Cvoice24.com


প্রযুক্তি নগরী বিনির্মাণে চসিকের ৪৯১ কোটি টাকার “স্মার্ট সিটি প্রকল্প”

প্রকাশিত: ১২:৫০, ৬ এপ্রিল ২০১৯
প্রযুক্তি নগরী বিনির্মাণে চসিকের ৪৯১ কোটি টাকার “স্মার্ট সিটি প্রকল্প”

ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ, শক্তিশালী সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেমে -লার্নিং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪৯১ কোটি টাকা ব্যয় বাজেটেস্মার্ট সিটি প্রকল্পনামে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সংস্থাটি।

গত এপ্রিল বুধবার প্রকল্পটির ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতার ব্যাপারে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তাই স্থানীয় সরকারের পর্যবেক্ষণের পর প্রকল্পের ডিপিপি তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য চসিকের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পুরো নগরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় চলে আসবে। এতে করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ওয়ার্ড সমুহের কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শিক্ষা ব্যবস্থায় স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম বাস্তবায়িত হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নাছির উদ্দীন বলেছেন, স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ আমার নির্বাচনী অঙ্গীকার। চট্টগ্রাম নগরীকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে স্মার্ট সিটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে নগরীর সব ওয়ার্ড কার্যালয়ের কার্যক্রম কেন্দ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাছাড়া বিভিন্ন স্পটে স্থাপন করা হবে শক্তিশালী সিসি টিভি ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলো সার্বক্ষণিক নগর মনিটরিং করবে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকেও ক্যামেরাগুলো নিখুঁত ছবি ধারণ করতে পারবে। অন্ধকারের মধ্যেও সেগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। এতে করে সন্ত্রাস, খুন-খারাবি, ইভটিজিং বা যেকোন ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিরোধে শতভাগ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। তাছাড়া চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে -লার্নিং পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের লক্ষ্যে স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেমও বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি নগরীগুলোর কাতারে স্থান পাবে চট্টগ্রামের নাম।

প্রকল্পের ব্যাপারে চসিক প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, মাননীয় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রাম সফরে আসলে উনারা মেয়র মহোদয়কে এই প্রকল্পে অর্থ সহযোগিতা করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। গত বুধবার প্রকল্পের ডিপিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ডিপিপিটি তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য আমরা ফরোয়ার্ড এপ্লাই করেছি। মূলত তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার ভিত্তিতেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি মত দেন।

প্রকল্পের ডিপিপি ব্যাপারে চসিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৪৯১ কোটি  টাকা ব্যয় বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডকে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কিংয়ে সংযুক্ত করা হবে। ওয়ার্ড অফিসগুলোর সমস্ত কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ভাবে মনিটরিং করবে চসিক সদর দপ্তর। ওয়ার্ডের উন্নয়ন বা নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম মনিটরিংসহ ওয়ার্ডে কোন বিভাগের কতজন লোক দায়িত্ব পালন করছেন, কে কোন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন বা অনুপস্থিতির হার - এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে নিয়মিত আপডেট করা যাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার সড়ক  এলাকা এই ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করা হবে। পুরো নগরীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, খুন, অপহরণ, ইভটিজিং বা যে কোন ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিরোধে পাঁচশ’ স্পটে স্থাপন করা হবে এক হাজারটি শক্তিশালী সিসি টিভি ক্যামেরা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই ক্যামেরাগুলো দিন-রাত সার্বক্ষণিক সক্রিয় থেকে ছবি ধারণ করবে। অন্ধকারেও এই ক্যামেরাগুলোর নিখুঁত ছবি ধারণে সক্ষমতা রয়েছে। শুধু ছবি ধারণ নয়, ক্যামেরাগুলোর অপারেটিং সিস্টেমে চিহ্নিত অপরাধী, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বা যে কোন ব্যক্তির ছবি আপলোড করে দিলে ক্যামেরায় ধারণ হওয়া মাত্রই তা সংকেত পাঠাতেও সক্ষম।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম চালুকরণের লক্ষ্যে -লার্নিং শিক্ষা দানের পরিকল্পনাও  রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চসিকের ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে -লার্নিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রকল্পের ডিপিপি-তে সংযোজন করা হয়েছে।

প্রকল্পের ব্যাপারে চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আগামীকাল আমি ঢাকায় যাচ্ছি।স্মার্ট সিটিপ্রকল্পের ডিপিপি পর্যবেক্ষণের অগ্রগতির ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম সত্যিকার অর্থেই প্রযুক্তি নগরীতে পরিণত হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

-সিভয়েস/এসএ

উজ্জ্বল দত্ত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়