Cvoice24.com

একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ১১ জুলাই ২০১৮
থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার

এক

প্রফেসার ইকবালের ঘুম ভাঙ্গে চাকর বাদশাহের এর ডাকে। গতরাতে আরাম কেদারাটায় নতুন গবেষণার বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে করতে নিজের অজান্তে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বুকের উপর নোট খাতায় বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন আঁকা। গত-কয়েক দিনে তার চিন্তা গুলোর একটা রূপ রেখা দেবার জন্যই এই সূত্র গুলো তিনি তৈরি করেছেন। ঘুম থেকে উঠার পরেও গত-রাতের চিন্তা গুলো আবার মাথার ভিতর জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
স্যার কি চা খাইবেন? লাল চা নাকি দুধ চা? বাদশহের এই জিজ্ঞাসাও প্রফেসার প্রথমে বুঝতে পারলেন না। মাথার ভিতরের চিন্তার জট গুলো না খুলা পর্যন্ত তার মাথা পুরোপুরি কাজ করবে না। কতক্ষণ একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে প্রফেসার পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আজ কি বার? বাদশাহের কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উত্তর দিল। রবিবার স্যার। আচ্ছা বাদশা তুমি কি স্বপ্ন দেখ? নিজের মাথা চুকলে সে উত্তর দেয়। জ্বি স্যার, দেখি। তয় সেই স্বপ্ন বড়ই বিচিত্র। কখনও দেখি, আমি ঘোড়ায় পিঠে চড়ে আকাশ দিয়ে উড়তাছি। আবার কখন দেখি আমি নিজেই উড়তাছি। আপনি জ্ঞানী মানুষ তাই আমি আপনারে আমার স্বপ্নের কথা বললাম। বাবুর মারে আমি আমার স্বপ্নে কথা বলি না। বললে সে আমারে পাগল ভাবতে পারে। স্যার স্বপ্ন আসলে জিনিসটা কি? বাদশা এই স্বপ্ন নিয়েই আমি গবেষণা করছি। স্বপ্ন অত্যান্ত রহস্যময় এক জগৎ। মানুষ কি স্বপ্ন দেখে তা জানলে, তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। মানুষের মনের সূক্ষ্ম চিন্তা গুলোই স্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। যেমন তোমার স্বপ্ন দেখার বিষয় থেকে আমি বুঝতে পারছি তুমি সাইকো-সিসের রোগী। এটা একটা মানসিক রোগ। এই রোগের মানুষ নিজেকে উড়তে দেখে। উঁচু স্থান থেকে পড়ে যেতে দেখে। অনেক সময় তাকে সাপে বা গরুতে তাড়া করতেও দেখে। স্যার এই গুলো আপনি কি কইতাছেন? তার মানে আমিও মানসিক রুগী? আমি কি তাইলে পাগল হইয়া যামু? আমার বাবুর মার তখন কি হইবো? স্যার আমারে তহন কি পাবনা পাঠাইয়া দিবেন? আরে তুমি এসব কি বলছ? তোমাকে আমি বিষয়টিই বোঝাতে পারছি না। মানুষ যা স্বপ্ন দেখে তার নব্বই শতাংশই সে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ভুলে যায়। বাকি সাত পারসেন্ট দু থেকে পাঁচ ঘন্টার মধ্যেই ভুলে যায়। বাকি তিন পারসেন্টের মধ্যে দু পারসেন্ট চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই ভুলে যায়। আর এক পারসেন্টই মানুষ মনে রাখে। তাও খুব বেশিদিনের জন্য না। বেশির ভাগ মানুষই তার স্বপ্ন সারাজীবন মনে রাখতে পারে না। মানুষ স্বপ্ন দেখে নেগেটিভের মত। সেখানে কোন রং থাকে না। আরো মজার কথা মানুষ কখনো কোন অদেখা বিষয় স্বপ্নে দেখতে পারে না। যা সে কখন বা কোন সময় দেখেছে তাই সে স্বপ্নে দেখে। শুধুমাত্র দেখা বিষয়ের সাথে কল্পনা মিসে নতুন কিছু তৈরি হয়। মানুষের মস্তিক খুবই রহস্যময় একটি জগৎ। যে মানুষ স্বপ্ন দেখে সে শারীরিক ভাবে অনেক সুস্থ। অসুস্থ মানুষ স্বপ্ন দেখে কম। স্যার আমার মাথাতো এই সকাল বেলাই আউলা-ইয়া যাইতাছে। স্বপ্ন সম্পর্কে এতো কিছু আমিতো কোনদিন কল্পনাও করি নাই। বাবুর মারে গিয়া আমি আজকাই বলব, বলতো তুমি কি কি স্বপ্ন দেখেছো? আজকাই আমি ওর মাথাডা আউলা লাগাইয়া দিম। উঠেন স্যার। হাত-মুখ ধুইয়া নেন আমি আপনার জন্য চা নিয়া আসতাছি। গরম চা তে চুমুক দিলেই দেখবেন মাথা পরিষ্কার হইয়া যাইবো। কইলেন না স্যার, কি চা আনমু। লাল চা নাকি দুধ চা?
ইকবাল সাহেব আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে সংকেতের নোট খাতাটা নিয়ে ঘর থেকে রেবিয়ে গেলেন। বাদশাহের চোখ পড়ল টেবিলের উপরের বাটির মত দুটি বস্তুর দিকে। কত নানান রকম তার বাটি দুটো জড়িয়ে রেখেছে। সকালের সূর্যের আলোর বড়ই বিচিত্র দেখাছে সেটা।

