Cvoice24.com

চলছে শেষ মুহূর্তের টুকিটাকি 
বদলে যাওয়া জাম্বুরি মাঠ (ভিডিও সহ)

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বদলে যাওয়া জাম্বুরি মাঠ (ভিডিও সহ)

ছবি : আজীম অনন

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে নব নির্মিত পার্কের কার্যক্রম প্রায়ই ৯৫ শতাংশই শেষ। এখন চলছে পরিস্কার, পরিচ্ছন্নতা এবং পরিচর্যার কাজ। আগামী শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) হবে উদ্বোধন। 

সরেজমিনে জাম্বুরি পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে একা, আবার অনেকে দল বেঁধে এসেছেন পার্কটি দেখতে। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন উপলক্ষে পার্কের মূল ফটক বন্ধ দেয়ায় কেউ পার্কে প্রবেশ করতে পারেননি। ফলে নিরাশ হয়ে সবাইকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। 

মির্জা হাশেম নামে সিজিএস কলোনির একব্যক্তি জানান, আমি একজন ডায়বেটিকস  রোগী। এ পার্কটি করার ফলে আমি নিয়মিত হাঁটতে পারি। এমনিতে জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। খুলে দেয়ার পর এটি আরও নান্দনিক হয়ে ওঠবে বলে মনে করছি।  

খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ জানায়, চট্টগ্রামে এরকম একটি পার্ক হয়েছে, যা আনন্দের বিষয়। ঢাকাতে যেমন রমনা পার্ক রয়েছে, তেমনি চট্টগ্রামেও একটি পার্কের প্রয়োজন ছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও পার্কটি নির্মাণের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

আগ্রাবাদ বেপারি পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশরাফ বলেন, এ পার্কটি নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামবাসী আরো একটি নান্দনিকতার ছোঁয়া পেতে যাচ্ছে। আর পার্ক উন্মুক্ত হয়ে গেলে যাতে পরিবেশ ঠিক থাকে সেজন্যে প্রশাসনের নজরদারী রাখতে হবে। যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে সন্ত্রাস, ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। 

পার্কের ভেতরে দেখা যায়, মাঠকর্মীরা পার্কের ভেতর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে ব্যস্ত। আর এসব কাজের নির্দেশনা দিচ্ছেন চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর। 

তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। তবে স্থানীয় টোকাই এবং বখাটেদের নিয়ে বিপদ। ফাঁক পেলেই পার্কে ঢুকে ছোট চারা গাছ, লাইট নষ্ট করে। এদের অনুরোধ এবং বকা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।  

তিনি বলেন, ইতোপূর্বে তারা ৪০ থেকে ৫০ জন ছেলে পার্কে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা ঢুকতে না দেয়ায় মূল ফটকের উপরের বাতি ভেঙে ফেলেছে। এমনকি গেইটের তালা ভেঙে পার্কে প্রবেশ করে ফুটবল, ক্রিকেট খেলে পার্কের ছোট ছোট গাছগুলো নষ্ট করে ফেলছে। তাদেরকে আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি, এটা খেলার মাঠ নয়, পার্ক।   

নিরপাত্তার ক্ষেত্রে প্রস্তুতি কেমন প্রশ্ন করা হলে আহমেদ আব্দুল্লাহ নুর বলেন, পুরো মাঠের চারপাশে ছয়টি গেইট আছে। প্রতিটি গেইটে একজন করে তিন শিফটে আঠারো জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকে ৩জন পুলিশ তিন শিফট করে চব্বিশ ঘণ্টা অবস্থান করছেন। 

মাঠ পরিদর্শনে আসা চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ সিভয়েসকে বলেন, আমরা এ পার্কটিকে নান্দনিক পার্কে পরিণত করে তুলেছি। যাতে সবাই একটু প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে পারে। সাধারণ মানুষ যাতে সকাল বেলা হাঁটাহাঁটি করতে পারে সেজন্যে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। হাঁটাহাঁটির জন্য ওয়াকিং রোড, মিনি লেক, লেকের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার মাছ, প্রকৃতির ছোঁয়া লাগানোর জন্যে ৬৫ প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, এখন আমরা পার্কটি তৈরি করলাম জনসাধারণের জন্য। কিন্তু কেউ এসে গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেললো, কেউ এসে লেকের পানি নষ্ট করে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করে ফেললো তা তো হবেনা। আমরা পার্কে ঢুকার পর এবং বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক প্লেকার্ড, বিলবোর্ড ব্যবহার করবো তেমনি আপনারা (জনসাধারণ) সবাইকে সচেতন করবেন যাতে কেউ সুন্দর পার্কটির সৌন্দর্য হরণ না করে। যখন পার্কের গাছগুলো বড় হয়ে যাবে তখন আমাদের চিন্তা ৫০ ভাগ কমে যাবে। তখন শুধু আমরা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা এবং পার্কের সৌন্দর্য রক্ষার দিকে নজর দিবো। 

আইন অমান্যকারী বা বিশৃঙ্খলাকারীদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা উদ্বোধনের দিন থেকে সবাইকে নোটিশ করবো, যাতে তারা পার্কের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলে। আমরা ইতোমধ্যে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকেও জানিয়ে দিয়েছি। সেসাথে আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্সও থাকবে তারা বিষয়গুলো নজরদারী করবেন। 

সবকিছু দেখাশোনা করার জন্যে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একজন অভিভাবকও নির্ধারণ করে দিবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বহু শিক্ষায়তন, বিচারিক আদালত, সরকারি এবং বেসরকারি অবকাঠামো রয়েছে। কিন্তু আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কোন পার্ক নেই। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী চট্টগ্রাম পরিদর্শনকালে জাম্বুরি মাঠে একটি পার্ক নির্মাণের নির্দেশনা প্রদান করেন।তারই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত জাম্বুরি মাঠে একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন উদ্যান স্থাপনের অনুমোদন দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রায় ৮ দশমিক ৫৫ একরের জায়গার প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। 

সিভয়েস/এসএ/এমইউ

মনিরুল ইসলাম মুন্না 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়