Cvoice24.com


কক্সবাজারে স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ১৪:২২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
কক্সবাজারে স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা

সিভয়েস

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ সবরকম সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যেও রোহিঙ্গারা প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছাড়ার জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তাদের মধ্যে কেউ দালালের মাধ্যমে, কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে, কেউ গাড়ী চালকদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। এদিকে রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্প ছেড়ে যেতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে প্রশাসন।

পুলিশের দেওয়া তথ্য জানা যায়, পুলিশের ৭টি চেকপোষ্ট ছাড়াও বিজিবি এবং র‌্যাবের চেকপোষ্ট রয়েছে। গত ১৭ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আটকের পর ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের সহযোগিতা করায় ৫ শ’র বেশি দালালকে আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও ক্যাম্পের চারপাশে সীমানা বা কাটাতারের বেড়া না থাকায় তাদের রোধ করা যাচ্ছেনা। কেউ দালালের মাধ্যমে, আবার কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে সড়ক বা গ্রামীন সড়ক অথবা নৌ পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের স্থানীয়দের মাঝে মিশে যাওয়াকে বড় ধরণের হুমকি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জনগণ।

স্থানীয় যুবক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মানবিক কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। ক্যাম্পের মধ্যে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা ওখানে না থেকে শহরের দিকে চলে আসার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলাবাসি। তারা মাদক পাচার, পতিতাবৃত্তি, ছিনতাই সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এতে করে এই সমাজের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। তাই তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখতে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।

সাংস্কৃতিক কর্মী মরিয়ম আক্তার নুপুর জানান, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্টির সংস্কৃতি এবং আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তারা আমাদের সমাজের সাথে মিশে যাওয়ায় বাঙ্গালী সংস্কৃতির ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়া বন্ধ করতে হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নুরুল আবছার জানান, দালাল সহ বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গাড়ি চালকেরা টাকার বিনিময়ে নানা কৌশলে তাদের বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নৌপথে মালয়েশিয়া সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচারকরা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।  

উখিয়া চেক পোষ্টের দ্বায়িত্বরত অফিসার মো: কামাল হোসেন জাানান, ক্যাম্প ছেড়ে নানা কৌশলে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রায় প্রতিদিনই আটক হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের পুনরায় ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থলে কাটা তাঁরের বেড়া দেওয়া না হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রেনে রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে আশ্রয়ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য ৭টি চেকপোস্টে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। 

এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় ভাষা, আচার-আচরণের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নিজেদের স্থানীয়দের মত করে তৈরী করে নিচ্ছে। আর এই বিষয়টাকেই পুজি করে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। প্রশাসনের কাছে সচেতন মহলের দাবী রোহিঙ্গারা যেন কোনভাবেই স্থানীয়দের সাথে মিশে যেতে না পারে।

মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। সাড়ে ছয় হাজার একরেরও বেশি বনভূমির উজাড় করে নির্মাণ করা ৩২টি ক্যাম্পে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। 

সিভয়েস/এএস

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়