Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


চট্টগ্রামজুড়ে বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ১৪ এপ্রিল ২০১৯
চট্টগ্রামজুড়ে বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ

ছবি : আজিম অনন

চট্টগ্রাম জেলা ও নগরজুড়ে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করা হয়েছে বাঙলা নববর্ষ ১৪২৬। রোববার (১৪ এপ্রিল) ভোর থেকে নগরীর ডিসি হিল, সিআরবি শিরীষতলা, চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন উপজেলাসহ পেশাজীবী সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হয় নববর্ষের নানা অনুষ্ঠানমালা।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন বর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে ডিসি হিল। রাগ সঙ্গীতে নববর্ষ আবাহনের পর শুরু হয় দলীয় পরিবেশনা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ডিসি হিলে ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব মিলে মিশে একাকার হয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর আবেগে মেতে উঠে সকলে।

নববর্ষ উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রামের উদ্যোগে নগরীর ডিসি হিলে দু’দিন ব্যাপী বর্ষবিদায় ১৪২৫ ও বর্ষবরণ ১৪২৬ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অংশে চলে সাংস্কৃতিক সংগঠনের দলীয় পরিবেশনা। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বৈশাখের আগমনী গান “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” দিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণ। রাগ সঙ্গীতে নববর্ষ আবাহনের পর শুরু হয় দলীয় পরিবেশনা।

এসময় তাদের সাথে কন্ঠ  মেলান ডিসি হিলের হাজারো দর্শক-শ্রোতা। এতে আরও অংশ নেয় ভায়োলিনিস্ট চিটাগং, আনন্দধ্বনি, সংগীত ভবন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, সুন্দরম শিল্পগোষ্ঠী,  বাংলাদেশ রেলওয়ে সাংস্কৃতিক ফোরাম, প্রমা আবৃতি সংঘ।

প্রথম অধিবেশনে সংগীত পরিবেশন করেন, সংগীত ভবন, রক্তকরবী, জয়ন্তী ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, গুরুকুল সংগীত একাডেমী, সুর-সাধনা সংগীতালয় ,সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, রক্তকরবী, ছন্দানন্দ, প্রীতিলতা,বংশী, গীতধ্বনি, রাগেশ্রী, বংশী শিল্পকলা একাডেমি, প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সপ্তডিঙ্গা শিল্পাঙ্গন ও চট্টগ্রাম মহানগর খেলাঘর।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে ডিসি হিলে ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব মিলে মিশে একাকার হয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর আবেগে মেতে উঠে সকলে। সিআরবি শিরীষতলায় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। দু’দিন ব্যাপী বৈশাখী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় পর্বে বিকেল দুইটায় সাহাবউদ্দিনের বলী খেলার আয়োজন করে আয়োজকরা। এই খেলায় সারা দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বলী অংশ নেয়।

বলী খেলাকে ঘিরে অন্যরকম এক আমেজ তৈরি হয় সাত রাস্তার মোড়ে। বলী খেলার মঞ্চ ঘিরে কয়েক হাজার দর্শক হাত তালি দিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেন। দর্শকদের উজ্জীবিত করার জন্য মাঠের চার পাশে ঘুরে ঘুরে ঢোল বাজিয়েছে একদল ঢোলী।

ফাইনালে মুখোমুখি হন শাহজাহান বলী ও বাদশাহ বলী। খেলার এক পর্যায়ে শাহজাহান খেলার নিয়ম ভঙ্গ করে রেফারি কর্তৃক অযোগ্য ঘোষিত হলেও দর্শকের দাবির মুখে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর দুজনেই দীর্ঘক্ষণ ধরে লড়াই করেন। শেষে দুই প্রতিযোগীর মতামতের ভিত্তিতে দুজনকে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি।

সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এসময় সবাই নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছিলো বৈশাখের সাজে। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

এতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, দীপক চক্রবর্তী, নুরুল আলম নিজামী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দীকীসহ প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শিল্পকলা একাডেমিতে দিনব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এদিকে ডিসি হিলে সকালে অনুষ্ঠান শুরুর সময় হাজারখানেক দর্শক থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাখ ছাড়িয়ে যায়। বর্ষবরণকে ঘিরে যথারীতি বসেছে বৈশাখী মেলা। বাঁশ-বেত-তালপাতার তৈরি হাতপাখা, প্লাস্টিকের ঢোল, খেলনা, শোপিস, শরবত, ডাব, তরমুজ ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে মেলায়।

পুরো বর্ষবরণ উৎসবকে ঘিরে ডিসি হিল ও সিআরবিতে  রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল থেকেই র‌্যাব-পুলিশের কড়া নজরদারি অনুষ্ঠানস্থলে। উৎসবস্থলের প্রবেশ মুখে নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়। মূল ফটকের আগে দুইটি আর্চওয়ে, ভেতরে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। পোশাক পরা নারী ও পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

নববর্ষের অনুষ্ঠানমালাকে ঘিরে সিআরবিতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিএমপি। সিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আব্দুর রউফ সিভয়েসকে জানান, পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটা মানুষ ক্রু সুইপিং ও স্ক্যানিং এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে হয়েছে।

এদিকে অনুষ্ঠানে আগত মানুষদের মাঝে পানির বোতল, হাতপাখা বিতরণসহ ও বরফ মেশানো ঠান্ডা পানি সরবরাহ করে সিএমপি।

এছাড়া জেলা বিভিন্ন উপজেলায় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী পালিত হয় নববর্ষের নানা কর্মসূচি।

-সিভয়েস/এমআইএম/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়