Cvoice24.com

কক্সবাজার হবে তথ্য প্রযুক্তির শিল্পাঞ্চল: মোস্তফা জব্বার

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৫ মে ২০১৮
কক্সবাজার হবে তথ্য প্রযুক্তির শিল্পাঞ্চল: মোস্তফা জব্বার

কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন আজিম নিহাদ। ছবি: সিভয়েস

‘তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তলাবিহীন ঝুড়ি, দুর্যোগ, দুর্নীতির দুর্নাম থেকে আজ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তির অনন্য এক দেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়েছে বহুদূর। শেখ হাসিনা স্বল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন তা বহুলাংশে আজ সফল হয়েছে।’  

বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিতে নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাওয়া, স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ, ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে যাওয়া এবং কক্সবাজার কেন্দ্রিক আইসিটি খাতে গৃহিত প্রকল্পের আদ্যোপান্ত একান্ত স্বাক্ষাৎকারে সিভয়েসকে জানিয়েছেন বিজয় বাংলার জনক, তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।

বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিভয়েসের কক্সবাজার প্রতিনিধি আজিম নিহাদ।

সিভয়েস : সিভয়েসের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম।
মোস্তফা জব্বার : আপনাকেও অভিনন্দন।

সিভয়েস : বর্তমান সময়ের আলোচিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপন সম্পর্কে যদি বলেন?
মোস্তফা জব্বার : বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনকারী নিজস্ব মালিকাধীন দেশে পরিণত হয়েছি আমরা। দরিদ্র, দুর্নীতি, তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে মুক্ত হয়ে আজ বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে প্রযুক্তির মহাসড়কে। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আইটিইউ’র (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়াতে আর্থ স্টেশন স্থাপন করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে স্যাটেলাইট প্রকল্পটি গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।

কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পটি পুনরায় গ্রহণ করেন। ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য অনুমোদন হলেও এটি উৎক্ষেপন করতে এত টাকার প্রয়োজন পড়েনি। প্রকল্প ব্যয় থেকে ২০৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সরকারের একাগ্রতা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালনের কারণে উৎক্ষেপনের নির্দিষ্ট সময়ের একমাস পূর্বেই অর্থ্যাৎ জুনে উৎক্ষেপনের কথা থাকলেও মে মাসেই স্যাটেলাইটটি সফলভাবে মহাকাশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এটির মেয়াদ ১৫ বছর। কিন্তু ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও এর সুফল তিনগুণ ছাড়িয়ে যাবে।  

মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব প্রশ্ন করলেন, কেন এটি ফ্রান্সকে বানাতে দেওয়া হয়েছে। এবং মালিকানা নিয়েও তিনি প্রশ্ন করেছেন। এ বিষয়ে আমি ষ্পষ্ট বলতে চাই, এটি আমাদের গর্বের ধন। রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সম্পদ। এখানে ব্যক্তি মালিকানার কোন সুযোগ নেই। মান্না সাহেবের প্রশ্ন ছিলো, আমাদের দেশের ছেলেরা নাকি স্যাটেলাইট বানাতে পারে। হ্যাঁ বানিয়েছে তারা। তবে এটি একটি ন্যানো স্যাটেলাইট। এর ওজন এক কিলোগ্রাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ওজন ৩৬ হাজার কিলোগ্রাম। এটি তৈরী করার মত প্রযুক্তি এখনো বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। এ কারণে ফ্রান্সে বানাতে হয়েছে।
 
সিভয়েস : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কারণে বাংলাদেশ কোন কোন ক্ষেত্রে সুফল পাবে?
মোস্তফা জব্বার : বর্তমানে টিভি চ্যানেল সমুহ চালানোর জন্য বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করতে হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। এবং তথ্য পাচারেরও ঝুঁকি থাকে। এ কারণে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে। অন্যের কাছে সবসময় জিম্মি থাকতে হয়। কিন্তু স্যাটেলাইটের কারণে সম্প্রচারে আর্থিক সাশ্রয় হবে, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি থেকে রক্ষা পাবে। বাংলাদেশ যেহেতু দুর্যোগ প্রবণ দেশ, স্যাটেলাইটের কারণে দুর্যোগের আপদকালিন সময়ে অগ্রিম সংকেত মিলবে। দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু স্যাটেলাইট কঠিন দুর্যোগের মুহুর্তে জিও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রদান করবে। যেহেতু এটি নিজস্ব মালিকানাধীন, সেহেতু আর সেকেন্ড হ্যান্ডের নির্ভরতা থাকবে না।

