Cvoice24.com


মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝর্ণায় ৪ বছরে নিহত ১০, আহত শতাধিক

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১৮ আগস্ট ২০১৯
মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝর্ণায় ৪ বছরে নিহত ১০, আহত শতাধিক

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিভিন্ন পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেক পর্যটক। প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে এখানে। গত ৪ বছরে ১০ জন পর্যটক নিহত ও শতাধিক পর্যটক আহত হয়েছে। তবে এসব দুর্ঘটনা অসাবধানতাকে দায়ী করছেন অনেকে।

জানা গেছে, নজরকাড়া পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝর্ণার কারণে মিরসরাইয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঝর্ণা দেখার জন্য মিরসরাইয়ে আসছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে দুই ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামে এসব ঝর্ণায়। উপজেলার নয় স্তর বিশিষ্ট খইয়াছরা, নাপিত্তাছরা, সহস্রধারা, মহামায়া, বাওয়াছরা, রূপসী ঝর্ণা, বোয়ালিয়া ঝর্ণা, হরিণাকুণ্ড ঝর্ণা, সোনাইছরি ঝর্ণা নজর কেড়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের। তবে ঝর্ণাগুলোতে প্রশাসনের কোন নজরদারী না থাকাতে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। তবুও প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝর্ণার পানিতে একটু শরীর ভিজিয়ে নিতে ছুটে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট উপজেলার বড়কমলদহ রূপসী ঝর্ণায় কূপে ডুবে নিহত হয় মেহেদী হাসান প্রান্ত (২১)। মেহেদী হাসান নাটোর জেলার নাটোর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামের মো. নুরুল আমিনের ছেলে। তারা চট্টগ্রাম শহরের কর্ণেলহাট প্রশান্তি আবাসিক এলাকায় থাকতো। প্রান্ত চট্টগ্রাম শহরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট টেকনোলজিতে সিভিল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিষ্টারের ছাত্র ছিল।

মেহেদী হাসানের বন্ধু শাহরিয়ার ইসলাম বলেন, রূপসী ঝর্ণা দেখার জন্য আমরা বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকালে ছয় বন্ধু চট্টগ্রাম শহর থেকে আসি। ঝর্ণায় দ্বিতীয় স্তরে উঠে মেহেদী সহ আরো ২জন উপর থেকে পানিতে লাফ দেয়। এসময় দু’জন উঠে গেলেও মেহেদী উঠতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যে পানিতে ডুবে যায়।
গত ২৬ জুলাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে এসে ঝর্ণার উপর থেকে পা পিছলে পড়ে নাম আবু আল হোসাইন মেমোরী (২৯) নামে এক পর্যটক নিহত হয়। তার বাড়ি বগুড়া জেলার বগুড়া সদর থানায়। সে ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় সেইফটি কনসালটেন্ট বিডি প্রতিষ্ঠানের আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতো। ২৮ জুন খৈয়াছড়া ঝর্ণায় আনোয়ার হোসেন নামে এক পর্যটক উপর থেকে পড়ে নিহত হয়। সে ফেনী সদরের আব্দুল মজিদের পুত্র। ২ এপ্রিল খৈয়াছড়া পাহাড়ি এলাকায় ঝর্ণার উপর থেকে পা পিছলে পড়ে মো. আশরাফ হোসেন (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আশরাফ ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত নাজিম উদ্দিনের সন্তান।
১২ জুলাই উপজেলার বোয়ালিয়া ঝর্ণা দেখতে এসে আটকা পড়ে ১৫ পর্যটক। চারঘণ্টা চেষ্টার পর তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল।
১৭ জুলাই মহামায়া লেকে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় শাহাদাত হোসেন (২২) নামে এক যুবক। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৯ জুলাই পানিতে খুঁজে শাহাদাতকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। তার বাড়ি মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নে।

গত বছরের ১৫ আগস্ট নয়দুয়ারিয়ার নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার কূপে ডুবে অনিমেষ দে (২৭) নামে এক পর্যটক নিহত হয়। সে ফটিকছড়ি উপজেলার নিরঞ্জন দে’র ছেলে।
একই বছরের ২৪ আগস্ট বড়কমলদহ রূপসী ঝর্ণার উপর থেকে পড়ে মারা যায় সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকায়।
ওই বছরের ১৫ জুলাই খৈয়াছরা ঝর্ণার সাতটি স্তরের ৫ম স্তরে উঠার পর স্থানীয় এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় তাকে ধরতে যায় ওয়াসিম আসগর। ওই পর্যটক সামান্য আঘাত পেলেও ওয়াসিম পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়। এতে মারাত্মক আহত হয় সে।
২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর উপজেলার নাপিত্তছরা ঝর্ণায় সাঁতার কাটার সময় চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন মামুন (২২) মৃত্যু হয়। সে ফেনী জেলার শৈর্শদী এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে।

জানা গেছে, কিছু বিষয়ে সতর্ক না থাকায় অনেক সময়ই ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা। পর্যটকদের অসতর্কতার জন্য ইতিমধ্যে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন মিরসরাই উপজেলা ও থানা প্রশাসন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খেয়ালখুশি মতো গহীন জঙ্গলসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলোমেলোভাবে বেড়াতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছে অনেকে। এজন্য অনেকেই দর্শনার্থীদের দায়িত্বহীনতা ও অসংযত আচরণকে দায়ী করছেন। তবে সম্প্রতি পর্যটকদের নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে ইকো গাইড ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ে উঠার জন্য জুমারিং ও নামার জন্য র্যা প্লিং ভাড়া দিয়ে পর্যটকদের নজর কেড়েছেন বারৈয়ঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি।

বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) সভাপতি মো. সরওয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি। খৈয়াছড়া, সহস্রধারা, নাপিত্তা ছড়া, লবণাক্ষ ছড়া, বাওয়া ছড়া, কমলদহ ছড়া, সোনাই ছড়া ঝর্ণা এলাকায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য ২০ জন ইকো গাইডকে নিয়োগ দিয়েছি। পর্যটকরা যদি ঝর্ণা এলাকায় যাওয়ার সময় ইকো গাইডদের সাথে নিয়ে যায় তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, মূলত দায়িত্বহীনতা ও অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকে ঝর্ণার উপরে উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স’র ষ্টেশন অফিসার মো. তানভির আহম্মদ বলেন, ঝর্ণাগুলোতে প্রশাসনের নজর দেয়া প্রয়োজন। পর্যটকদের গাইড দিতে হবে যেন কোন স্থানে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবে, কোন স্থানে গেলে নিরাপদ তা সচেতন করতে পারে।

মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসীম উদ্দিন বলেন, মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ে সৃষ্ট ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিন আসেন হাজারো পর্যটক। ঝর্ণা এলাকাগুলোতে যদি পর্যটন মন্ত্রণালয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে তাহলে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। এখানে কোন নিরাপত্তা না থাকায় ইতোমধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা পর্যটন এলাকগুলোতে বিপদজনক স্থান চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীঘ্রই সর্তকতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেবো।

-সিভয়েস/এসএ

ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়