Cvoice24.com


দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের সহনশীল হতে হবে (ভিডিও সহ)

প্রকাশিত: ১৩:০০, ৫ অক্টোবর ২০১৮
দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের সহনশীল হতে হবে (ভিডিও সহ)

ছবি: ব্যারিস্টার মীর হেলাল

ব্যারিস্টার মীর হেলাল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নিজের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতোমধ্যে রাজনীতিতে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। তাঁর আরেকটি বড় পরিচয় হলো তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের সন্তান। বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় সেক্ষেত্রে নিজ আসন চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী, বায়েজিদ) থেকে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত তরুণ এই রাজনীতিবিদের। কেমন হবে তাঁর নির্বাচনী ভাবনা, কেনই বা এলেন রাজনীতিতে, কিংবা কেমন হবে বিএনপির নির্বাচনী হালচাল! এসব কিছু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সিভয়েসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিমাদ্রী রাহা।

সিভয়েস- আপনি রাজনীতিতে কেন আসলেন?

মীর হেলাল- আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনি যদি দেখেন রাজনীতিতে তরুণরাই এগিয়ে। যেমন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেন, এরা সবাই নবীন। সে হিসেবে বাংলাদেশেও তরুণরা রাজনীতিতে এগিয়ে আসছেন। এটা আমাদের যারা সিনিয়র আছেন, আমাদের যারা পথ প্রদর্শক আছেন উনাদের দেখেই আসলে আমাদের শেখা। উনাদের দেখানো পথেই রাজনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছি। যাতে দেশের সেবায়, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায়। ৯১ সালের দিকে যখন আমার বাবা চট্টগ্রামের মেয়র হলো, যখন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলো, তখন আমি বয়সে অনেক ছোট। তখন একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করলাম, বাবা সবসময় মানুষের কাছাকাছি থাকতো। বিশেষ করে মেয়র হওয়ার পর মানুষকে সেবা করার আঙ্গিকটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসম্পৃক্ততা আরো বিস্তৃত হয়েছে। তখন থেকেই মানুষের কাছে থাকা ও মানুষের সেবা করার তাগিদ থেকেই এই প্ল্যাটফর্মটা বেছে নেওয়া। রাজনীতির মাধ্যমে একই সাথে দেশের জন্য কাজ করা যায় ও মানুষের সেবা করা যায়। আমার বাবা যখন ২০০৫ সালে মেয়র নির্বাচন করেন, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডে আমার ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছে। ওই সময় থেকেই মূলতঃ মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে হাতেখড়ি আমার। এছাড়া ২০০৪ সালে আমি যখন ডিগ্রি শেষ করে আসলাম, তখন থেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। সেই থেকে আমার রাজনীতির শুরু।

সিভয়েস- দলে তরুণদের অগ্রাধিকার কেমন?

মীর হেলাল- দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন এবারের কমিটি গঠন করলো তখন উনার চিন্তা ছিলো, আমাদের যারা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ছিলো তারা যেন একঝাঁক নবীণ কর্মীকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে। আর সে লক্ষ্যে এবারের কমিটিতে খেয়াল করলে দেখবেন বেশ কিছু তরুণ তরুণীকে দলে স্থান দেয়া হয়েছে। যাতে করে তারুণ্যনির্ভর রাজনীতি দেশে আরও প্রসারিত হয়। তো সে হিসেবে আমাদের উপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা আমরা পালন করার চেষ্টা করছি। আমি কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার পাশাপাশি সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বও অনেকদিন ধরেই পালন করছি। বলা যায়, তারুণ্যনির্ভর রাজনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই।

সিভয়েস- বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা?

মীর হেলাল- বিএনপি সবসময় নির্বাচনমুখী দল এবং আমাদের জনসমর্থন কেমন আছে তা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায়। কিন্তু একথাও সত্যি যে, যেকোন নির্বাচনে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগে। মানুষের চোখে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া লাগে। সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র যদি প্রস্তুত হয় তবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অবশ্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে। এখন সরকাররেই দায়িত্ব এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে একটি সুস্থ সুন্দর নির্বাচনের আয়োজন করা।

সিভয়েস- দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কেমন আশাবাদী?

মীর হেলাল- একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বলেন, একজন তরুণ হিসেবে বলেন, আমার কথা হলো দেশের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে। রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতেই পারে। কিন্তু সবার উপরে দেশ। এই চিন্তা মাথায় রেখেই রাজনীতি করা উচিত। আমি দেশের বাইরে পড়ালেখা করেছি। চাইলে সেখানে স্থায়ী হতে পারতাম। কিন্তু আমি দেশে ফিরে এসেছি। দেশকে ভালোবেসে, দেশের মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতিতে নেমেছি। এদেশের রাজনীতি নিয়ে আমি আশাবাদী। 

সিভয়েস- আপনি তো হাটহাজারী থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তো কেমন আশাবাদী আপনার আসন নিয়ে?

