Cvoice24.com


কোর্ট হিল যেন ছোটখাটো বাজার!

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮
কোর্ট হিল যেন ছোটখাটো বাজার!

ছবি : সিভয়েস

ব্যস্ততার আখড়া হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের কোর্ট হিল। সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমেজ থাকলেও উঠার এবং নামার পথে রাস্তা দখলে নিয়েছে হকাররা। এখানে প্রতিনিয়ত চলছে নানা প্রকার ফলমূল, শাকসবজি, কবিরাজী ঔষধ, শুঁটকি, গামছা লুঙ্গিসহ হরেক রকম পণ্যের বিকিকিনি। 

এক সময় কোলাহোলমুক্ত মনোরম পরিবেশে আদালত এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম চললেও দিন দিন হারিয়ে ফেলছে সেই ঐতিহ্য। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে  ভিড় জমান কোর্ট হিলে। কেউ আসেন বিচারের কাজে, আবার কেউ আসেন প্রশাসনিক কাজে। কিন্তু কোর্ট হিলে উঠার আর নামার পথে আগতদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

শাহিন সোলতানা প্রতিমাসে একবার হাজিরা দিতে আসেন আদালতে। তিনি বলেন, গাড়ি দিয়ে যখন আদালতে আসি উঠতে কমপক্ষে আধঘণ্টা লাগে। আশেপাশে হকার বসার কারণে যানজট লেগেই থাকে। এ বিরক্তির কারণে অনেক সময় পায়ে হেঁটে উপরে উঠতে হয়।

রেজিস্ট্রেশন অফিসে আসা নুরুল আলম জানান, দুইদিক থেকে উঠতে এ সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। এ রাস্তা দিয়ে তো প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তাগণ প্রতিদিন যাতায়াত করেন, উনারা কি এসব দেখেন না? আমরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ি তেমনি উনারাও তো ভোগান্তির শিকার হন। তাহলে কেন উনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? আমি উনাদের অনুরোধ করবো এ রাস্তাগুলো যেন দখলমুক্ত রাখা হয়।

ফারুক নামে এক শিক্ষক জানান, আমরা নিজেরা সচেতন হতে না পারার কারণে এ অবস্থার শিকার হচ্ছি। এখানে আইনজীবী, ম্যাজিস্ট্রেট এবং ব্যারিস্টাররা থাকেন। অনেক সময় দেখি আইনজীবীর মোটর সাইকেলও রাস্তার পাশে রেখে রাস্তা সংকীর্ণ করে রাখেন।

তবে দোকানদারদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা দুই পয়সা রোজগারের জন্য এখানে ছোট দোকান নিয়ে বসি। সকালে আসলে বিকেলে চলে যাই। মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট আসলে উঠে যাই, পরে উনারা চলে গেলে আবার বসি। কি আর করবো বলেন, সংসার তো চালাতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় যত্রতত্র পার্কিং, উল্টোপথে গাড়ি চালানোর দায়ে ২৩ এবং ২৪ অক্টোবর ৩১ জনকে মামলা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট। প্রাথমিকভাবে সতর্কতামূলক একশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হয়। এতে ছাড় পায়নি আইনজীবী, সাংবাদিকসহ হর্তা কর্তাও।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, কোর্ট সড়কের রাস্তা দখল করে পার্কিং করা এবং উল্টো পথ দিয়ে গাড়ি চালানোর দায়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছি। মোবাইল কোর্ট চালনাকালে রাস্তায় অবৈধ পার্কিং, উল্টোপথে গাড়ি আসা আটকানো এবং হকারদের উচ্ছেদ করে দিই। সে সাথে তাদেরকে সতর্কও করে দিই।

রাস্তা দখলের ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে দোকানপাট বসা নিষিদ্ধ। এখন যে দোকানগুলো দেখেন সেগুলো ভ্রাম্যমান দোকান, কিছুক্ষণ থাকে আবার চলে যায়। আমরা প্রতিনিয়ত দারোয়ানদের বলে রেখেছি রাস্তা দখল করে কোন হকার বা গাড়ি পার্ক করা যাবে না। দেখামাত্রই তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রেখেছি। 

আইনজীবীরা রাস্তায় অবৈধ পার্কিং কেন করেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। এখানে রাস্তায় কোনভাবে পার্কিং করতে পারবে না। যদি কোন আইনজীবী এমন কাজ করে অভিযোগ পাই তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম কোর্ট হিলে চট্টগ্রাম আদালত ভবন, বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হওয়ার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন। সেবা নিতে এসে যদি কেউ ভোগান্তির শিকার না হয় সেজন্য আমরা কোর্ট হিলে উঠার পথে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হকারদের উচ্ছেদ করে দিচ্ছি। যদিও তারা পুনরায় ভ্রাম্যমাণ দোকান খুলে বসে। তবুও আমরা তাদের বুঝিয়ে অন্যত্র সরে যেতে বলে দিই। তার পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সামান্য জরিমানা করে সতর্ক করে দিয়ে আসছি। আশা করি শীঘ্রই কোর্ট হিল থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো অপসারণ করা সম্ভব হবে।

-সিভয়েস/এসএ/এমইউ

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়