Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

চলতি বছরে ৯৩৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা
চট্টগ্রামে অগ্নিঝুঁকিতে ৪১ এলাকা

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ৬ নভেম্বর ২০১৯
চট্টগ্রামে অগ্নিঝুঁকিতে ৪১ এলাকা

অগ্নিকান্ডের ঘটনা যেন থামছেই না। সেই সাথে হুড়হুড়িয়ে বাড়ছে অগ্নিকান্ডে মৃত্যর মিছিল। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৯৩৬ টি। এসব ঘটনায় আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের এবং আহত হয়েছে অন্তত ২৬ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর ৮ টি স্টেশনে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নগরের ২৩টি মার্কেট ও ১৮ টি এলাকা।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডে সর্বাধিক নিহতরে ঘটনা ঘটেছে। ১০৪ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১ জন এবং আহতের সংখ্যা ৪ জন। তবে চলতি বছর মার্চে নগরীতে সর্বাধিক ৩৯৮ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মৃতের সংখ্যা শূণ্য। এছাড়াও চলতি বছর জানুয়ারীতে ৮১টি, এপ্রিলে ৮৬টি, মে মাসে ৪৫ টি, জুনে ৩৩টি, জুলাইত মাসে ৩০টি, আগস্ট মাসে ২৯টি, সেপ্টেম্বর মাসে ৮৬টি এবং অক্টোবর মাসে ৪৪ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচতনার অভাব, অপরিকল্পিতভাবে কাঁচাবাজার, বসতি ও মার্কেট গড়ে তোলা এবং ভবন নীতিমালা আইন অনুসরণ না করে বহুতল ভবন গড়ে তোলার কারণেই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকা। 

একদিকে পাহাড়ি অঞ্চল চট্টগ্রাম অন্যদিকে ঘনবসতি।  মূলত এসব কারেণেই বাড়ছে অগ্নি ঝুঁকি। ব্যাপক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে  বায়েজীদ, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, চকবাজার সহ ঘনবসতিপূর্ণ অনেক এলাকা।

সম্প্রতি আগুনে পুড়ে ছাঁই হয় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন জহুর হর্কাস মার্কেটের প্রায় শতাধিক দোকান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সর্বসাকুল্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা । নন্দকানন ফায়ার স্টেশনের অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ৪টি মার্কেটের মধ্যে এ মার্কেটটি রয়েছে ২ নম্বর স্থানে। এছাড়াও ১ম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ কাঁচা বাজর রিয়াজ উদ্দিন বাজার।  এ স্টেশনের আওতায় থাকা টেরীবাজার ও তামাকুণ্ডি লেইন মার্কেট রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। এছাড়াও অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য মার্কেট গুলো হলো চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারী শপিং মল, গোলজার মার্কেট, সিঙ্গাপুর সমবায় সমিতি মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট সহ নগরের প্রায় ২৩ টি মার্কেট।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা এসব মার্কেট জরুরি সময়ে ব্যবহার করার পর্যাপ্ত বর্হিগমন (বেরিয়ে আসার) পথ নেই। এসব মার্কেটে যদি ব্যস্ততম সময়ে আগুন লাগাসহ যে কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের অঘটন।

এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা পণ্যর বাজার খাতুনগঞ্জ। এশিয়ার মসলা ঘর খ্যাত এ বাজারের আশপাশে অবস্থিত মার্কেটগুলোর মধ্যে ভেড়া মার্কেট, চাউল পট্টি, শুটকি পট্টি, আসাদগঞ্জ, মিয়াখান নগর পুরাতন জুট মার্কেট ও ওমর আলী মার্কেটও রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ফায়াস সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চিহ্নিত অগ্নিঝুঁকি পূর্ণ তালিকায় রয়েছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কতৃক উচ্ছেদ হওয়া কদমতলী রেলওয়ে বসতি। কলসীদীঘি পাড় এলাকাধীন বসতি সমূহ, আকমল আলী এলাকাধীন কলোনী, অভিজাত এলাকা খ্যাত নগরীর খুলশী থানাধীন ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, আক্সিজেন রেল এলাকা সংলগ্ন বস্তি এলাকা, বার্মা কলোনী, রৌফবাদ কলোনী  ও শেরশাহ কলোনী। 

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, মূলত চট্টগ্রামের ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা সমূহ চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের  অগ্নিঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারণে বর্ষাকালে পাহাড় ধ্বসের ঘটনাও ঘটে থাকে। নগরীর লালখান বাজার, খুলশী সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনাও ঘটে থাকে। আবার এসব এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগও রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম ফায়াস সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও  সিভিল ডিফেন্সে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, মার্কেটগুলোতে অগ্নিঝুঁকি কমানোর জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে অগ্নি নির্বাপক মহড়া, মাইকিং এবং নির্দিষ্ট নীতি মালা অনুসরণ করে দোকান গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হলেও মার্কেট মালিক ও সমিতির সদিচ্ছার অভাবে বছরের পর বছর শত চেষ্টার পরও অগ্নিঝুঁকির তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না এসব মার্কেট।

অন্যদিকে এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় মার্কেট সমিতির যোগসাজেশে  মার্কেটের প্রচলিত অনিয়ম, ফুটপাত দখল করে হর্কাস বসােনো এবং মার্কেটে চলাচলের রাস্তা দখল করে মালামাল রাখার প্রবণতা  সহ বিভিন্ন কারণে ফিরে আসছে না এসব মার্কেটের শৃঙ্খলা।

সিভয়েস/এএস

আসিফ আহমেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়