Cvoice24.com


যে বিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সাঁতার শিখতে হয়!

প্রকাশিত: ১৩:২০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
যে বিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সাঁতার শিখতে হয়!

গলা পানি পেরিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত স্কুলে যেতে হয় লামার এম. হোসেন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের

শুষ্ক মৌসুমে কখনো গলা, কখনো বুক পানি পেরিয়ে আসতে হয় বিদ্যালয়ে। খাল পেরিয়ে এসে প্রতিদিন ভিজা কাপড়ে বিদ্যালয় ক্লাস করতে হয় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের। ভিজা শরীরে ক্লাস করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায় পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়।

অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপারের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে পাহাড়ি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা লেখাপড়ায় আরো পিছিয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে কমে যায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। 

একান্ত আলাপকালে এমন তথ্যই দিলেন বান্দরবানের লামা উপজেলার দূর্গম এম. হোসেন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাজেরা বেগম।    

তিনি বলেন, এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিশুদের সাঁতার জানতে হয়। কারণ ছোট ছোট শিশুরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। খাল পারাপারের সময় পানিতে ভেসে যায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েকদিন আগে দুই শিক্ষার্থী পানিতে ভেসে গেলে সহপাঠীদের চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। এই চিত্র প্রতিদিনের। বিদ্যালয়টির তিন পাশে ঘিরে আছে পোপা খাল। সমস্যা হতে উত্তরণে খালটির উপর একটি ব্রিজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্রিজটি হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ওপারের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে।  

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়েছে। স্কুলটি উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে লামা সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দূর্গম পোপা মৌজায় অবস্থিত। সম্প্রতি শিক্ষা অধিদপ্তরের পিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ রুম বিশিষ্ট শ্রেণিকক্ষের দোতলা একটি আধুনিক ভবন হয়েছে। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এম. জিয়াবুল হক বলেন, বিদ্যালয়টি লামা সদর ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী নদীর ওপার থেকে আসে। নদীর ওপারের অংহ্লাডুরী মার্মা পাড়া, ছিচাখইন মার্মা পাড়া, কলার ঝিরির মুখ, লক্ষণ ঝিরি, তাউ পাড়া, নয়া পাড়া ও এম. হোসেন পাড়া থেকে নদী পেরিয়ে শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুবিনুল ইসলাম ও জমাইতি ত্রিপুরা জানায়, খুব কষ্ট করে খাল পেরিয়ে স্কুলে আসতে হয়। ছোটরা নদীতে ঠাঁই পায়না। বড়রা কোলে করে তাদের পার করে দেয়।  

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, পাহাড়ি খাল হওয়ায় খালটিতে স্রোত বেশি ও প্রায় সময় ভরপুর থাকে। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে খালটিতে স্রোত আরো বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  

অংহ্লাডুরী মার্মা পাড়ার বাসিন্দা ও অভিভাবক মংএথোয়াই মার্মা বলেন, খালের ওপারের মানুষের পারাপারের কোন মাধ্যম নেই। শেষ অবলম্বন হচ্ছে সাঁতার। সাঁতার না জানলে এপার থেকে ওপারে যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। এই এলাকার মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি থেকে রেহাই দেয়ার লক্ষ্যে মানবিক কারণে পোপা খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। 

লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পোপা খালের উপর জনস্বার্থে একটি ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। ব্রিজটির জন্য সবসময় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম থাকে।   

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। পাহাড়ি এলাকা হিসেবে এমনিতে লামা উপজেলা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তার ওপর এইরকম সমস্যাগুলো শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায়।

-সিভয়েস/এসএ 

 

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়