Cvoice24.com


বাঁশখালিতে জালিয়াতি করে পরিবার পরিকল্পনায় চাকরি!

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
বাঁশখালিতে জালিয়াতি করে পরিবার পরিকল্পনায় চাকরি!

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা ১/ক ইউনিটের পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে জালিয়াতি করে একজনের চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিজের স্থায়ী ঠিকানা গোপন ও ইউনিয়ন পরিষদের সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নিয়েছে সুফিয়া বেগম নামের এক প্রার্থী। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী সুফিয়া বেগমের নিয়োগ বাতিল করতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ ও আবেদন দাখিল করেছেন স্থানীয় একজন ব্যক্তি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভিন্ন ভিন্ন পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

বিজ্ঞপ্তিতে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের ১/ক ইউনিটের একজন মহিলা নিয়োগের উদ্দেশ্যে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয় এবং সেই বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ইউনিটের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু গত নভেম্বর মাসে সেই পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত সুফিয়া বেগম, পিতা- দেলোয়ার হোসেন, রোল নং- ১৭৩৭৯৫৬৫ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়। সে শেখেরখীল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। যা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়ামানুযায়ী পুরোপুরি অবৈধ।

বাঁশখালী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস জানায়, শেখেরখীলের ১,২,৩ নং ওয়ার্ড মিলে পরিবার পরিকল্পনার ১/ক ইউনিট গঠিত। এই তিন ওয়ার্ডের বাইরে এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, এই পদটিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটে আরো দুইজন প্রার্থী ভাইভা দিলেও ভিন্ন ওয়ার্ডের একজনকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা অন্য দুই প্রার্থীর প্রতি সুস্পষ্ট অবিচার। এজন্য জেলা প্রশাসক যাতে তদন্ত করে জালিয়াতকারি প্রার্থীর বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় তার জন্য আবেদন করেছি।

জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী কিভাবে নিয়োগ পেয়েছে জানতে চেয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রশাসন ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিটের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কারো নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট জেলার নিয়োগ কমিটির প্রধান তাই তিনি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলেও জানানো হয়।

এদিকে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এমন জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে।

তারা জানান, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কিছু কর্মকর্তা আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এবং স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগ দুর্নীতি করেছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় সুফিয়া বেগমের সাথে। তিনি সিভয়েসকে জানান, আমি আবেদনের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেছি। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ার্ডের বিষয়টিতে ১/ক (অথবা) থাকাতে আমি আবদনের বিষয়টি ভালভাবে বুঝতে পারিনি। সে অনুযায়ী পরীক্ষা দিলাম, এখন চাকরিও করছি। আর এটা যে স্থায়ী চাকরি হবে, সে ব্যাপারেও জানতাম না। আমার ব্যাপারে এক আপু তদন্ত করতে এসেছিলেন, তখন উনাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি।

এসব বিষয়ে জানতে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ পরিচালক ডা. উ খ্যে উইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকি। নিয়োগ নিয়ে কোন অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অফিস সময়ে যোগাযোগ করলে আমি বিস্তারিত জানাতে পারবো। যদি কোন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে এই কাজের সাথে যুক্ত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও নিয়োগ কমিটির প্রধান মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন সিভয়েসকে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে পরীক্ষা নেয়া। তবে এই মুহূর্তে অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

তিনি বলেন, তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারবেন উপ পরিচালক মহোদয়। উনারাই এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যদি এতে আমার সহযোগিতা চায় তাহলে আমি সহযোগিতা করবো।

-সিভয়েস/এসএ

মনিরুল ইসলাম মুন্না ও মুহাম্মদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়