দুই


চিন্তার সাথে কল্পনা মিশে তৈরি হয় স্বপ্ন। মানুষ কখনো গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখে না। সব স্বপ্ন দেখে হালকা ঘুমে। মানুষ যা চিন্তা করে তার শতকরা দশ শতাংশও সে ধরে রাখতে পারে না এবং যে স্বপ্ন সে দেখে তার অধিকাংশই সে ভুলে যায়। কিন্তু মানুষের মাথার চিন্তা ও স্বপ্ন যদি রেকর্ড করে রাখা যায় তবে আমি মনে করি, তা হবে এই শতাব্দির সেরা আবিষ্কার। আমি গত কয়েক বছরের গবেষণায় ও নিরালোশ পরিশ্রমে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি। যা দিয়ে মানুষের চিন্তা ও স্বপ্ন দুটোই রেকর্ড করে রাখা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস। শুধু তাই না। এই যন্ত্রের সাহায্যে অন্য কেউ কি চিন্তা করছে তা বোঝা যাবে। প্রয়োজনে তার সেই চিন্তাগুলো এডিট করা যাবে। যাতে করে মানুষের খারাপ চিন্তাকে ভাল কিছুতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। আর রাতে এই প্লেট সেল গুলো মাথায় লাগিয়ে ঘুমালে, যে স্বপ্ন মানুষ দেখবে তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে রেকর্ড হয়ে যাবে। পরবতীতে যে কোন সময় তা টিভি, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে দেখা যাবে। এখনো আমি এই যন্ত্রের কোন নাম ঠিক করি নি। আজ আমি আমার তৈরি যন্ত্রের পরিক্ষামূলক কার্যক্রম চালাব।
ভিডিও ক্যামেরার সামনে ইকবাল সাহেব যখন এই পর্যন্ত প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছে তখনই বাদশাহের গলার আওয়াজে তাকে রেকর্ডিং বন্ধ করতে হয়। খানিকটা বিরক্ত হয়েই তিনি বললেন, তোমাকে না বলেছি আমি না ডাকা পর্যন্ত আমার গবেষনাগারে তুমি আসবে না।
বাদশা কিছুটা ইতস্ত করে বলল, স্যার ফারুক স্যার আসছে। তিনি বললেন খুব জরুরি। তাই আপনারে বিরক্ত করলাম।
ফারুকের নাম শুনে ইকবাল সাহেবের বিরক্ত ভাব কেটে গেল। ফারুক নিজেও বিজ্ঞনি। ইকবার সাহেবই তাকে আসতে বলেছিল। এক সাথে তার দুইজনে মিলে এই যন্ত্রের পরিক্ষা চালানো কথা ছিল। তার আসতে দেরি দেখে ইকবাল সাহেব ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরি করছিল। যাও উনাকে এখানে নিয়ে আস। ইকবাল সাহেব নিজের উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছেন। গত সপ্তাহে তারা দু’জনে মিলে একটি কুকুরের মাথায় প্লেট টি লাগিয়ে দেখেছিল সেটা কোন কাজ করে কিনা। কুকুরের মাথায় বল লাগানোর পরে মনিটেরে বাইনারি কোডের রিডিং শুরু হয়। তার অর্থ এই প্রাণীর চিন্তা ইকবাল সাহেবের তৈরি মেশিন ধরতে পারছে। সেই কোড ডিকোড করে জানা যায়, কুকুরেও নিজস্ব চিন্তা জগৎ রয়েছে। কুকুরটি বিরক্তের সাথে চিন্তা করছে কি ভাবে এই উপদ্রব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। লোক গুলো তাকে নিয়ে কি করতে চায়। একটি কামড় বসিয়ে দেব নাকি? কিন্তু কুকুরটিকে বেশিক্ষন বাটিটি পরিয়ে রাখা সম্ভব হয় নি। মাথায় বাটি লাগানোর কারণে, কুকুরটি বেশি মাথা নাড়া-চড়া করায়, কিছু তার ছিঁড়ে মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গত এক-সপ্তাহে ইকবাল সাহেব রাতদিন এক করে মেশিনটি মানুষের মাথায় বসানোর উপযোগী করে তৈরি করেছে। আজ চূড়ান্ত পরিক্ষা চালানো হবে। ইকবাল সাহেবের খবর পেয়েই ফারুক তাকে সাহায্য করতে এসেছে। হার্বাড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরের করার সময় ফারুক সাহেবের সাথে তার পরিচয়। তার ডক্টরেটের বিষয় ছিল, কোয়ান্টাম ফিজিকস। দু’ভ্রু কুজো না করে ফারুক সাহেব কোন কথাই বলতে পারেন না এবং সব কিছুতেই তার একটা ক্ষুতক্ষুত ভাব।

