Cvoice24.com


‘ডেঙ্গুতে ফিলিপাইনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
‘ডেঙ্গুতে ফিলিপাইনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের কারণে ফিলিপাইনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এ বছর ডেঙ্গু শুধু বাংলাদেশে না, আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। ১৬ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ আমাদের দেশে। আমাদের যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে দেখতে পাচ্ছি, সে তুলনায় ফিলিপাইনে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। ফিলিপাইনের হিসাব যদি ধরি, সেখানে কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় পাঁচশ লোক মারা গেছে ডেঙ্গুতে। তারা জরুরি অবস্থাও জারি করেছিল। অন্তত আমাদের দেশে তেমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়নি, হতে দেইনি। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কম’

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরের গণফোরাম দলীয় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোর জন্য মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আনা হয়েছিল। এর জন্য যারা দায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? না নেওয়া হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কি না।

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যখন নির্বাচিত করে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছে এবং আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি, যেখানেই থাকি না কেন আমি সবসময় মনে করি—জনগণের ভালো-মন্দ দেখা আমার দায়িত্ব। আমি তো আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশ চালাই না। আর ১২টায় ঘুম থেকে উঠি না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বোধহয় ৫ ঘণ্টা আমার ঘুমের সময়, বাকি সময় আমি সার্বক্ষণিক দেশের কোথায় কী হচ্ছে, সেদিকে নজর রাখাকে আমি আমার কর্তব্য বলে মনে করি।

তিনি বলেন, মশা নিধনের ওষুধ কেনার বিষয়ে কারা দায়ী বা ওষুধে সত্যিই কেন কাজ হয়নি, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ডেঙ্গুর ধরণটা পাল্টে গেছে, সিম্পটমগুলোও পাল্টে গেছে। ঠিক সে কারণেই ঠিক কোন ওষুধ প্রয়োগ করলে কাজে লাগবে, সে বিষয়ে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছে এবং আমরা তাদের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা, সেটাও নিয়েছি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু সরকার নয়, আমাদের দলের সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করেছি, জনগণকেও কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের সংসদ সদস্য একজন ডাক্তার। আমি মনে করি, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি এ বিষয়ে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।’ এসময় তিনি সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান।

এডিস মশা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি পছন্দ করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইদানিং আমাদের সবারই একটু আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়ে গেছে। টাকা-পয়সা বেশি হয়ে গেছে। সবাই এসি-ফ্রিজ ব্যবহার করে, হাই কমোড ব্যবহার করে। এই কমোডের ঢাকনা খুলে রাখা হয়, সেখানেও কিন্তু লার্ভা জন্ম নিতে পারে। ফ্রিজের নিচে পানি জমে, সেটাও কেউ খেয়াল করে না। এডিস মশা কিন্তু খুব অপরিষ্কার পানিতে যায় না। এরা আমাদের দেশের অনেকটা এলিট শ্রেণির মতো, তারা উচ্চবিত্তের জায়গা বেশি পছন্দ করে।

ঢাকায় ২ হাজার চিকিৎসক-নার্সকে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে

মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর তারকা চিহ্নিত ১ নম্বর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন রয়ৈছে। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী দেশের স্বনামধন্য মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ডেঙ্গু রোগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। গাইডলাইনটি পকেটবুক আকারে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে বিতারণ করা হয়েছে।

সংসদ নেতা আরও বলেন, এই জাতীয় গাইডলাইনের ভিত্তিতেই ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। তারা ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ও রোগী ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে স্থানীয় চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ঢাকার ২৩টি সরকারি ও ৪১টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক ও নার্সকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা সংসদকে জানান, ৩ আগস্ট পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ৫৭ হাজার এসএন-আই কম্বো কিটসহ মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ ডেঙ্গু রোগ শনাক্তকরণ কিট আমদানি করেছি। ৬ আগস্টের পর বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে দেশেই ডেঙ্গু রোগের কিট তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার কিট সরবারহ করা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু রোগ শনাক্তকরণের কিট ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই।

-সিভয়েস/এসএ

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়