Cvoice24.com

বিশ্বজয়ের নেশা যে নারীর

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১২ মে ২০১৮
বিশ্বজয়ের নেশা যে নারীর

ছবি : সিভয়েস

নাজমুন নাহার। বাংলাদেশী ভ্রমনকন্যা নামে পরিচিত। ভ্রমনই যার নেশা। ভ্রমনের মধ্য দিয়েই জেনেছেন অনেক দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি। খুব জোর দিয়ে বলেন "ভ্রমনের জন্যই জন্ম আমার" এই আত্মবিশ্বাসী নারীর তার সাহসী ভ্রমনকথা  তুলে ধরেছেন সিভয়েস২৪ এর কাছে। বর্তমানে ভ্রমনপিয়াসী এই নারী অবস্থান করছেন সুইডেনে। জানিয়েছেন ২০১৮ এর পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যের কথা। সিভয়েস প্রতিবেদক তানভিরুল মিরাজের সাথে নাজমুন নাহারের কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

সিভয়েস: এই মুহুর্তে কোন দেশে আছেন? এবং শততম দেশ হিসেবে কোনটা বেছে নিবেন?

নাজমুন নাহার: আমি এই মুহূর্তে সুইডেনে অবস্থান করছি! সুইডেন থেকেই পরবর্তী ছয় দেশের জন্য যাত্রা শুরু করবো এবং শততম জার্নি হবে ভুটানে সবাইকে নিয়ে! আমার শততম দেশ ভ্রমণের সাক্ষী যারা হতে চায় তাদেরকে নিয়ে শিঘ্রই একটা ইভেন্ট শুরুর মাধ্যমে জার্নির সব প্ল্যান পরিক্রমা করবো! আমি বিশ্বাস করি কালের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক জার্নি হয়ে থাকবে! বিশ্বজয়ের শততম যাত্রার সাথে আমার ভ্রমনসঙ্গীদের নামও ইতিহাসে স্থান পাক! জয় হউক বাংলাদেশের পতাকার, জয় হউক ষোলো কোটি বাঙালির, জয় হউক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের! যারা এই যাত্রায় অংশ গ্রহণ করবে, সবার হাতেই থাকবে বাংলাদেশের একটি পতাকা! আমরা বিশ্বজয়ী, আমরা গর্বিত জাতি! আমরা শক্তি আমরা বল এই সব স্লোগানেই আমার শুরু করবো আমাদের যাত্রা! 

সিভয়েস: সুইডেন থেকে পরবর্তী কোন ছয়টি দেশে যাবেন?

নাজমুন নাহার: ইথিওপিয়া, এরিত্রিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া, জিম্বাবুয়ে, সাউথ আফ্রিকা! 

সিভয়েস: কবে থেকে যাত্রা শুরু হবে?
 

নাজমুন নাহার: খুব সম্ভবত আগস্ট থেকে।

সিভয়েস: এই যাত্রা কি ভুটানে গিয়েই থামবে?
 

নাজমুন নাহার: হ্যাঁ, তবে ৯৯ তম দেশ ভ্রমনের পর দেশে ফিরবো। তরুণদের মোটিভেশন এর মধ্য দিয়ে ভ্রমনের জন্য উদ্বুদ্ধ করবো।

সিভয়েস: আপনার প্রথম ভ্রমনের স্থান ছিলো ভারতের পাঁচমারি। সেই ভ্রমনের অভিজ্ঞতা কেমন?

