্দের জন্য জরিমানা ও সতর্কীকরণ কার্যক্রম সর্বদা চলছে।

তিনি আরো বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ সম্পর্কে প্রায় ৬৭ শতাংশই নগরবাসী অবগত নন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হলে তবেই সুফল পাওয়া সম্ভব।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুন মাসে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে শব্দের মাত্রা পরিমাপ বিষয়ক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে শব্দের মাত্রা পরিমাপের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের ৪১টি স্থানের পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে নির্ধারিত প্রতিটি স্থানেই শব্দের মাত্রা শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ নির্দেশিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে।

  -সিভয়েস/এসসি     

 

         

 

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়