Cvoice24.com


মা’কে এখনো ভয় পাই: মেয়র নাছির

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১৬ জুন ২০১৮
মা’কে এখনো ভয় পাই: মেয়র নাছির

ছবি: সিভয়েস

আ জ ম নাছির উদ্দিন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সফল নগরপিতা। আর ক’দিন পরেই তিন বছর পার করবেন মেয়র হিসেবে। মেয়র হওয়ার পর থেকেই বলা যায় দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এমনকি ঈদের সময়গুলোতেও নিজের মতো করে কাটানোর বিন্দুমাত্র ফুরসত মেলেনা তাঁর। তাহলে কেমন কাটে তাঁর ঈদের দিনগুলো? শৈশব কৈশরেই বা কেমন কাটতো সে সময়গুলো। এসব কিছু নিয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে কথা বলেছেন সিভয়েস প্রতিবেদক হিমাদ্রী রাহা। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো মেয়রের সাথে কথোপকথনের অংশবিশেষ।

সিভয়েস: ঈদ মুবারাক। কেমন আছেন?

আ জ ম নাছির উদ্দিন: ঈদ মুবারক। জ্বি আছি ভালো। আপনি কেমন আছেন?

সিভয়েস: জ্বি আমিও আছি ভালো। আপনি এখন পর্যন্ত একজন সফল জনপ্রতিনিধি। দিনরাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন নগরবাসীর সেবায়। এমনকি ঈদের দিনেও ব্যস্ত থাকতে হয় আপনাকে। কেমন কাটে দিনগুলো?

আ জ ম নাছির উদ্দিন: দেখুন এখন আর ঈদের দিনে নিজে একান্তে কাটানোর মতো সময় আর পাই না। ভোরে ঘুম থেকে উঠে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ঈদের নামায আদায় করি। এরপর মরহুম পিতা ও প্রয়াত স্বজনদের কবর জিয়ারত করে বাসায় ফিরে মাকে সালাম করে শুরু হয় আমার ঈদের দিন। এরপর থেকেই বাসায় লাগাতার আসতে থাকে নেতাকর্মী, আত্মীয় স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। এদের সাথেই কেটে যায় সারাটা দিন। এর মধ্যেও খবর রাখতে হয় সিটি কর্পোরেশনের। এক কথায় দৌড়ের উপর থাকতে হয়। তবে এমন ব্যস্ততাকে আমি উপভোগ করি।

সিভয়েস: মেয়র হওয়ার আগের ঈদ ও মেয়র হওয়ার পরের ঈদ, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কেমন?

আ জ ম নাছির উদ্দিন: মেয়র হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় আমার। ঐ যে বললাম ঈদের টানা দুই তিন দিন ধরেই বাসায় নেতাকর্মীদের লাগাতার আসা যাওয়া থাকে,তাই কোথাও বের হইনা আমি। তবে মেয়র হওয়ার আগে ও পরে তেমন কোন পার্থক্য নেই বলতে গেলে। কারন আপনি জানেন আমি মেয়র ছাড়াও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে ওতোপ্রোতবাবে জড়িত। তাই আগেও ঈদের সময়গুলোতে সমান ব্যস্ত থাকতে হতো  আমাকে। বলা যায় সবসময় দায়িত্ব ও মানুষ পরিবেষ্টিত হয়েই থাকি আমি। সত্যি কথা বলতে গেলে মানুষের সাথে ব্যস্ত থাকতেই পছন্দ করি আমি। মানুষবিহীন জীবন আমার কাছে শাস্তি মনে হয়।

সিভয়েস: শৈশবের ঈদ আর এখনকার ঈদ। এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ কেমন।