তিন


ফারুক সাহেব একদৃষ্টিতে বাটির মত বস্তুর দিকে তাকিয়ে আছে। বাটি থেকে বের হওয়া নীল আলোয় ফারুক সাহেবে চোখ দু’টো চকচক করে জ্বলছে। বিস্ময়ে ফারুক সাহেবের কপাল বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে। জামার হাতায় ফারুক সাহেব সেই ঘাম মোছার চেষ্টা করছে। বাদশাহের মাথায় বসানো হয়েছে, যন্ত্রটি। মিনিটরে বাইনারি কোড ডিকোড হয়ে জানান দিচ্ছে, বাদশাহের মনের ভাব। ‘দু’স্যারে আমারে নিয়া এই গুলা কি শুরু করছে। আমারে আবার পাগল ঠাগল বানাইয়া ফেলাইবো না তো, বাবুর মা সকালে কইছিল বাড়িতে লবন নাই। না আইনা দিলে লবন ছাড়াই খাওয়া লাগবো। পাশের বাড়ির করিম ড্রাইভার আর একবার বাবুর মার কাছে ঘেঁষলে, সে বাড়ি দিয়া তার মাথা ফাটা-ইয়া দেব, স্যাররে বলতে হইবো সামনে মাস থাইকা মাইনেডা একটু বাড়াইয়া দিতে’ মিনিট পনেরো বাদশাহের মাথায় যন্ত্রটি বসিয়ে রাখার ফলে তার মনের এই কথা গুলো অনায়াসেই জেনে ফেলে দু’ বিজ্ঞানী। ইকবাল সাহেব সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ঠোঁটের কোনে গর্বে হাসি নিয়ে তাকাছিল ফারুক সাহেবে দিকে। ফারুক উত্তেজনায় নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের এই চোখাচোখি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখে বাদশা।

