Cvoice24.com


দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু এখন ‘পাঠাও’ চালক

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১ অক্টোবর ২০১৯
দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু এখন ‘পাঠাও’ চালক

স্বার্থপর রাজনীতিবিদদের মাঝে খাঁটি রাজনীতিবিদ মেলা বেশ দুষ্কর। দু’একজন যে ব্যতিক্রম থাকেন না তা কিন্তু নয়। এরকমই এক ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান শেফায়েত আজিজ রাজু।

রাজু অ্যাপস ভিত্তিক পাঠাও, উবার, ওভাই ও সহজে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করে চলছেন চট্টগ্রাম সিটির অলি গলিতে। পরিচিত জনেরা দেখে যেমন বিস্মিত হচ্ছেন আবার কেউ কেউ স্বাগত জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্টাটাস দিয়েছেন রাজু। স্ট্যাটাসে রাজু কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সেটা যতই ছোট বা বড় হোক না কেন। সেইসঙ্গে তিনি বর্তমান চাকরির বাজার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার চেয়ে ছোট কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

শাফায়েত আজিজ রাজু পেকুয়া উপজেলার দুই বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। যদিও এবারের নির্বাচনে তার দল (বিএনপি) অংশ না নেয়ায় তিনি নির্বাচনে লড়েননি।

ফেসবুকে তার দেয়া স্ট্যাটাস টি হুবহু তুলে দেয়া হল-
 

এ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং।
 

যে বাইক বা কারটি এতদিন আপনাদের কাছে সৌখিন ছিল উপরোক্ত কোম্পানীর কারনে তা এখন আপনার রুটি রুজির অংশ। স্বাধীন পেশা, প্রয়োজনের তাগিদে উপার্জনের মাধ্যম নচেৎ সৌখিনতার অংশ। শিক্ষার হার যেমন বাড়ছে তেমনি উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অংকের সংখ্যা হেরফের করে জিডিবি’র প্রবৃদ্ধি উচ্চ সূচকে দেখানো যায় কিন্তু দেশের বেকারত্বের হারকে কাষ্টমাইজ করা যায়না। এই সময়ে এ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং তাই যুব সমাজের কাছ খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। বাইকে একটু খাটুনি দিলে হাজার টাকা দিনে রোজগার করা যায়, যেখানে পূঁজি এক লক্ষ হলেই চলে সাথে বৈধ কাগজ পত্র। মাসে ত্রিশ হাজার টাকার একটি চাকরির জন্য আমরা কত কিছুইনা করি। জমি জমা বিক্রি করে নেতার পিছু পিছু ২/৪/৫/১০/২০ লক্ষ টাকা দিয়েও চাকরি হয়ে যায় সোনার হরিণের মত অধরা। অন্যদিকে টাকা ফেরত না পেয়ে আত্মহত্যা, মাদকাসক্ত, দেশান্তরি থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই জড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রাণশক্তি যুবসমাজ।
 

মোদ্দাকথা পাঠাও, ওবার, ওভাই, সহজ এগুলো ড্রাইভিং পেশাটির সম্মান বৃদ্ধি করেছে। একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে অল্প পূঁজিতে যে কেউই এই পেশায় আসতে পারে এবং এসেছেও, এমনকি মেয়েরাও এসেছে।লজ্জা, শরম, ইগো, পাছেলোকে কিছু বলবে এই বিষয়গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে আমার মত আপনিও নেমে পড়ুন রাস্তায়। সহজ পন্থায় হালাল পথে বৈধ ইনকাম। কারো দয়ায়, কারো দাক্ষিণ্যে বা করুণায় বেশি দিন চলা যায় না। কেউ আপনাকে চাকরি দিবে বা কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকাটা চরম বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অন্তত যতদিন পর্যন্ত আপনার যোগ্যতানুযায়ী কিছু করতে পারছেন না ততদিন পর্যন্ত চালিয়ে যান। কথায় আছে অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
 
সুতরাং ঘরের মানুষের কাছে বোঝা এবং বাইরের মানুষের কাছে মজা না হতে চাইলে এখনি সিদ্বান্ত নিন আপনি কি করবেন?? মনে রাখবেন “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাসাগর” বড় কিছু পেতে চাইলে ছোট দিয়েই শুরু করুন। আজকের ছোট কাজের অভিজ্ঞতা আগামীকালের বড় কাজের প্রেরণা হয়ে আপনার সাহস সঞ্চার করবে।


বিঃ দ্রঃ -আমাকে রাইড শেয়ার করতে দেখে কেউ লজ্জা পেলে তার জন্য আমি দায়ী নই।

এই পোস্টের একজন কমেন্ট করেছেন, ‘প্রিয় রাজু, তোমাকে অন্তরের গভীর থেকে শুভেচ্ছা। আল্লাহ তোমাকে আরো দীর্ঘ হায়াত প্রদান করুক, তোমার পিতার মতো জনগনের সেবা করার জন্য। রাইড শেয়ারিং ও বিশাল জনসেবা ও জীবন চলার মহৎ পেশা। হয়তো তোমার বেলায় জীবন চলার জন্য নয়।মোহাম্মদ আবু জুবায়ের কমেন্টে লিখেছেন, রাজু ভাই স্যালুট আপনাকে আপনার বাজাজ কেলিবার সবুজ রং এর বাইক দিয়ে আমি প্রথম মটর সাইকেল চালানো শিখেছিলাম। আপনাকে দেখে আজ হঠাৎ পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। বিদেশে এই পেশা নিয়ে অনেক গর্ব কিন্তু দেশে কেনো জানি মানুষ নানান মন্তব্য করে যাই হউক আপনার প্যাসেনজার হতে পারা সৌভাগ্যের আমাদের জন্য। কামরুল হাসান লিখেছেন, রুটি রুজি নয় নিশ্চয় তরুণ প্রজন্মের পথ প্রদর্শক হিসেবে আপনার এই পেশায় আসা। ধন্যবাদ আপনাকে মানসিক দেয়াল ভাঙবার জন্য। অনেকেই অনুপ্রাণিত ও উপকৃত হবে। মোক্তার আহমেদ লিখেছেন, আপনাকে নেতা হিসেবে নয় খুবই প্রিয় একজন বড় ভাই হিসেবে জানতাম। ভালবাসা আপনার জন্য। আমাদের যুব সমাজ আপনাকে দেখে শিক্ষা নিক। আমি গার্মেন্টস এর সোয়টার আপারেটর থেকে ব্যাংকের ম্যানেজার হয়েছি ভাই। পৃথিবীতে কোন কাজ ছোট নয়। আশা করি আপনার বাইকে আপনার পাশে বসার সৌভাগ্য আমার হবে।

সিভয়েস/এএইচ

চকরিয়া-পেকুয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়