Cvoice24.com


বাজারে কৃত্রিম সংকট, বিদেশি ফলের দাম চড়া

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৪ মে ২০১৯
বাজারে কৃত্রিম সংকট, বিদেশি ফলের দাম চড়া

ছবি সিভয়েস

পবিত্র মাহে রমজানে ফলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। এসব ফলের তালিকায় রয়েছে বেশিরভাগ বিদেশি ফল।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দেশিয় ফলের সরবরাহ না থাকার কারণে আপেল, কমলা, আঙ্গুর, খেজুর, মালটাসহ অন্যান্য ফলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পারাটাও মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান ফলমন্ডীর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

হঠাৎ করে এসব ফলমূলের মূল্য বৃদ্ধিতে খুচরা পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আমদানি কম হওয়ার কারণে অতিরিক্ত দামে কিনছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। যা ভোক্তাদের হাতে আসতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

সরেজমিনে ফলমন্ডী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতি ১৫ কেজি মালটা কার্টুনে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। যা প্রতি কেজি দাঁড়ায় ১৫০ থেকে ১৬৭ টাকায়। এদিকে সেগুলো খুচরা পর্যায়ে আসতে আসতে হয়ে যায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। একই অবস্থা আপেলের বাজারেও। প্রতি ২০ কেজি কার্টুনের আপেল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। যা প্রতি কেজিতে হয় ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়। কিন্তু খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। আবার রেড গোল্ডেন নামক আপেল তো আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ১৮ কেজি ওজনের এ কার্টুনটি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা দামে। যা প্রতি কেজিতে দাঁড়ায় ১৮৯ টাকা করে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়।

প্রতি কেজি মাল্টা দশদিন আগেও বিক্রি হয়েছিলো ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। সেটি হঠাৎ  করে  ৬০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঠিক আপেলের ক্ষেত্রেও একই। প্রতিকেজি আপেল বিক্রি হয়েছিলো ১০০ টাকায় কিন্তু তাও ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ভারতীয় ফল মুনাক্কা (দেখতে আঙ্গুরের মত) বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০ কেজি কার্টুন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। যার প্রতি কেজি মূল্য ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আবার লাল আঙ্গুর প্রতি ১০ কেজি কার্টুন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। যার প্রতি কেজির দাম ৩২০ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে আসতে আসতে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

অভিযোগ রয়েছে, রমজান মাসের ফলের বাজার চাঙ্গা রাখতে চট্টগ্রামে ফলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে দাম বাড়িয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, চাহিদার অনেক কম আমদানি হচ্ছে। দেশের বড় বাজার চট্টগ্রাম বন্দরেই অস্বাভাবিক হারে ফল বেচাকেনা হচ্ছে। আমদানি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

বিদেশি ফলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে।

এ.আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী নুর নবী জানান, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে দেশিয় ফলের তুলনায় বিদেশি ফলের চাহিদা বেশি। অন্যান্য বছর দেশিয় ফলগুলো চট্টগ্রামে এতদিনের মধ্যে চলে আসলেও এ বছর নানা কারণে তা পিছিয়ে পড়েছে। যার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশি ফলের জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ সেহরী এবং ইফতারে ফল খান বিধায় অতিরিক্ত দাম হলেও মানুষ কিনছেন।

আরেক ব্যবসায়ী মো. মুমিন জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আমদানীকারক আছে সাতজন। অথচ ঢাকায় আমদানীকারক রয়েছে ১৫০ জনেরও বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরে যখন ফল আসে তখন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের থেকেও বেশি দামে তারা কিনে ফেলে যার কারণে চট্টগ্রামে সেসব ফলমূল সংকট হয়ে যায়।

কথা হয় ফলমন্ডী ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীরের সাথে। তিনি সিভয়েসকে জানান, ঘুর্ণিঝড় ফণীর আঘাত হানার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়তে পারেনি। যার কারণে আমরা কেউ ফল সংগ্রহ করতে পারছিনা। সড়ক পথে যেসব ফল বাজারে আসছে তা দিয়ে আমরা সারিয়ে ফেলছি। আমাদের অধিক দামে কিনতে হচ্ছে বিধায় সামান্য লাভ করে আমরাও বিক্রি করে দিচ্ছি। কিছু কিছু ফলের ক্ষেত্রে আবার কমিশন দেয়। যেমন ধরুন আমি যে আমদানিকারক থেকে ফল কিনলাম তা যদি নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করতে পারি তাহলে আমদানিকারক আমাকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন দেয়। এটা সরাসরি তার ফল বিক্রি করলে পাওয়া যায়।

ফলমন্ডী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর সিভয়েসকে বলেন, মালটা, আপেল, আঙ্গুরের সিজন এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার বন্দরের জাহাজের জটটাও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোন ব্যবসায়ী ফল মজুত করে রাখেনি। দুই একদিনের মধ্যে আবার আগের পর্যায়ে চলে আসবে। দেশিয় ফলের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে সংকটমুক্ত হবে চট্টগ্রাম।

তবে ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু হয়েছে দেশিয় ফল আম, কাঠাল, লিচু। বর্তমানে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম পাইকারী পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। যা খুচরা পর্যায়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার পাহাড়ী গুটি আম পাইকারীতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে সরবরাহ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে বিদেশি ফল থেকে দেশিয় ফলের দিকে

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়