Cvoice24.com

সিভয়েস গোলটেবিল বৈঠক
‘আইনের কঠোর প্রয়োগে নারী সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব’

প্রকাশিত: ১৫:১০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
‘আইনের কঠোর প্রয়োগে নারী সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব’

ছবি: আজীম অনন

সিভয়েসটুয়েন্টিফোরডটকম পাঠ আবর্তের যৌথ উদ্যেগে আয়োজিতনারী সহিংসতা প্রতিরোধ আমাদের ভূমিকা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাগণ উপনীত হয়েছেন আইনের কঠোর প্রয়োগের সাথে সামাজিক ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে নারী সহিংসতা প্রতিরোধ করা যাবে।

১০ ফেব্রুয়ারি সকালে সিভয়েস হল রুমে সিভয়েস সম্পাদক নাসিরুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মহিলা কলেজের (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা) প্রফেসর সালমা রহমান, লেডিস ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিনাত আজিম, বিশিষ্ট কলামিস্ট .মাসুম চৌধুরী, আইনজীবি ডি এম আরুছুর রহমান,এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, বাংলাদেশ মানবধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু,কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাবরিনা চৌধুরী, ব্যবসায়ী দাউদুল ইসলাম, পাঠ আবর্তের সমন্বয়ক হানিফ মান্নান, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ কাউছার উদ্দীন তামিম, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন।

সালমা রহমান বলেন,গৃহকোণে প্রতিটা মেয়েরা নির্যাতিত হয়েছে একসময়। এখন প্রতিটি সহিংস ঘটনা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। আমি রেপ শব্দটা দিয়ে শুধু নির্যাতন বুঝাতে চাইনা। আমি একটি শব্দ নির্যাতন দিয়ে নির্যাতনকে বুঝাচ্ছি। আমি নির্যাতন ভিত্তিক বয়সকে তিন ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমে শিশু,শিশুদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে নির্যাতন করা হয়। এখনকার মায়েরা এগিয়ে তারা সচেতন। টিনএজরা হল দ্বিতীয় ধাপ, থার্টিন এইজের মধ্যে যা হচ্ছে, প্রেমের হাতছানির মাধ্যমে তারা নির্যাতিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে থার্টিন এইজের মেয়েদের সাথে তাদের অভিভাবকদের আরো খোলামেলা হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বন্ধুত্ব হওয়ার আগে ভাবতে হবে, শরীরের কাছাকাছি না আসা। গ্রামে এটি খুব ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে, গ্যাংরেপ হচ্ছে, হত্যা হচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব,পূর্বশত্রুতা ,সম্পত্তির দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অনেক সহিংসতা হয়। আগামী মাস থেকে পর্নোসাইট এবং বিপদজনক সাইট রয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি হলে আমরা কিছু আশা পাচ্ছি যে সহিংসতা কমে আসবে। আমরা এটি রুট লেভেল থেকে শুরু করবো না, উপর থেকে শুরু করবো সেটি প্রশ্ন।

লেডিস ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিনাত আজিম বলেন,পরিবারে যদি সন্তানদের সামনে খারাপ ব্যবহার করে সন্তানরা তা শিখবে। তারাও তা ব্যবহার করবে এবং তার ভেতর কোন অপারাধবোধ জন্মাবে না। তাই পিতা-মাতাকে সন্তানদের সামনে ভাল সুন্দর আচরণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন,ইসলাম ধর্মে নারীদের বিশেষ মর্যদা রয়েছে। সে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি আমরা নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে পারি তাহলে নারী সহিংসতাসহ বিভিন্ন অপরাধ কমবে।

কলামিস্ট .মাসুম চৌধুরী বলেন, মানুষের সবদিক থেকে উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু মানসিকতার দিকে তেমন উন্নতি হচ্ছে না। আমাদের আগে মানুষ হতে হবে,নারীদেরকে মানুষ ভাবতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হওয়া যায়। আমরা আইনের কথা বলি। কিন্তু চার দেওয়ালের ভেতর আইন চলেনা।তাই আমাদের মনের পরিবর্তন হতে হবে, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলে শুধু নারী সহিংসতা নয়, সবরকম অপরাধ কমে যাবে।

এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন,ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জঙ্গি প্রতিরোধে যেভাবে মসজিদে মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেভাবে নারী সহিংসতা রোধে মসজিদের ইমাম-আলেম উলামাদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করলে নারী সহিংসতা অনেকাংশে রোধ হবে বলে মনে করি। পাশাপাশি আইন সকলের জন্য সমান হতে হবে এবং পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

আইনজীবী ডি এম আরুছুর রহমান বলেন,নারীর উপর হিংসাত্মক আচরণই হচ্ছে সহিংসতা। নারীর প্রতি যৌন হয়রানি শুধু সহিংসতা নয়, বিভিন্নভাবে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় সহিংসাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া পর্নোগ্রাফীর বিস্তার, উশৃংঙ্খল চলাফেরা এবং বিভিন্ন এনজিও,মানবধিকার কমিশন,ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নারীদের শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে ব্যবহারও নারী সহিংসতার জন্য দায়ী।  পরিশেষে বলতে চাই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে নারী সহিংসতা রোধ হবে বলে মনে করি। 

ব্যবসায়ী দাউদুল ইসলাম বলেন,নারীদেরকেও মানুষ মনে করতে হবে। আমাদের মানসিকতা সৃষ্টি হলে নারী সহিংসতা কমবে। আমাদের মানসিকতা ঠিক না হলে শিক্ষা,আইন, প্রযুক্তির ব্যবহার, সভা মিটিং এসব করে কোন লাভ হবে না। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ কাউছার উদ্দীন তামিম বলেন, ছেলে-মেয়ের প্রতি পরিবার থেকেই যদি বৈষম্য সৃষ্টি হয়। আমি যতই বড়ই হইনা কেন? যতই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হইনা কেন সে বৈষম্য আমার অন্তরে থেকে যাবে। পরিবারে যেন সে বৈষম্য না হয় লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যদের দিকে না তাকিয়ে প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিজেকে পরির্বতন করে নিজের পরিবার আশে পাশে পরিবর্তন করার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সিভয়েস সম্পাদক এম নাসিরুল হক তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন,নারীর ক্ষমতায়নে নারীরা অনেকদূর এগিয়ে আসছে। সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। সরকারের সহযোগীতাও কম নেই। তবে মুদ্রার ওপিঠ দেখলে দেখা যায়, ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত হয়েছে। যেমন সুবর্ণচরে নৌকায় ভোট না দেওয়াতে ধর্ষণ মত ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ে মামলাও হচ্ছে আইনগভাবে। তবে মামলার ধীরগতিও হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের নেতারাও পক্ষপাত করছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে সকলের বক্তব্যের সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়