পৃথিবীতে মহাকাশ গবেষণা, বিজ্ঞান চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাটেলাইটের ফলে আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজস্ব স্যাটেলাইট গবেষণা কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পারবে। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রযুক্তিবিদরা মাত্র দেড় মাসের প্রশিক্ষণে আর্থ স্টেশন চালাতে সক্ষম হয়েছে। তারা এখন নিজেরাই আর্থ স্টেশনের মাধ্যমে নিত্যনৈর্মিত্তিক তথ্য উপাত্ত আদান-প্রদান করছে।

সিভয়েস : কক্সবাজারে তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক কি কি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং হবে?
মোস্তফা জব্বার : তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ না হলে আগামীতে পৃথিবীতে টিকে থাকা কঠিন হবে। সারা পৃথিবীতে প্রথম দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল ঘোষণা করেছেন। এরপর করেছে বৃটেন। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশগুলো। তথ্য প্রযুক্তিতে কক্সবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল আইল্যান্ড হচ্ছে মহেশখালী দ্বীপ। প্রথমে ৮ ইউনিয়নকে ডিজিটাল সেবার আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া ছিল। বর্তমানে তিনটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা চালু হয়েছে। আজও (বৃহস্পতিবার) আমি মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ড কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। মহেশখালীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন যোগাযোগ এবং স্থানীয় মানুষের জীবনধারাকে গড়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা একটি বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। সারাদেশের অন্যান্য দ্বীপ অঞ্চলগুলোর কাছে আদর্শ হবে মহেশখালী আইল্যান্ড।

এছাড়াও রামুতে হাইটেক পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। ৮ একর ৭ শতক জমি বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। রামুর ইউএনও’র সাথে কথা হয়েছে। শিগগিরই সেখানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এই হাইটেক পার্কের ফলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে। স্থানীয় যুব সমাজ প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠবে। প্রকৃতপক্ষে এই হাইটেক পার্ক স্থাপনের ফলে কক্সবাজার হবে তথ্য প্রযুক্তির শিল্প এলাকা।

বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকদের সুবিধার জন্য ফ্রি ওয়াইফাই জোন ঘোষণা করা হবে। এই মুহুর্তে কক্সবাজারের নয়- দেশের সবচেয়ে বড় সংকট রোহিঙ্গা ইস্যু। আমরা তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সব রোহিঙ্গাদের ডেটাবেইসের আওতায় এনেছি। তাদের সবার ডেটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা অতীতে কোন সরকার করতে পারেনি। ডেটাবেইসের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সময় জটিলতা তৈরি হবে না।

সিভয়েস : শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক সংকট এখনো রয়ে গেছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কি।
মোস্তফা জব্বার : অনেক চ্যালেঞ্জ করে মাধ্যমিক শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়কে আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। যাতে আগামী প্রজন্ম বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়ে যেতে পারে। আগামীতে প্রাথমিক শিক্ষায়ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায়ও প্রযুক্তির জ্ঞান ধারণা যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পায়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহে যথেষ্ট প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক সংকট রয়েছে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও না হওয়ায় প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক শিক্ষায় সকল শিক্ষককে প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হবে এবং এরজন্য বাজেটও দেয়া হচ্ছে।

সিভয়েস : বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির প্রসার বিষয়ে সংক্ষেপে বর্তমান সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন?
মোস্তফা জব্বার : তথ্য প্রযুক্তির ইতিহাস হচ্ছে শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১, ২০০৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রযুক্তিতে যা কিছু অর্জন এবং সম্প্রতি মহাকাশ যুগে প্রবেশ তা শেখ হাসিনা সরকারই করেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে রূপান্তর ঘটিয়ে ৯ বছরে এর সুফল জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে সরকার। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ থেকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করার ভূমিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আগামীতে ২০১৮ সালে ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড চালু হবে। ২০২০ সালে বিশ্বের উন্নত দেশ ফাইভ-জি চালুর যে পরিকল্পনা করেছে, আমরা হয়ত তার আগেই ফাইভ-জি চালু করতে সক্ষম হবো। যার প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

সিভয়েস : আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মোস্তফা জব্বার : আপনাকেও ধন্যবাদ। সিভয়েসের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

-সিভয়েস/এসএ/কেএম

88

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়