আ জ ম নাছির উদ্দিন: শৈশবের ঈদ আর এখনকার ঈদ। এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। তখনকার দিনগুলো ছিলো ভাবনাহীন। খেলাধুলা আর ঘুরাঘুরিতেই সময় কাটতো বেশি। চাঁদ রাতের আগ থেকেই তোড় জোড় শুরু হয়ে যেতো ঈদের দিনগুলোতে কি করবো তা নিয়ে। নতুন জামা কিনতাম। কিন্তু দেখাতাম না কাউকে। লুকিয়ে রাখতাম। ঈদের দিন সকালে গোসল করার পর নামাযে যাবার  আগে গায়ে জড়াতাম লুকিয়ে রাখা জামা। সেই অনুভূতিগুলো কখনো ভোলার নয়। আর এখন! ব্যস্ততার ঘেরাটোপে বন্দী জীবন আমার। দায়িত্ব বেড়েছে। নগরবাসীর প্রতি দায়বদ্ধ আমি। তাই দিনরাত নগরবাসীর সেবায় সময় কাটাতে হয় আমাকে। আর আমিও এই ব্যস্ততাকে বরণ কওে নিয়েছি। তাছাড়া এমন ব্যস্ত থাকবো জেনেই তো আমি মেয়র হওয়ার জন্য লড়েছি।

সিভয়েস: ঈদের সময়টুকুতেও স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। বিষয়টি কেমন লাগে আপনার বা আপনার প্রতি অভিযোগ নেই তাদের?

আ জ ম নাছির উদ্দিন: দেখুন অভিযোগ নেই বললে মিথ্যা বলা হবে। আমার বাসায় ফিরতে প্রতিদিন অনেক রাত হয়। ফিরে দেখি আমার দুই সন্তান ঘুমিয়ে পড়েছে। আবার সকালে আমি উঠার আগেই তারা স্কুলে বা স্যারের বাসায় পড়তে চলে গেছে। মেয়ে এখন বড় হয়েছে। সে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে পড়ে। আর ছেলে পড়ছে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে । সত্যি কথা বলতে কি বাবা হিসেবে তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি না। কিন্তু আমার সন্তানরাও এটি মেনে নিয়েছে। কারণ তারা ছোটবেলা থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবনটা দেখে আসছে। তাই তারা বিরক্ত হয়না। বরং আমাকে সমর্থন দেয়। আর আমার স্ত্রীও আমার এই ব্যস্ততাকে মেনে নিয়েছে। সেও অনেক সহযোগিতা করে আমাকে। বলা যায় তার সহযোগিতার কারনেই সাংসারিক অনেক কাজ থেকে অনেকটা নির্ভার আমি।

সিভয়েস: আজকে এই পর্যায়ে আসার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

আ জ ম নাছির উদ্দিন: আমার মা। আমার মা আমার বড় অনুপ্রেরণা। ১৯৭২ সালে আমি বাবাকে হারিয়েছি। এরপর থেকেই মা আমার সব। তাঁর অনুপ্রেরণা তাঁর শাসনে আজকের এই আমি। আমরা মানে পরিবারের সবাই এখনো মায়ের নির্দেশেই চলি। তিনিই আমাদের সব। বলতে গেলে আমি এখনো আমার মাকে ভয় পাই। এই ভয় শ্রদ্ধা মিশ্রিত।

সিভয়েস: আপনার প্রিয় খাবার,প্রিয় লেখক,প্রিয় স্থান কোনটি?

আ জ ম নাছির উদ্দিন: আমার প্রিয় খাবার হচ্ছে লইট্টা মাছ। এই মাছের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে। এছাড়া দো’মাছা, অর্থাৎ শিং,মাগুর মাছ দিয়ে শিমের বিচি দিয়ে যে রান্না হয় তা খুব প্রিয় আমার।
প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার। তার অনেক বই পড়েছি আমি। তবে এখন পড়ার খুব একটা সময় পাইনা।
প্রিয় স্থান অবশ্যই আমার দেশ। আমার দেশের মতো এমন সবুজ সুন্দর দেশ আর কোথায় পাবেন বলেন? আমার মাতৃভূমিই আমার কাছে সৌন্দর্যের পীঠস্থান।

সিভয়েস: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আ জ ম নাছির উদ্দিন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার মাধ্যমে নগরবাসী ও সিভয়েসের সকল পাঠকদেরও জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক

-সিভয়েস/কেএম

হিমাদ্রী রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়