Cvoice24.com


হেগ সেমিনারে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৬ মার্চ ২০১৯
হেগ সেমিনারে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরদের চালানো নির্মম গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে নেদারল্যান্ডের হেগ নগরীতে শনিবার ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সেমিনার। সেমিনারে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তি গোষ্ঠীকে বিচারের আওতায় আনতে দল, মত, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতার শামিল উল্লেখ করে বক্তাগণ বলেন, ১৯৭১ সালের হত্যাযজ্ঞ বিশ্বের ইতিহাসে খুব অল্প সময়ে রেকর্ডসংখ্যক হত্যা নির্যাতনের ঘটনা হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পরেও এখনও আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে জড়িতদের বিচারে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই এ ব্যাপারে আর কালক্ষেপণ না করে এখনই সবাইকে একসাথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

বক্তারা বলেন, এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনার দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা এশিয়ায় নয়, বরং বিশ্বের নানা প্রান্তের স্বৈরাচারী রাষ্ট্রীয় শক্তি তাদের দোসররা বারবার নিরীহ নিরস্ত্র নারী-পুরুষ শিশুদের উপর ঘৃণ্য বর্বর গণহত্যা চালাতে উৎসাহিত হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গবেষক, রাজনীতিক, কূটনীতিক এবং বিশেষজ্ঞরা একত্রে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।     

সেমিনারে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী অভিবাসী এবং বিদেশিদের যৌথ আন্দোলন এবং আমেরিকার বন্দরে পাকিস্তানের জন্য অস্ত্রবাহী জাহাজ রুখে দাঁড়ানোর ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত তথ্যচিত্রব্লকেডদেখানো হয় এবং একাত্তরের গণহত্যার উপর আলোচনায় অংশ নেন তথ্যচিত্রটির নির্মাতা আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী আরিফ ইউসুফ। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন।

সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক লেখক বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া।

কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য হেগ পিস পরিচালক ইয়াকব দে ইয়ঙ্গে। অন্যান্যের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশ নেনবাংলাদেশের বন্ধু”  খেতাবপ্রাপ্ত ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার এর কন্যা শমী কায়সার, জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক ডঃ ভোলফগাং পেটার সিঙ্গেল, ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং সম্পাদক ডানকান বারলেট, নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মাদ বেলাল, বাংলাদেশি ডাচ বিশিষ্ট সমাজকর্মী জাহাঙ্গির চৌধুরী রতন এবং ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম ইবিএফ এর প্রেসিডেন্ট আনসার আহমেদ উল্লাহ।   

এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা এবং ড. নুজহাত চৌধুরীর ভিডিও বার্তা দেখানো হয় সেমিনারে। সেমিনার এর পাশাপাশি একই দাবিতে শনিবার হেগ নগরীতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সামনে এবং হেগ নগরীতে অবস্থিত স্থায়ী শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া সেমিনারস্থলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এবং তাদের দোসরদের চালানো হত্যাযজ্ঞ নির্মম নির্যাতনের উপর একটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিস কমিটি এর সমন্বয়কারী এম এম মোর্শেদ, ডাচ-বাংলাদেশি শিল্পপতি জসিম উদ্দিন লিটন, সমাজসেবী মনোয়ার মোহাম্মদ, দক্ষিণ আফ্রিকার ডাচ দূতাবাসের কূটনীতিক আন্দ্রে স্টামেট, পেন ফিনল্যান্ড এর কার্যকরী বোর্ড এর সদস্য ড. মজিবুর দপ্তরী এবং মাহমুদ হাসান।  উপস্থিত ছিলেন আমস্টারডাম এর রেডিও লা বেনেভলেন্সিয়া এইচটিএফ প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক জর্জ ভাইস এবং

বক্তাগণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানী সেনারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাসে প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে এবং দুই লাখেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ নৃশংস নির্যাতন করে। এছাড়া ১০ মিলিয়ন মানুষকে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এমন অল্প সময়ে এতো বেশি সংখ্যক মানুষ হত্যার ঘটনা এটিই বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি, কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ মারা গেলেও, সেই যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছিল প্রায় ছয় বছর এবং ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় তিনটি মহাদেশে। অথচ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এত বড় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না দিয়ে বরং বড় ধরণের বৈষম্য করেছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, এতো অল্প সময়ে আর কখনও কোথাও এতো মানুষ হত্যা করা হয়নি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ১৯৭১ সালের গণহত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এখনও নিশ্চুপ রয়েছে।

সেমিনারের পরে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের নানা উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জার্মানির বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল মুনিম এবং স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন মনোয়ার মোহাম্মদ, হোসাইন আব্দুল হাই এবং মীর জাবেদা ইয়াসমিন ইমি।

-সিভয়েস/এসএ

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়