Cvoice24.com

২৫ মার্চের বিশেষ লেখা
আজ ২৫ মার্চ সেই গণহত্যার কালো রাত

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২৫ মার্চ ২০১৯
আজ ২৫ মার্চ সেই গণহত্যার কালো রাত

১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ৪৯ বছর আগে এদিন রাতেই জেনারেল ইয়াহিয়া খানের রক্তপিপাসু সেনাবাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বর্বর গণহত্যার ঘটনা ঘটায়। ভয়াল এই দিনটি তাই আমাদের জাতীয় জীবনে বেদনাঘন দিন। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার কারণে ২৫ মার্চের রাতটি কালরাত/গণহত্যার রাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। স্বজন হারানো বেদনায় সেদিন শোকাতুর হয়ে পড়েছিল গোটা বাঙালি জাতি। প্রতি বছর এ দিনটি এলেই আমাদের হৃদয় কষ্টে ভরে ওঠে, পুরনো ক্ষতচিহ্ন ফের’ দগদগে ঘা’ হয়ে দেখা যায়।

টালমাটাল মার্চের এদিন শক্তিশালী মানুষের ঢল নামে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সারাদিন, প্রায় প্রতিদিন মিছিলের সামনে এসেই তিনি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেন এবং সবাইকে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য তৈরি হবার আহবান জানান। এদিন তার বাড়িতে সকাল থেকে ৪-৫শ’ সাংবাদিক উপস্থিত হতে থাকেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় দু’ শ ছিলেন বিদেশি। বেলা ১২টায় শেখ মুজিব খবর পান যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সদলবলে ঢাকা ক্যান্টমেন্টে চলে গেছেন। তখন আর কারো বুঝতে বাকি রইল না যে, আলোচনা সফল হয়নি এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। সকলের ধারণা ছিল তারা হয়তো শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে সামরিক শাসন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। হয়তো বা রাজনৈতিক দল ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেবে। তবে বর্বরোচিত গণহত্যা চালাবে এ দেশের কোনো সচেতন মানুস ঘুর্ণাক্ষরেও এ চিন্তা করেনি। কিন্তু কুচক্রীরা সব কিছু ম্লান করে দিয়ে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে মানব সভ্যতার ইতিহাস অন্যতম পৈশাচিক হত্যাকান্ড ঘটায়। ‘কালো গণহত্যার রাত’ হিসেবে এটি সমধিক পরিচিত।

রাত সাড়ে ৯টায় তারা নির্বিচারে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, আরমানিটোলা, পিলখানার বিডিআর ক্যাম্পে হামলা চালায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দৈনিক পত্রিকা অফিসে বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অগ্নিসংযোগে সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে বোমাবর্ষণ ও ব্যাপকভাবে লুটপাট চালনো হয়। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে বিমানে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে একটি মিলিটারি কোর্টে তার বিচারের ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। সেই ‘অপারেশনসার্চ লাইট এর নির্মম স্মৃতি আজো জাতিকে পীড়া দেয়। এই ২৫ শে মার্চের দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি লাভে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানাচ্ছি।

বাঙালীর এই কালো দিনটি আমি এবং আমার পরিবারকেও পীড়া দেয়। বিশেষ করে যখন আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্মৃতি মনে পড়ে তখন, আমার বাবা ৫ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ডাক্তার, ক্যাপ্টেন ও কোম্পানি কমান্ডার আহমেদ কবির ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ এর ভাষণের পর তাঁর আহবানে সাড়া তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র তিন বছর। এরপর আর বাবাকে কখনও দেখা হয়নি।

সিভয়েস/এএস

মুহাম্মদ রফিক উদ্দিন বাবুল ভূঁ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়