Cvoice24.com


মেয়াদোত্তীর্ণের নয় মাস পরও পূর্ণাঙ্গ হয়নি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ১৮ জুলাই ২০১৯
মেয়াদোত্তীর্ণের নয় মাস পরও পূর্ণাঙ্গ হয়নি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি

মেয়াদোত্তীর্ণের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য এক মাসের সময়ও বেঁধে দেয়। গত ২০ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সময় বেঁধে দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর এক বছরের জন্য দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৫১ সদস্যের এই নতুন কমিটিতে এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে সভাপতি-সম্পাদক ছাড়াও ২৩ জনকে সহ সভাপতি, ৯ জন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন করে সহ সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, উপ প্রচার সম্পাদক, দফতর সম্পাদক, উপ দফতর সম্পাদক, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এবং দুইজনকে উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ ঘোষণায় জানানো হয়েছিল নতুন কমিটি আগামী এক বছর দায়িত্ব পালন করবে। 

সেসময় ৫১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নতুন কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনাও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু নিজেদের মেয়াদের এক বছর শেষ করে অতিরিক্ত ৯ মাস দায়িত্ব পালন করলেও এই সময়ের মধ্যে কমিটি পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

জেলা ইউনিটের আংশিক কমিটিগুলোকে পুর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দফতর সেলে জমা দেয়ার জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দিয়ে গত ২০ মে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ । 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাক্ষরিত ঐ বিজ্ঞপ্তিতে এই সময়ের মধ্যে কমিটি জমা না দিলে, নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ কর্তৃক কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তির দুই মাস শেষ হতে চললেও আলোর মুখ দেখেনি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। 

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণ না হওয়ায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিভয়েসকে বলেন, এত লম্বা সময়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়া দুঃখজনক। এটা কর্মীদের মনোবল নষ্ট করছে। এতে করে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এসময় বর্তমান কমিটির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। সিভয়েসকে তিনি বলেন, এত বছর পর কমিটি হলো, আমাদের সবারই ভাল কিছু প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অনেক ফারাক। এত দিনে আমরা শুধু কমিটি পুর্ণাঙ্গ করতে পারিনি তা না। এই লম্বা সময়ে আমরা কোথাও একটা ইউনিট কমিটি করতে পারিনি। গত এক বছর ৯ মাসে শুধু সাতকানিয়া উপজেলায় কমিটি করা হয়েছে তাও শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। 

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটানোর অভিযোগ তুলে বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি মিজানুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ৫১ জনের মধ্যেও চিহ্নিত জামায়াত শিবির আছে। এছাড়া সাতকানিয়ার ব্যাপারটাতো আপনারা জানেনই। আমি যতটুকু জেনেছি পুর্ণাঙ্গ কমিটির একটা তালিকা এর মধ্যে কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। তবে অনুপ্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে তা অনুমোদন না করেই ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্র।

বর্তমান এই কমিটিকে মেয়াদউর্ত্তীর্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে বরং বিলুপ্ত করা উচিত। বর্তমান কমিটির ৫১ জনের মধ্যে ৫ জনও সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে রাজনীতি করেনা। তারপরেও তারা কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করার সাহস কোথায় পায় সেটাই আমার বুঝে আসেনা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম. বোরহান উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, আমরা কমিটি করছি না বিষয়টা এমন না। কমিটি করার বিষয়ে আমরা এখনও ঢাকায় অবস্থান করছি। আমরা এর মধ্যে কমিটি দপ্তর সেলে জমাও দিয়েছি। বেশ কিছু ইউনিটের নতুন কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কমিটি ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ নাকোচ করে দেন তিনি। 

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক মমিন শাহরিয়ার সিভয়েসকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দিয়েছে দক্ষিণ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় এই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর গঠিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। তৃণমূলের সাথে পরামর্শক্রমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিও জানায় তারা।

যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের জন্য শ্রম দিয়েছে, তারাই যেন ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পায়—এমন প্রত্যাশা কর্মীদের। সেই সঙ্গে ভর্তি জালিয়াতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িতরা যাতে পদ না পায়, সেদিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

 

সিভয়েস/এএআরটি/এএস

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়