চার


ইতোমধ্যে আরো এক সপ্তাহ কেটে গেছে। ইকবাল ও ফারুক সাহেব বিভিন্ন বয়সের কয়েক জন মানুষের স্বপ্ন সফল ভাবে রেকর্ড করছে। কয়েক জনের চিন্তায় কিছুটা সম্পাদনাও তারা করে সফল হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাদশা এখন আর করিম ড্রাইভারকে মাথা ফাটিয়ে দেবার চিন্তা করে না। করিম ড্রাইভারও বাবুর মাকে নিয়ে কুচিন্তা ভুলে গেছে। আগামী মাসের বিশ্ব বিজ্ঞানী সম্মেলনে ইকবাল সাহেব তার তৈরি থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার সবার সামনে উন্মোচন করার সিধান্ত নিয়েছে। ফারুক সাহেবই এই নামটি নির্বাচন করেছে। কার্যক্ষমতা জন্য প্রফেসার ইকবালের নামটি বেশ পছন্দ হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা থেকেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মেঘের গর্জনের সাথে বিরামহীন বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। প্রফেসার ইকবাল ও ফারুক থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার সামনে নিয়ে বসে আছেন।
প্রস্তাবটি প্রথমে ফারুক সাহেবের কাছ থেকেই আসে। আর তাতেই নির্দ্বিধায় সায় দেয় প্রফেসার ইকবাল। ফারুক সাহেব দেখতে চেয়েছিল ইকবাল সাহেবে মাথায় কি কি চিন্তা হচ্ছে। তার চিন্তা গুলো হার্ডডিস্কে রেকর্ড করে রাখলে বিশ্ব বিজ্ঞান সম্মেলনে বলতে খুব সুবিধা হবে। কোন পয়েন্ট আর হারাবে না। সেই সাথে লাইফ ড্যামও সবাইকে দেখানো যাবে। নিজের চিন্তা ও স্বপ্নকে দেখার আশায় তিনি বাটিটি নিজের মাথায় বসিয়ে নিলেন। চোখ বন্ধ করে শুরু করলেন চিন্তা। আস্তে আস্তে প্রফেসার ইকবারের চিন্তার স্থর আলফা থেকে বিটা লেভেল অতিক্রম করল। ড.ফারুক এক পলকে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। একয়েক দিনে ড.ফারুক থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার নিয়ন্ত্রণ করা শিখে গেছে। জানেন কখন তাকে কি করতে হবে। প্রফেসার ইকবাল যখন ব্যস্ত ছিলেন নিজের আবিষ্কার নিয়ে তখন ড.ফারুক ব্যস্ত ছিলেন কি ভাবে এই আবিষ্কারের কৃতত্ব নিজের করে নেওয়া যায় সেই ভাবনায়। অনেক চিন্তা করে তিনি একটি পথ বের করেছেন। সুযোগ বুঝে পকেট থেকে চেতনা নাশক স্প্রেটি বের করে প্রোফেসর ইকবালের নাকে লাগিয়ে দেন। মুহূর্তে নিজের জ্ঞান হারায় প্রোফেসর। এবার মনিটরে নতুন করে কোডিং করে প্রোফেসর ইকবালের চিন্তা গুলো সব এডিট করে দেন। নতুন কমান্ড অনুসারে এই থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার আবিষ্কার করেছেন ড. ফারুক। প্রোফেসর ইকবাল ছিলো তার সহযোগী। মূলত তার একক প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে এই থিম এন্ড ড্রিম রেকোর্ডর। পুরো সম্পাদনার কাজটি সারতে তার বেশি সময় লাগল না। থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডরে যখন আবার নীল বাতি জ্বলে উঠল, তখন তার অট্ট হাসিতে বাদশা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো।

