Cvoice24.com


খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন তালিকায় স্থান পেতে নেতাদের জোর লবিং

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন তালিকায় স্থান পেতে নেতাদের জোর লবিং

ফাইল ছবি

নতুন সরকার গঠনের সাথে সাথে পাল্টে যায় বিশেষায়িত স্থানীয় সরকার কাঠামো তিন পার্বত্য জেলার তিনটি জেলা পরিষদের নীতি নির্ধারণী কাঠামোও। বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান এবং চৌদ্দজন সদস্য নিয়ে গঠিত অনির্বাচিত এই পরিষদগুলোর হাতে হস্তান্তরিত সরকারি বিভাগগুলো নিয়ন্ত্রণের অবারিত ক্ষমতা। 

পাঁচ বছর মেয়াদে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রস্তাবনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় গঠিত এই পরিষদের চেয়ারম্যান অঘোষিতভাবে সরকারের একজন উপমন্ত্রীর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। আর সদস্যরা প্রতিমাসে চল্লিশ হাজার টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন।

এছাড়া বিদেশ সফর, সরকারি খাদ্যশস্য, নিয়োগ, প্রকল্প থেকে শুরু করে বদলি-পদোন্নতির মাধ্যমে রয়েছে বিপুল অর্থ কামানোর সুযোগ। সে কারণে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে সরকারি দলের নেতারা শুরু করেন প্রতিযোগিতা। কার থেকে কে বেশি শীর্ষ নেতাদের তুষ্ট করতে পারবেন, সেই দৌড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাতি নেতারাও।

চলতি বছরের শেষদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়টি বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলের মুখে মুখেই। যদিও আগামী বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনটি জেলার অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের মেয়াদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  টানা দুইবারের নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বেশ আগে থেকেই পরিষদ পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু অপর দুই জেলার সংসদ সদস্যদের পরিষদ পরিবর্তন বা পুনর্গঠনে তাড়া না থাকায় তাতে গতি আসেনি।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বান্দরবানের সংসদ সদস্য এবং রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর
তালুকদারের যৌথ আগ্রহে মেয়াদ শেষের আগেই তিনটি পরিষদের পুনর্গঠন  সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এই খবর চাউর হবার পর থেকে সবচেয়ে ব্যাপক লবিং শুরু হয়েছে খাগড়াছড়িতেই। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহসভাপতি কংজরী চৌধুরী। তাঁর সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন করে চেয়ারম্যান হবার সম্ভাব্য তালিকায়  মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সহসভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা’র নাম বেশ উপরের দিকে রয়েছে।

এছাড়া অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা ও বর্তমান পরিষদের সদস্য খগেশ্বর ত্রিপুরা নিজেদের মতো নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে রাজনৈতিক ও পারিবারিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বিবেচনায় উপর্যুক্ত তালিকার প্রথম তিনজনের নামই স্থানীয় সংসদ সদস্যের গুডবুকে রয়েছেন।

বর্তমান পরিষদের চৌদ্দজন সদস্য পদে রদ-বদলের জোয়ারে কপাল খুলতে পারে কারো কারো। সে তালিকায় আলোচিত হচ্ছে মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নীলোৎপল খীসা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্রইসাঞো চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহিনা আক্তার ও সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান বাঁসরী মারমা, সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র  সন্তান অপূর্ব ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক মো. দিদারুল আলম, পানছড়ি কলেজের অধ্যাপক শ্যামলী চাকমা, মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দিন,

জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও খাগড়াছড়ি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি তপন কান্তি দে, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সত্যজিত চৌধুরী এবং খাগড়াছড়ি সনাতন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সজল বরণ সেনের নাম।

এ তালিকার বাইরে আওয়ামী রাজনীতির সাতপাঁচে কখনো ছিলেন না এবং এখনো নেই; এমন অনেকেই জোর কদমে হাঁটছেন সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রীর দুয়ার পর্যন্ত। তবে এসব ব্যক্তির কোনভাবেই ঠাঁই মিলবে না বলে দাবি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী’র।

তিনি জানান, সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দল পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ইচ্ছার চেয়ে দলের স্বার্থ এবং ভবিষ্যতকেই প্রাধান্য দেন। সে বিবেচনায় কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসতে পারবে না। 

জেলা পরিষদের পরিবর্তন বা পুনর্গঠনের বিষয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা উন্নয়ন কমিটি’র আহ্বায়ক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজনৈতিক প্রয়োজনে মনোনীত যেকোন কাঠামোর পরিবর্তন বা পুনর্গঠনকে স্বাভাবিকভাবেই দেখতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহুল ইসলাম টেলিফোনে বলেন, পরিষদগুলোর পরিবর্তন বা পুনর্গঠনের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেন, পরিষদগুলোর এখনো মেয়াদ বাকি রয়েছে।

খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় শরণার্থী টাস্কফোর্স এর চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত। আমরা শুধু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবনা প্রদান করি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন ‘স্থানীয় সরকার পরিষদ’ নামে তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে তিনটি পরিষদের প্রথম নির্বাচন হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্যচুক্তি’র পর ১৯৯৮ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ গঠন করা হয়।  সেই থেকে নির্বাচিত পরিষদ ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের যাত্রা অব্যাহত আছে।

সিভয়েস/আই

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়