Cvoice24.com


‘প্লাস্টিক আমাদের জীবনকে গ্রাস করেছে’

প্রকাশিত: ১০:০১, ৫ জুন ২০১৮
‘প্লাস্টিক আমাদের জীবনকে গ্রাস করেছে’

ছবি: সিভয়েস

পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে প্লাস্টিক। প্লাস্টিক পণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার ও যত্রতত্র ফেলার ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক দিক ও প্লাস্টিক বন্ধে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন রোমা দাশ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক নানা দিক নিয়ে  সিভয়েসের সাথে কথা বলেছেন এই পরিবেশ কর্মী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিভয়েসের বিশেষ প্রতিবেদক ওয়াসিম আহমেদ

সিভয়েস: পরিবেশ বিধ্বংসী প্লাস্টিক নিয়ে তো আপনি অনেক কাজ করেছেন, এর প্রভাবটা কেমন?
রোমা দাশ: প্লাস্টিক আমাদের জীবনকে গ্রাস করেছে। শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের জীবনকেও হুমকিতে ফেলছে প্লাস্টিকের মাত্রারিক্ত ব্যবহার। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ উদ্ধিগ্ন। এমনকি অনেক দেশ প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। জনঅসচেতনতার কারণে প্লাস্টিকের এমন ব্যবহারে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য। প্লাস্টিক পচনশীল নয় সেটা সবার জানা। নগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য নদ-নদী কিংবা নালা-নর্দমায় ফেলা। বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, একটি প্লাস্টিক কণা পঁচতে হাজার বছরের বেশি সময় লাগে।  

সিভয়েস: কিন্তু প্লাস্টিক পণ্য তো আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে বলা যায়। তো এটাকে কিভাবে বর্জন সম্ভব?
রোমা দাশ: এখন আমাদের জীবনের সাথে প্লাস্টিক পণ্য যেভাবে মিশে গেছে তাতে বর্জন করাও সহজ না। সেক্ষেত্রে আমাদের অপ্রয়োজনীয়  প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা যখন জুস বা অন্য কোনো পানীয় গ্রহণ করি,তখন সহজেই স্ট্র ( পাইপ) ব্যবহার করি। অথচ এই পাইপটি ব্যবহার না করেও আমরা পানীয় পান করতে পারি।

এছাড়াও প্লাস্টিক পাইপটি দিয়ে খাবার গ্রহন নিরাপদ না। যদি আমরা পাইপটি বর্জন করি, তাহলে প্রথমত নিরাপদ খাবার গ্রহন হবে। অন্যদিকে পরিবেশ একটি প্লাস্টিক পণ্য থেকে মুক্তি পাবে। আবার দেখুন, আমরা যখন বিস্কুট বা অন্য পণ্য কিনি, পণ্যটি প্লাস্টিকের প্যাকেটজাত করা। এটি বহন করার জন্য ব্যবহার করি আরেকটি পলিথিন। চাইলে আমরা পলিথিনটি বর্জন করতে পারি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরো বলেন, গত বছর আমি পিকনিকে গেলাম কাপ্তাই। সেখানে প্রায় প্রতিটি পিকনিক স্পটে ওয়ানটাইম প্লেট, গ্লাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই প্লেটগুলোতে খাবার গ্রহন করা মোটেও নিরাপদ নয়। অদূর ভবিষ্যতে প্লাস্টিক থেকে বাঁচতে হলে এই মুহূর্তে তিনটি জিনিস বর্জন করার কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত স্ট্র বা পাইপ সর্ম্পণূরূপে বর্জন করা। দ্বিতীয়ত ওয়ানটাইম প্লেট বা গ্লাস ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। এছাড়াও প্লাস্টিক বোতল যতসম্ভব কম ব্যবহার করা।

সিভয়েস: বিশ্বজুড়েই তো প্লাস্টিকের ব্যবহার। সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক পন্যের ব্যবহার কিভাবে রোধ করা সম্ভব?
রোমা দাশ: পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ১০ হাজার প্লাস্টিক বোতলের পানীয় বিক্রি হয়। এছাড়াও পৃথিবীতে বার্ষিক যে পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়। সে পরিমাণ প্লাস্টিক দিয়ে চারটি পৃথিবীর সমান জায়গা ঢাকা যাবে। আমরা চাইলে সেটা সহজে বর্জন করতে পারি। কেননা দোকানে প্লাস্টিকের বোতলের পাশাপাশি কাঁচের বা ক্যানের বোতলে পানীয় পাওয়া যায়। কাঁচ বা ক্যানে অভ্যস্থ হলে, প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়াও আরেকটা বিষয় আমাদের খুব ভাবিয়ে তোলে, কফি শপে প্লাস্টিকের কাপে চা বা কফি বিতরণ করা হয়। বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, প্লাস্টিকের কাপে বা গ্লাসে গরম পানীয় পান করলে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নিসৃত হয়। যা শরীরে ক্যান্সার হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আরেকটি বিষয় সবার জানা, ‘প্লাস্টিক পণ্য পচনশীল নয়। বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, একটি সাধারণ প্লাস্টিক পঁচতে সময় লাগে হাজার বছরের বেশি। এই প্লাস্টিক পণ্যগুলো নদীতে বা সাগরে মিশলে আরো ক্ষতিকর হয়ে উঠে। দীর্ঘদিন পানিতে থাকলে সেগুলো প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়। সেগুলো মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। পরে আবার সে মাছগুলো খাবার হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া পানিতে প্লাস্টিকের কারণে সরাসরি জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়।’

সিভয়েস: প্লাস্টিকের এই দৌরাত্ম থেকে মুক্তির উপায় কি?
রোমা দাশ: আমাদের জন্য সুখবর হল, পুনঃব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক রিসাইকেল করার জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকায় কলকারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে ব্যবহৃত প্লাস্টিককে ‘প্লেকস্’ এ পরিণত করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তারমধ্যে চীন, উত্তর কোরিয়া, ফিলিপাইন অন্যতম।এছাড়াও পাট থেকে পলিথিন তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে দেশে। সেই প্রযুক্তি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করলে দেশের পাশাপাশি বিশ্বেও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা যাবে।

সিভয়েস: আপনাকে ধন্যবাদ
রোমা দাশ: আপনাকে ও সিভয়েসের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

বিশেষ প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়