মীর হেলাল- যেকোন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে যাচাই করার একটাই সুযোগ থাকে আর তা হলো নির্বাচন। সে হিসেবে আমিও ব্যতিক্রম না। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে নির্বাচন করবো। আমার নির্বাচনী এলাকা অর্থাৎ চট্টগ্রাম-৫ সংসদীয় আসন (হাটহাজারী ও বায়েজিদ আংশিক) অনেকদিন ধরেই অবহেলিত। বলা যায়, নিগৃহীত নিষ্পেষিত। তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমার কিছু চিন্তাধারা আছে। তা হলো, আগে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। যেমন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা এসবের উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়ক এবং ব্রিজ কালভার্টগুলো চলাচলের উপযোগী করে তোলা, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতটি খুবই নাজুক। হাটহাজারীতে সামান্য কিছু হলেও আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসতে হয়। তাই এই খাতে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে। তাছাড়া বেকারদের টেকনিক্যাল কাজে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া, যাতে করে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারে। এছাড়া এবার হাটহাজারীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এলাকার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিনাতিপাত করেছেন। অথচ হালদায় বাঁধ কিংবা পাহাড়ী ঢলের পানিপ্রবাহের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এটা ঠেকানো যেতো। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় অত্র এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তিনি কোনভাবেই এই দায় এড়াতে পারেন না। তাই আমার এই সেক্টর নিয়ে ব্যাপক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।  আরেকটি কথা, দেখুন দেশের বর্তমানে সার্বিক যে অবস্থা এতে সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়। যখন বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় ছিলো দুই দফায় আমার বাবা সেই এলাকার জনপ্রতিনিধি ছিলেন। মন্ত্রী ছিলেন। সেসময় এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এলাকার মানুষের বিএনপির প্রতি একটা সফট ফিলিংস আছে। তো সেই সূত্রে বলতে পারি, আমি আমার আসন নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী।

সিভয়েস- বিএনপি প্রায় বলে থাকে দেশে গণতন্ত্র নেই। এর কারণটা কি?

মীর হেলাল-  আসলে দেশে গণতন্ত্র নেই এই কথা মনে করার অনেক কারণ আছে। দেখুন সম্প্রতি দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দেলন করলো শিক্ষার্থীরা এটা কোন সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিলো না। এটা হলো একটা বেসিক রাইট। আমি নিরাপদে সড়কে চলাচল করবো, আমার দুইজন সতীর্থ মারা গেলো এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করলো আর সরকার এটিকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করলো তাতেই প্রমাণ হয় সরকার জনবিচ্ছিন্ন। এই আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে কোনরকম সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। এই আন্দোলন ছিলো আমার আপনার ষোল কোটি বাঙালির নিরাপদে চলাচলের অধিকার আদায়ের জন্য। সরকার ওদের সহযোগিতা না করে উল্টো এতো বাজেভাবে নিয়ন্ত্রণ করলো, যার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই হতাহত হয়েছে। আসলে সরকার যখন জনবিচ্ছিন্ন হয় তখন আর জনগণের দুঃখ বুঝতে পারেনা। এটাতো শুধুমাত্র একটা উদাহরণ দিলাম। এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলন বলেন কিংবা যৌক্তিক দাবিতে যখনই কেউ আন্দোলনে নামে সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করে। আর এজন্য সরকার আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আপনি যখন একটি দেশের জাতির কন্ঠরোধ করতে চাইবেন তখন জনবিস্ফোরণ হবেই। এটাই স্বাভাবিক। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে যে ইলেকশান হয়েছে তা আসলে ইলেকশান নয়। এটা ছিলো সিলেকশান। সেই নির্বাচনের পর আসলে দেশে গণতন্ত্র বলে কিছুই নেই। যেখানে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয় সেখানে গণতন্ত্র থাকে কি করে?
 
সিভয়েস- আপনি কি মনে করেন বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবে?

মীর হেলাল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা খুবই সহজ। তবে আমাদের সহনশীল হতে হবে। আমাদের এটা বুঝতে হবে আগে দেশের স্বার্থ। তারপর দলীয় স্বার্থ। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা যদি মনে ধারণ করা যায় তো দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নব্বইয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো। এটা প্রমাণ করে বাংলাদেশ গণতন্ত্র প্রিয় জাতি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরত আসতে বাধ্য।

সিভয়েস- আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

মীর হেলাল- আপনাকে ও সিভয়েস’এর সকল পাঠককে ধন্যবাদ।

সিভয়েস/এসএ/এমডিকে

হিমাদ্রী রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়