পাঁচ


বিশ্ব বিজ্ঞানী সম্মেলনের প্রস্তুতি বেশ ভাল ভাবেই চলছে। ড. ফারুক তার নতুন আবিষ্কার থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ আলোচনায় চলে এসেছেন। বিশ্বের নানা গণমাধ্যমে তার জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। নভেল কমিটি তার এই আবিষ্কারকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। রাতে ঘুমোবার আগে নিজের মাথায় ড্রিম সেল লাগিয়ে রেকর্ড করেছে নিজের স্বপ্ন। সারাদিন কয়েকবার সেই স্বপ্ন নিজে ও অন্যদের দেখিয়েছেন তিনি। ইদানীং ড. ফারুক ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের চুল গুলো অগোছালো রেখে নিজেকে মহান বিজ্ঞানীদের তালিকায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। সদা উৎপুল্ল ও প্রাণচঞ্চল তার সহযোগী প্রেফেসার ইকবার পূর্ব-নির্ধারিত কোডিং অনুসারে সব সময় ড. ফারুকের প্রশংসা সবার কাছে করে বেড়াচ্ছেন। এতে ড. ফারুকের অহংকার আরো কয়েক গুন বেড়ে যায়।
বিজ্ঞান সম্মেলনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। প্লেনে ওঠার আগে শেষ বারের মত থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার পরিক্ষা করছেন ড. ফারুক। থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডারের মধ্যে ধাতব কয়েল ও ফাইবার-ক্যাবলের জটিল সংমিশ্রণটি খুব নিপুণ ভাবে পরিষ্কার করছে ড. ফারুক। বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে দেখে নিচ্ছে কার্যকারিতা। দুহাত দূরেই দাঁড়িয়ে আছে প্রফেসার ইকবাল। তিনিও উৎসাহ নিয়ে তার কর্মকান্ড দেখছেন। ড.ফারুক অহংকার নিয়ে তার দিকে তাকাতে গিয়েই হাত থেকে ফেলে দেয় মাথায় দেওয়া বাটিটি। বৈদ্যুতিক সংযোগ অন থাকায় মুহূর্তেই শট সার্কিট হয়ে পুরো থিম এন্ড ড্রিম রেকোর্ডারে আগুন ধরে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তিনি পুরো প্রজেক্ট আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। এ সপ্তাহ বাদেই তার প্রজেকসন। এই দুর্ঘটনায় তার সব জস ক্ষ্যাতি সব হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তিনি কিছুতেই তা হতে দেবে না। দুই ভ্রু কুচকে চিন্তা করতেই তার মনে পড়ে গেল প্রোফেসর ইকবাল তার সব ফরমুলা একটি নোট খাতায় লিখে রাখতেন। সেই নোট খাতা পেলে এক সপ্তাহের ভিতর তিনি আবার এটা তৈরি করতে পারবেন। দ্রুতই তিনি ছুটলেন প্রফেসার ইকবালের গবেষনাগারে। তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে সহজেই পেয়ে যায় সেই নোট খাতা কিন্তু পাতা খুলতেই তার চোখ বড় হয়ে মাথা ঘুরে যায়। সবই সাংকেতিক শব্দে লেখা। তিনি অনেক চেষ্টা করেও কোন অর্থ বের করতে পারলেন না। নোট বই নিয়ে ছুটলেন প্রফেসার ইকবালের কাছে। তাকে সেই নোট খাতা দেখাতেই তিনি শিশুর মত সহজ ভাবে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে জানালেন এই চিহ্ন তিনি চেনেন না।

এর পরের বিশ বছর কেটে গেছে, এখনো বিজ্ঞানীরা সেই নোট খাতার সাংকেতিক চিহ্নের রহস্য বের করতে পারেন নি। ড. ফারুক নিরুদ্দেশ হয়েছেন। অনেকে বলে তিনি নাকি পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
আর প্রোফেসর ইকবাল প্রতি রাতেই স্বপ্ন দেখে থিম এন্ড ড্রিম রেকর্ডার তিনি আবার তৈরি করে ফেলেছেন। মাথার ভিতরের চিন্তা গুলো কেমন যেন তার চোখের সামনে ছবি হয়ে ভেসে ওঠে।

সিভেয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়