Cvoice24.com


‘খুব অন্যায় হয়েছে, এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি’

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
‘খুব অন্যায় হয়েছে, এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি’

দৈনিক মানবকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু বকর চৌধুরী।

কেন এভাবে চলে গেলেন? খুব, খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি মানতে পারছি না!!!! আবু বকর চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক মানবকণ্ঠ) এমন তো কথা ছিল না। এভাবে চলে গেলেন কেন? আমি দেশে আসব, আপনার সাথে দেখা হবে, কথা হবে- এমনটি আশা করছিলাম। 

সেই মফস্বলের অজোপাড়া গাঁ থেকে আপনিই তো তুলে এনেছিলেন। মফস্বল এলাকার প্রতিনিধি থেকে স্টাফ রিপোর্টার করে সাংবাদিকমনা ছেলেটিকে সাংবাদিক বানিয়েছিলেন আপনি। স্টাফ রিপোর্টার থেকে আমাকে চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের ভারপ্রাপ্ত ব্যুরো প্রধান করেছিলেন। সবসময় বলতেন, আমি যতদিন মানবকণ্ঠে থাকবো, ততদিন তুমি থাকবে। কোন দিন আপনাকে এক কাপ চা খাওয়ানোর সৌভাগ্যও আমার হয়নি। বরং অফিসে গেলে আপনার আপ্যায়নে তুষ্ট হতাম। কেন? কোন কারণে ভালোবাসতেন জানি না। 

অফিসের কোন ব্যাপারে অভিযোগ করলে বলতেন, তোমার কি সমস্যা? সেটা বলো। অন্য কোন বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। এটা অফিস বুঝবে, তোমার চাকরির কোন সমস্যা হলে বলো, সে ব্যাপারে আমি বলবো। আমার ব্যাপারে মালিক পক্ষের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করতেন। আপনার হাত ধরে শুরু থেকে আমার পথচলা। 

কানাডায় আসার পর একবার ফোনে কথা হয়েছিল। বলেছিলেন, যা সিদ্ধান্ত নিয়েছ, নিছ, এবার জীবনটাকে গুছিয়ে নাও। আমার যে কোন ভুলকে আপনি ভুল মনে করতেন না। আপনার কাছে আমার সাত খুন মাফ ছিল। নি:সন্তান ছিলেন বলে আমাকে বলতেন তোমাকে আমার সন্তানের মত মনে করি। সেই দিনটার কথা এখনো মনে পড়ে, আপনার ঢাকার বাসায় ১ম যেদিন গেলাম, ভাবির হাতে হরেক রকম নাস্তা খেলাম। নাস্তার টেবিলে ভাবিকে বললেন, সে আমার খুব প্রিয়, তাকে ভাল করে নাস্তা দাও। সেই স্মৃতি কখনো ভুলার নই। 

আমার সাংবাদিকতা জীবনে আপনার মত মাটির মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। আপনি ছিলেন, সাংবাদিতা জগতের সততার স্তম্ভ। বাসা আর মানবকণ্ঠ অফিস ছিল আপনার পুরো একটা জগত। সবাই বলতো, এ মানুষটা অফিস আর বাসা ছাড়া আর কোথাও বেরও হয় না। আমিও বলতাম, বকর ভাই, এভাবে তো জীবন চলতে পারে না। ভাবিকে নিয়ে কয়েক দিনের জন্য চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন। এটা বললেই, এমন একটা হাসি দিতেন। বলতো, এ আর কি। কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। কেমন জানি কোন একটা জায়গায় অপূর্ণতায় থাকতেন আপনি। সেই অপূর্ণতা নিয়েই চলে গেলেন।  

আজকে কানাডার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আনিস আলমগীর ভাইয়ের ফেসবুক টাইমলাইনে আপনার মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমার হাত-পা যেন অবস হয়ে গেল। যেখানে বসে ছিলাম, সেখাইনেই স্তব্দ হয়ে বসে থাকলাম। এটা কি শুনলাম। বকর ভাই আরেকবার কথা বলার সুযোগ দিলেন না কেন।

বলেছিলাম, কোনদিন, কোন সময় প্রয়োজন মনে করলে আমাকে বলবেন, কই বললেন না তো, আপনি অসুস্থ। কেন বকর ভাই এমন করলেন, কেন? আমি তো মানতে পারছি না। হে আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও। আমার বাবা-মার পর যাকে আমি সবচাইতে বেশি ভালবাসতাম, সেই মানুষটা চলে গেল। হে আল্লাহ, আমার বকর ভাইকে বেহেস্ত নসীব করুণ। তার সমস্ত গুণা মাফ করে দেন।

আমার ফেসবুক বন্ধুদের প্রতি আমার অনুরোধ, আমার প্রিয় বকর ভাইয়ের জন্য আপনারা একটু দোয়া করুন। আমি আপনাদের কাছ থেকে এটা চাইবো। বকর ভাই, বকর ভাই, চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে করছে, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, ওপারে ভাল থেকো, ওপারে ভাল থেকো। খুব অন্যায় হয়েছে, এভাবে হঠাৎ করে চলে যাওয়া।  আবারও বলছি হে আল্লাহ, আমার বকর ভাইকে জান্নাতবাসী করুন।

(সাংবাদিক মফিজুল ইসলাম চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেওয়া)

-সিভয়েস/এসএইচ

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়