Cvoice24.com


২৪ প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি ৬৫৪ কোটি টাকা!

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৫ অক্টোবর ২০১৯
 ২৪ প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি ৬৫৪ কোটি টাকা!

ফাইল ছবি।

ব্যবসায়িক কাজ দেখিয়ে ঋণ সুবিধা নিলেও সময়মতো অর্থ পরিশোধ করছে না দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়তই সেই তালিকা বেড়েই চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার চট্টগ্রামে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৬৫৪ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৭ টাকা।

১লা সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা অর্থঋণ আদালতে ওই ২৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৪টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ২৪টি মামলায় এমন ঋণখেলাপির চিত্র উঠে এসেছে।
 
এর মধ্যে শুধু যমুনা ব্যাংকের ভাটিয়ারি শাখায় ৫৩৪ কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৪ টাকার খেলাপি ঋণ করেছে মেসার্স লাকী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলাও (৩৪৭ নং) করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখায় মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজ ঋণখেলাপি করেছে মোট ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৬ টাকা।

একই সাথে খাতুগঞ্জ শাখায় মোট ৭৪ কোটি ৯৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ঋণখেলপি রয়েছে সানোয়রা ডেইরী ফুডস লিমিটেডের বিরুদ্ধে। দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই গত ১৫ ও ১৭ তারিখ দুটি পৃথক মামলা (৩৪০ ও ৩৪৩ নং) করা হয়েছে।

এদিকে ব্র্যাক ব্যাংকের জুবলী রোড শাখা, আসাদগঞ্জ শাখা ও চাঁন্দগাওয়ের মোহরা শাখায় ৩টি প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন ইলেক্ট্রনিক্স, নাবিলা ক্লথ স্টোর ও শাহ মালেকিয়া ফার্নিচার মার্টের বিরুদ্ধে মোট ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬০ টাকা ঋণ খেলাপি রয়েছে। তার মধ্যে স্বপ্ন ৫ লাখ ১ হাজার ৮৮১ টাকা, নাবিলা ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৯২ টাকা ও মালেকিয়ার ঋণ খেলাপি রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৮৭ টাকা। তাদের সবার বিরুদ্ধে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা (৩৪৮-৫০ নং) করেছে।

সিটি ব্যাংকের কদমতলী শাখায় দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাদিয়া ট্রেডিং ও মেসার্স আবুল কালাম সওদাগরের বিরুদ্ধে মোট ২ কোটি ২৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬১ টাকা ঋণ খেলাপি রয়েছে। তার মধ্যে সাদিয়া ট্রেডিং ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৪ টাকা ও আবুল কালাম ১ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৭ টাকা ঋণ খেলাপি করেছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা (৩৩৫-৩৬ নং) করেছে সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকা বাংলা ফাইন্যান্সের আগ্রাবাদ এবং ও আর নিজাম রোড শাখায় আব্দুল মান্নান গং ও মোখলেছুর রহমান গংয়ের দুটি প্রতিষ্ঠানের মোট ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭০ টাকার ঋণখেলাপি রয়েছে। তার মধ্যে আব্দুল মান্নান ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪২ টাকা ও মোখলেছুর রহমান ৪৭ লাখ ১০ হাজার ২৮ টাকা ঋণ খেলাপি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গত ১ ও ৪ সেপ্টেম্বর পৃথক দুটি মামলা (৩২৯ ও ৩৩১ নং) করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোং লিমিটেডের আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা শাখায় ফুলমোল্যান্ড ফুডস গং ও মেসার্স সামিয়া ফ্যাশন নামের ২টি প্রতিষ্ঠানের মোট ২১ লাখ ৬৮ হাজার ২৬৭ টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। তার মধ্যে ফুলমোল্যান্ড ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৫০ টাকা ও সামিয়া ফ্যাশন ৮ লাখ ৫০ হাজার ৭১৭ টাকা ঋণ খেলাপি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গত ৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পৃথক দুটি মামলা (৩৩৯ ও ৩৪১ নং) করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে, ঢাকা ব্যাংকের হাটহাজারী শাখায় মেসার্স আমানত এন্টারপ্রাইজ গং এর বিরুদ্ধে ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৩৬ টাকা (মামলা নং ৩৫২), ঢাকাস্থ জনতা ব্যাংকের আসাদগঞ্জ, ফার্মগেট শাখায় আহাদ ডেইরী এন্ড পোলট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৪৮১ টাকা (মামলা নং ৩৫১), ইস্টার্ন ব্যাংক নিউমার্কেট শাখায় মেসার্স জুনায়েদ ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৪ টাকা (মামলা নং ৩৪৬) ও অগ্রণী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় মো. সেলিম উদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৮২ টাকার (মামলা নং ৩৪৫) ঋণ খেলাপি রয়েছে।

অন্যদিকে, সোনালী ব্যাংক কালী বাড়ী শাখায় মেসার্স এইচ এম এম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৩৯৭ টাকা (মামলা নং ৩৪৪), ন্যাশনাল ব্যাংক সিডিএ শাখায় আসকীর বিল্ডিং কন্সট্রাকশন গংয়ের বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৮ টাকা (মামলা নং ৩৪২), স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় মেসার্স ক্রিস্টাল এন্টারপ্রাইজ গংয়ের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার ১০৩ টাকা (মামলা নং ৩৩৮) ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আই ডি এল সি লিমিটেড নন্দন কানন শাখায় মেসার্স আর টি এস ট্রেডিং এজেন্সি গংয়ের বিরুদ্ধে ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ টাকার (মামলা নং ৩৩৭) ঋণ খেলাপি রয়েছে।

এছাড়া প্রাইম ব্যাংক ভাটিয়ালী শাখায় মেসার্স এম এম ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৬ টাকা (মামলা নং ৩৩৪), ওমান ব্যাংক ই পি জেড শাখায় মেসার্স জাহেদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬ টাকা (মামলা নং ৩৩৩), সাউথ ইস্ট ব্যাংক হাটহাজারী শাখায় মেসার্স জোবায়ের মোটর পার্টস গংয়ের বিরুদ্ধে ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৭০ টাকা (মামলা নং ৩৩২) ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় মেসার্স এম এ ট্রেডিং গংয়ের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ টাকা ঋণ খেলাপি রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যমুনা ব্যাংকসহ নগরীর একাধিক ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা  ঋণ খেলাপির বিষয়ে সিভয়েসকে জানান, ব্যাংক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে  ব্যবসায়ীক সুবিধার্থে ঋণ সুবিধা দিয়ে আসলেও তারা সময়মতো তা পরিশোধ করছে না। ব্যাংক থেকে বার বার যোগাযোগ করা হলেও বিভিন্নভাবে গড়িমসি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। নির্ধারিত সময়ের পর টাকা বুঝে না পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ সকল নিয়মকানুন মেনে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সিভয়েসকে জানান,  ঋণখেলাপির জন্য বর্তমানে আমাদের দেশের অর্থনীতির গতি রোধ হচ্ছে। প্রতিনিয়তই আদলতে ঋণখেলাপি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাভাবিকভাবে মামলার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

সিভয়েস/এসসি

 

 

 

 

 

 

 

ফয়সাল আব্দুল্লাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়