ভিক্ষা নয়, গানই অবলম্বন গোফরানের
ছবি: সিভয়েস
‘আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হলেও ভিক্ষা করি না। কারণ, ভিক্ষুককে আল্লাহও পছন্দ করেন না। তাই চোখে না দেখলেও ভিক্ষা না করে গান করার পথ বেছে নিয়েছি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অলি-গলি, রাস্তায় বসে গান করি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করা হয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, গান করতে ঢাকাতেও যাই। চোখে দেখি না বলে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। কিন্তু মনকে সান্ত্বনা দিই, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’
এক বুক কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বললেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মোহাম্মদ গোফরান (৩০)।
মোহাম্মদ গোফরান সাতকানিয়া এওছিয়া ইউনিয়নের মৃত আব্দুল ওয়াজেদের ছেলে। স্ত্রী এবং দুই মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে তার পরিবার। সংসারের অভাব মেটাতেই গ্রাম থেকে চলে আসেন চট্টগ্রাম শহরে। বিগত ৪ বছর ধরেই রেয়াজুদ্দিন বাজারস্থ নুপুর মার্কেটের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। গান পরিবশেন করে সংসারের অভাব-অনটন দুর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি গোফরান।
আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ৩টায় জামালখান প্রেস ক্লাবের সামনে হারমনিয়াম নিয়ে গান পরিবেশন করতে দেখা যায় মোহাম্মদ গোফরানকে। সেখানে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, বাবা-মা দু’জনই মারা গেছেন। এরপর আমার চোখের সমস্যা ধরা পরে। ষোল বছর ধরে আমি চোখে দেখতে পাই না। চোখের সমস্যা হওয়ার পর থেকে বড় ভাই থাকলেও তিনি আমার দেখাশুনা করতেন না। তাই পরিশেষে নিজের পথ নিজেই বেছে নিয়েছি।
মোহাম্মদ গোফরান বলেন, বেঁচে থাকার জন্য তো কিছু না কিছু করতে হবে। তাই বলে তো আর ভিক্ষা করতে পারি না। গান পরিবেশন করেই জীবিকা নির্বাহ করছি। দিন শেষে মানুষ থেকে ভালোই সহযোগিতা পাচ্ছি। সবাই আমার গান শুনে সাহায্য করছেন।
তিনি আরো বলেন, ছোট কাল থেকে মসজিদে আযান দিতাম, বিভিন্ন মাহফিলে গজল পরিবেশন করতাম। আগে থেকে চর্চা ছিল বলে গান পরিবেশন করতে সমস্যা হয় না। প্রথমে ভান্ডারী কাওয়ালী টিমের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতাম। এখন সেই দল আর নেই। আমার কয়েকটা গানও রেকর্ড হয়েছে। সকাল বেলা বাসায় একটু চর্চা করি। আর দুপুরে বের হয়ে যায় বিভিন্ন অলিতে-গলিতে গান পরিবেশন করার জন্য। দুপুর ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গান করি। সারাদিনে পাঁচ-ছয়শ’ টাকা আয় হয়। আবার অনেক সময় বেশিও হয়। কোথাও কোনো অনুষ্ঠান থাকলে দেড়-দুই হাজার টাকা পাই।
-সিভয়েস/এসএ
মিনহাজ মুহি