Cvoice24.com

চাইনিজ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ
সাবেক সেনা সদস্যের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ১৭ জুন ২০১৯
সাবেক সেনা সদস্যের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাবেক সেনা সদস্য  নান্নু মিয়া খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও চায়না হারবারের শ্রমিকদের দায়ী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জোরারগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক।

এই ঘটনায় সোমবার সকালে র‌্যাব-৭ এর একটি টিম ও পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত স্বজনরা অভিযোগ করেন, নান্নু মিয়াকে খুনের পর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। শরীর এসিডে ঝলসে দেয়া হয়েছে। পেটে রড ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় লাশ পরিদর্শনেও এসব বিষয়ের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এদিকে জোরারগঞ্জ থানার মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেড বঙ্গবন্ধু শিল্পজোনে বেপজার ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত। মাটি ভরাটের কাজের জন্য সমুদ্রে ড্রেজার স্থাপনের লক্ষ্যে বামনসুন্দর খাল দিয়ে ইঞ্জিন বোটের সাহায্যে ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের কর্মচারীরা কোম্পানীর সাইট অফিস থেকে ড্রেজার পর্যন্ত আসা যাওয়া করতো। গত ১৪ জুন বিকাল ৫টায় কোম্পানির বোট অপারেটর ফারুক হোসেন নৌকা নিয়ে বামনসুন্দর খালের মুখে ঢোকামাত্র চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় নৌকা চালক প্রাণভয়ে নৌকা রেখে পালিয়ে যাওয়ার পর চায়না হারবারের কর্মীরা নৌকাটি তাদের সাইট অফিসে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে জোরারগঞ্জ শিল্পজোন পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আবুল বাশার, কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম, এডভাইজার আরিফ মোস্তফাকে বিষয়টি জানালে আরিফ মোস্তফা বিষয়টি মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক জুলফিকার তারেককে জানান। তারা ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের আটককৃত ইঞ্জিন নৌকাটি নিয়ে আসতে বলেন। তাদের কথামতো ল্যান্স কর্পোরাল (অব) নান্নু মিয়াসহ ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের ৫ জন কর্মচারী শুক্রবার রাত নয়টায় নৌকাটি আনতে যান। এ সময় নৌকাটি ফেরত না দিয়ে চায়না হারবারের ২০-২৫ জন সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের কর্মীরা সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং যে যার যার মতো করে ফিরে আসেন। কিন্তু পরে জানা যায়, সেখান থেকে চারজন ফিরে আসলেও নান্নু মিয়া ফিরেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ওই এলাকায় নান্নুকে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি। রোববার সকাল ১০টায় পুলিশ নান্নুর লাশ উদ্ধার করে।

ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের ডেপুটি ম্যানাজার খন্দকার আরিফুর রহমান বলেন, চায়না হারবার বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে দিতে চায় না। এর আগেও তারা বাংলাদেশি অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উপর হামলা করেছে। তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নান্নুর শরীরের যখমের চিহৃ দেখেই বোঝা যায় কতোটা নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সোমবার চমেক হাসপাতালে নিহত নান্নুর স্ত্রী মাবিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের সাথে চায়না হারবারের শত্রুতায় বলি হয়েছে আমার স্বামী। আমি দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কি করে বাঁচবো। আমি আমার স্বামী হত্যার যথোপযুক্ত বিচার চাই।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে র‌্যাব-৭ এর এএসসি জুনায়েদ বলেন, বলার মতো অগ্রগতি নেই। আমরা সব পক্ষের সাথে কথা বলছি। শীঘ্রই রহস্য বের হয়ে আসবে।

সোমবার সরেজমিনে ওই এলাকায় পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা জানান, চায়না হারবারের বিরুদ্ধে এর আগেও স্থানীয় শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হওয়ায় এবং মিরসরাইয়ের লোকজনের এই প্রকল্প নিয়ে ইতিবাচক ধারণার কারণে বিষয়গুলো স্থানীয় পর্যায়ে সমাধান হয়েছে। তবে এই ধরণের খুনের ঘটনা অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য তাদের।

-সিভয়েস/এমআইএম/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়