Cvoice24.com


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাকড়ির পরিবর্তে বাড়ছে গ্যাসে ব্যবহার, রক্ষা পাবে বনাঞ্চল

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২ জুন ২০১৯
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাকড়ির পরিবর্তে বাড়ছে গ্যাসে ব্যবহার, রক্ষা পাবে বনাঞ্চল

খায়ের হোসেনের স্মৃতিতে এখনো ভাসে-খাবার রান্না করা মানেই লাকড়ি যোগাড় করতে পার্শ্ববর্তী উঁচু খাড়া পাহাড় বেয়ে জঙ্গলে ছুটে যাওয়া। খায়ের অবশ্য নিশ্চিত নন কোনটা তার জন্য কষ্টকর ছিল। লাকড়ি সংগ্রহ করতে গ্রীষ্মের তাপদাহের তীব্রতা নাকি বর্ষার কাঁদাপানিতে ভিজে দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া। সময়ের পরিক্রমায় পাহাড়ি বনাঞ্চল আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি লাকড়ির দামও বাড়ছে হু হু করে।          

মায়ানমারের থিন বাউ-ক্যেই গ্রামের বাসিন্দা রোহিঙ্গা খায়ের বলেন, কাঠের লাকড়ি কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এখন। তাই এলপিজি গ্যাসই আমাদের অন্যতম অবলম্বন।

খায়ের ২০১৭ সালে তার পরিবারের ছয়জন সদস্যসহ মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছিল।

শুধু খায়েরই নয়, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা এখন কাঠের লাকড়ি ব্যবহার থেকে সরে এসে গ্যাসের চুলা ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে। যা এ অঞ্চলের বনাঞ্চল রক্ষায় প্রয়োজন ছিল।

২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে মায়ানমার সীমান্ত এলাকা রাখাইনে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বসবাসের অনুপযোগী পাহাড়ি জায়গায় আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া নানা খাদ্যসামগ্রী রান্না করার জন্য রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর লাকড়ির প্রয়োজন তীব্র হয়ে ওঠে। ফলে গোটা এলাকায় লাকড়ির ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর তথ্যমতে, এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সাইক্লোনের মৌসুম। তাই গাছবিহীন ক্যাম্প এলাকার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। মাটিক্ষয় ক্যাম্পের জন্য এখন একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং ভারি বৃষ্টিপাতে ক্যাম্পে মারাত্মক পাহাড়ধসের আশঙ্কা বাড়ছে। ২০১৮ সালে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এই সমস্যা চিহ্নিত করে এবং শরণার্থী ক্যাম্পে লাকড়ির চাহিদা কমিয়ে ক্যাম্পে বৃক্ষরোপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আইওএম, এফএও (ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন) এবং ডব্লিউএফপি (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম) মিলে ‘সেইফ প্লাস’ নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের মাঝে এলপিজি গ্যাস এবং চুলা বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ বনাঞ্চলের জন্য বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।

এই কর্মসূচির আওতায় শরণার্থী ও স্থানীয়দের গ্যাসের চুলা, এলপিজি গ্যাসের পাশাপাশি গ্যাস পুনরায় রিফিল করার সুবিধাও দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৫ হাজার পরিবারকে এলপিজি সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং জুনের মধ্যে ৮০ হাজার পরিবারকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।

সেইফ প্লাসের আইওএম ইউনিটের প্রধান প্যাট্রিক কেরিগনন বলেন, এখন পর্যন্ত এই কর্মসূচি খুবই সফল। কিন্তু তিন বছর মেয়াদী এই কর্মপরিকল্পনার জন্য ৩০ শতাংশেরও কম অর্থ সাহায্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি এফএও’র সাথে যৌথভাবে চালানো ক্যাম্পের ভেতরে ও চারদিকে বৃক্ষরোপনের উপরও সমান গুরুত্বারোপ করেন ‍তিনি।

তিনি বলেন, এই উদ্যোগ সফল হবে। কারণ এটি লাকড়ির চাহিদা মেটাবে, পাশাপাশি এই অঞ্চলে বনায়নও হবে।

আইওএম-এর প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল ফুয়াদ বলেন, মৌসুমী ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়ঙ্কর মাটিক্ষয় রোধে বৃক্ষরোপন জরুরি। ভাটিবার ও ব্রুম ঘাস এবং স্থানীয় ঔষধি গাছগুলো পাহাড়ের মাটি ধরে রেখে পাহাড়কে রক্ষা করবে। অন্যান্য গাছ-গাছগুলোও ঔষধি হিসেবে কাজ করবে

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নিম, সেগুনসহ এ এলাকার বিভিন্ন প্রজাতি গাছ রোপন করা হচ্ছে যাতে তা এখানকার জনগোষ্ঠীর কাজে আসে।

সামগ্রিকভাবে এলপিজি কর্মসূচি শরণার্থী ও স্থানীয়দের নজর কেড়েছে। তারা বলেছেন, এটি তাদের কাঠের লাকড়ি খোঁজার সময় বাঁচাচ্ছে এবং তাদের ঘরবাড়িগুলোকে পরিচ্ছন্ন বাতাস প্রবাহে সাহায্য করছে। পাশাপাশি নারীদের লাকড়ির জন্য ক্যাম্প ছেড়ে দূরে জঙ্গলের যাওয়ার ঝুঁকিও কমিয়ে দিয়েছে।

-সিভয়েস/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়