Cvoice24.com


এমন একটি দিনের অপেক্ষায় ছিলাম...

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৬ অক্টোবর ২০১৮
এমন একটি দিনের অপেক্ষায় ছিলাম...

সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুধাবন করে অসাধারণ মানুষরা অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অনেকে নিজের চাহিদার পূরণেও অনেক কিছু করেন। তবে দেশ, জাতি ও সামাজিক দায়বদ্ধ মানুষগুলো সাধারণ মানুষের কথা বেশি ভাবেন। বেশি চিন্তা করেন। তাইতো অসাধারণ মানুষগুলোর অনেক উদ্যোগে উপকৃত হয় লক্ষ, কোটি মানুষ। এমনি একটি চাহিদা ছিল চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের।

যখন তামাম দুনিয়া অনলাইন সাংবাদিকতায় ভাসছে। সেই সময়ের দশ বছর পরও দেশের বৃহত্তর গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলে সমৃদ্ধ কোন অনলাইন গণমাধ্যম ছিল না। সাধারণ মানুষের চিন্তাটা কোন অসাধারণ মানুষ চিন্তাও করেননি। তবে আমি অসাধারণ কেউ না হলেও বিষয়টা ২০১৮ সালের প্রথম দিক থেকে আমার মাথায় প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খাচ্ছিল। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করলাম। তারাও বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম তথা দেশের তরুণ সমাজের আইকন, তরুণ উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।

অনলাইন পোর্টাল করার আমার দেয়া প্রস্তাবটি তিনি ফিরিয়ে দেননি। নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের উৎসাহ নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করলাম।

আজ শুরুর গল্পটা বলতে চাই। নিয়াজ মোর্শেদ এলিট যখন আমাকে বললেন, ‘অনলাইন পোর্টাল করতে হলে তোমাকে তারুণ্যের সমন্বয় ঘটাতে হবে’।

তারুণ্যের প্রতি তাঁর এত আস্থা দেখে আমি অবাই হই। তাই চিন্তা করলাম, ২/৩ জন তরুণ সাংবাদিক বেছে নিব। ওই সময়টাতে আমি মানবকণ্ঠে কাজ করার সুবাধে পূর্বদেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ওয়াসিম আহমেদ ও আলোকিত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার কে এম জাহেদ আমার সাথে বেশ যোগাযোগ রাখতো। কোন এক সময় তাদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম। তারা বললো, আপনি পারবেন, আমরা আপনার সাথে আছি। সাথে নিলাম দুইজনকে। তাদের পরামর্শে আমাদের সাথে যোগ হলো আরেক তরুণ মনিরুল ইসলাম মুন্না। সে তখন সিপ্লাস এ কাজ করতো। তার সাথে কথা বলে তাকেও নিলাম। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে ৪ জন মিলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সাথে মিটিং করলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে তারুণ্যে ভরপুর, তোমরাই পারবে। কাজ শুরু করো। তিনি পোর্টালের নাম ঠিক করতেও বললেন।

আমরা ৪ জনে প্রায় ১৫/২০ টা নাম দিলাম। এরমধ্যে ওয়াসিমের দেয়া নাম সিভয়েস টুয়েন্টিফোর ডটকম নামটি সিলেক্ট করলাম। শুরু হলো সাইট নির্মাণের কাজ। আমরা চারজন রাতদিন পরিশ্রম করে সাইট নির্মাণের কাজ শেষ করলাম। এবার অফিস নির্ধারণের বিষয় আসলো। প্রথমে নগরীর কদমতলী এলাকায় একটি অফিস নির্ধারণ করলেও পরবর্তীতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, খুলশী ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া বাবুলের হাতে গড়া একটি তৈরি অফিসের সন্ধান দিল এলিট ভাই। তারপর রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া বাবুলের সাথে মিটিং করলাম। উনিও রাজি হয়ে গেলেন। এরপর থেকে ওই অফিস থেকেই আমাদের কার্যক্রম শুরু। আমরা চারজনই চারটি হাউজে কাজ করতাম। নিজেদের অফিসের কার্যক্রম শেষ করে রাত ২/৩টা পর্যন্ত সময় দিয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সারতাম। মার্চের শেষের দিকে প্রায় প্রস্তুতি শেষ। এবার মূল কার্যক্রম শুরু করার পালা।

এবার মূল গল্পের শুরু। কে সম্পাদক হবেন, কাকে দিয়ে কার্যক্রম শুরু করবো, তা নিয়ে এলিট ভাইয়ের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। আমার উপর ও আমার সহযোগীদের উপর ভরসা করেই তিনি কাজ শুরু করে দিলেন। কিন্তু আমার মাথা ব্যাথা ছিল। উনি আমার উপর ভরসা করলেও আমার চিন্তা ছিল বৃহত্তর কিছু করা, ভাল কিছু করে শুরু করা।

চট্টগ্রামে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমি তেমন একটা সাংবাদিকদের সাথে মিশতাম না। তবে অহংকার করে নয়। আমি আসলে সমসময় নিজেকে কাজের মধ্যে রাখতে চাইতাম। তবে তরুণ কয়েকজন সহকর্মীদের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ রাখতাম। এরমধ্যে বাংলা ট্রিউবিনের হুমায়ুন মাসুদ একজন। তার সাথে আলাপ করলাম। পোর্টালতো করে ফেললাম, সম্পাদক করা যায় কাকে? সে বলল, সুপ্রভাত বাংলাদেশের সাবেক নগর সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক এম নাসিরুল হককে বলে দেখতে পারেন। তার পরামর্শক্রমে এম নাসিরুল হকের সাথে আলাপ করেন নিয়াজ মোর্শেদ এলিট ভাই। তিনিও রাজি হলেন। তার সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করার মনস্থির করলাম। এরপর সম্পাদনা ও রিপোর্টিং বিভাগ সাজানো কাজে হাত দিলাম। পরিকল্পনা সম্পাদক হিসেবে নিলাম চ্যানেল টোয়েন্টিফোর'র সাবেক সংবাদ উপস্থাপক হিমাদ্রি রাহাকে। এরপর রিপোর্টিং বিভাগে যোগদান করলেন আমাদের সময়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যুরো প্রধান আশরাফ আহমেদ, সকালের খবরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যুরো প্রধান সরোজ আহমেদ, পূর্বদেশের সাবেক স্টাফ রিপোর্টার আবদুস সাত্তার, শাহদাত চৌধুরী, নাজমুল হাসান, ইমরান এমি, মিনহাজুল ইসলাম। একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মীদের নিয়ে সাজানো হলো রিপোর্টিং বিভাগ।

পরবর্তীতে রিপোর্টিং বিভাগে যুক্ত হলেন শুরুর দিকের সহযোগী কে এম জাহেদ, ওয়াসিম আহমেদ ও মনিরুল ইসলাম মুন্না। এবার সাজানোর কাজ নিলাম সম্পাদনা বিভাগকে। এ বিভাগে যোগ দিলেন দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সাবেক সহ-সম্পাদক রাজীব চক্রবর্তী, পূর্বদেশের সহ-সম্পাদক এহসানুল হক। ফটো সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করলেন আমার দেশের সাবেক ফটো সাংবাদিক মিনহাজ উদ্দিন ও তরুণ ফটো সাংবাদিক আজিম অনন।

বাবুই পাখির মত আস্তে আস্তে ঘর বুনার কাজ শেষ করলাম। চেষ্টা করেছি ভাল একটি টিম সাজাতে। এ কাজটি করতে গিয়ে অনেকে বলেছে, এত বড় বহর নিয়ে শুরু করলেও টিকবে না বেশি দিন। তারপরও আমি মনোবল হারাইনি। উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করলাম। সেই মহেন্দ্রক্ষণটি ছিল ১১ এপ্রিল। এরপর বেশ ঘটা করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ অনলাইন পোর্টালের যাত্রা শুরু হলো। শুরু থেকেই বেশ আলোচনায় উঠে আসে সিভয়েস।

জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, নবীন প্রবীণের সংমিশ্রণ, শুরু থেকেই অসীম সাহসের সঙ্গে সত্য তুলে ধরা, সবমিলিয়ে চতুর্দিকে সিভয়েসের জয়জয়কার। উদ্বোধনের মাত্র চারদিনের মাথায় চট্টগ্রামভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টালের মধ্যে ৭ম স্থানে উঠে আসে সিভয়েস। শুরুতেই এক ছাত্রনেতার এলাহী কাণ্ডের সংবাদ, ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের প্রতিবাদ, পহেলা বৈশাখ নিয়ে ভিন্নধর্মী কার্যক্রম ও সংবাদ পরিবেশন, নগর উন্নয়ন, রাজনীতির সর্বশেষ খবর, এক সংসদ সদস্যের অনিয়ম দুর্নীতি ও অপ্রীতিকর কাণ্ডের সংবাদ, সাতকানিয়া ট্র্যাজেডির সংবাদ, সেহেরি নিয়ে বেহায়াপনার সংবাদ, তাসফিয়ার মৃত্যু রহস্য নিয়ে তরতাজা খবর, চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে বাচ্চা চুরির ঘটনা সবার আগে পরিবেশন, কক্সবাজারে সুঁই ফুটিয়ে শিশু মেরে ফেলার ঘটনার সংবাদ প্রকাশ, মাদকবিরোধী অভিযানের সর্বশেষ খবর, বোয়ালখালীর সমর চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ, রাইফা হত্যার আদি অন্ত তুলে ধরা, পেকুয়ায় ৭ জেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন, মাথা ন্যাড়া করে ধর্মবিরোধী বক্তব্য আদায়সহ সবদিকের সবখবর সবার আগে প্রকাশ করে মাত্র ৬ মাসের মাথায় চট্টগ্রামের অনলাইন পোর্টালের মধ্যে ১ম স্থানে উঠে আসে সিভয়েস।

গত কয়েক দিনে চট্টগ্রামের সব অনলাইন পোর্টাল-এর মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে এই নিউজ পোর্টাল। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো।

পোর্টালের কার্যক্রম শুরুর করার সময় আমি এলিট ভাইকে বলেছিলাম, ভাই দেখবেন সিভয়েস একদিন সবার সেরা হবে। এখন না বললেও একদিন গর্ব করে বলতে পারবেন, এটা আপনার পোর্টাল।  আসলেই আমি এ দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম।

পরিশেষে প্রিয় পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের কথা দিচ্ছি,  আপনারা আমাদের সাথে থাকুন। আমরা আপনাদের সাথে থাকবো সবসময়।

লেখক-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সিভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকম

সিভয়েস/এসএ/এসএইচ

মফিজুল ইসলাম চৌধুরী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়