নাজমুন নাহার: প্রথম ভ্রমন। একটু অন্যরকম অনুভূতি তো থাকবেই। জীবনের প্রথম সব কিছু  মনে হয় একটু ভিন্ন অনুভূতিতে ভরা থাকে! স্বপ্নের যাত্রা যখন শুরু হয়েছিল তখন মনে হয়েছিলো অনেক দূর চলে গেছি! ওই অভিজ্ঞতা ছিল যেমন দারুন তেমনি শিক্ষণীয়! কিছুটা কষ্ট হলেও সেই ভ্রমণ থেকে অনেক মানসিক শক্তি পেয়েছি সামনের দিকে পথ চলার! বাংলাদেশের পতাকা যখন অনেক দেশের ছেলে মেয়েদের সাথে উড়িয়েছি , দেশাত্ববোধের এক চরম শিহরণ টের পেয়েছিলাম সেইদিন, জন্মভূমির লাল সবুজ পতাকা নিয়ে বিশ্ব ঘুরে দেখার স্বপ্ন জেগেছিলো সেই দিন! সেই ভ্রমণ থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি! মাটিতে ঘুমানো, শেয়ার করে কাজ করা, ঝর্ণার পানিতে গোসল করা, বিশ কিলোমিটার ব্যাকপ্যাক নিয়ে পায়ে হেঁটে জঙ্গলের মধ্যে এডভেঞ্চার করা, ভোর রাত চারটার সময় ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে দৌড়ে পাহাড়ের উপরে এক্সারসাইজ করতে যাওয়া, রক ক্লাইম্বিং করা, বন্য প্রাণীর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার উপায় জানা, ভিনদেশী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, দীর্ঘ সময় ট্রেন জার্নি করা, সব মিলিয়ে সতেরো বছর আগের সেই স্মৃতি এখনো আমাকে অনেক উৎসাহ দিচ্ছে। ভারতের পাঁচমারির সেই ভ্রমণ ছিলো আমার পৃথিবী ভ্রমনের জন্য নিজেকে তৈরির প্রথম ধাপ। সেই ভ্রমণের স্মৃতি সারাজীবন আমাকে বিশ্ব ভ্রমণের পথে আলো দেবে। 


সিভয়েস: ভ্রমনপথে এমন কোন স্মৃতি কি আছে যা ভোলার নয়?

নাজমুন নাহার: যেই জায়গা গুলোতে ভ্রমণ করাটা মনে হতো বিপদজনক, সেই জয়গুলোতে ভ্রমণ করার জন্যই আমি বেশি কৌতুহলী ছিলাম! বেশি উৎসাহী ছিলাম! আরো বেশী লড়াকু ছিলাম!  ভয়কে জয় করার উদ্দমতা সব সময় আমার ভেতর কাজ করতো! অভিযাত্রা, অভিযান, আবিষ্কারের নেশায় আমি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হাঁটছি! যেমন অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রীফ আর হোয়াইট হেভেন বিচে যাওয়ার জন্য সেইলিং বোটে সানডে প্যাসেজ পার হওয়ার মূহুর্ত ভোলার মতো নয়! উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে আমাদের সেইলিং বোট ভাসছিলো, আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সমুদ্র যাত্রা, বোটটি সমান্তরালে অবস্থায় ছিল না, বাতাসে পাল উড়ছে, বোটের একপাশ ছুঁয়ে আছে পানির সাথে আরেক পাশ উঠে গেছে অনেক উপরে যে পাশে আমরা সব যাত্রীরা উপরের লোহার রোডটি বসে ধরে আছি, বার বার টের পাচ্ছিলাম যদি কোনো ভাবে হাতটা লোহার রড থেকে ছুঁটে যেত তাহলে পানির মধ্যে সবাই পড়ে যেতাম! সমুদ্রের নিচে স্নোর্কেলিং করার সময় মুখ থেকে পাইপ খুলে লবনাক্ত পানি মুখের ভেতর চলে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো গলা থেকে পেট পর্যন্ত কেটে যাচ্ছিলো, সব  তিক্ততা সহ্য করেও সমুদ্রের নিচের সেই সুন্দর জলজ জীবন দেখে ভুলে গিয়েছিলাম সব কষ্ট! 

সিভয়েস: কথায় আছে সুন্দরেরও  ভয়ংকর রুপ থাকে। যতটুকু জানি আপনার নরওয়ে ভ্রমনটা ছিলো তেমন ভয়ংকর সুন্দর । বিশেষ করে নরওয়ের হেমসডেল নরডিক আলপাইন পর্বত যাত্রাটা কেমন ছিল?

নাজমুন নাহার: সেদিনের যাত্রাটা জীবনেও ভুলবো না।
আমরা ১০ জন অসলো থেকে রওনা দিয়ে হেমসডেল স্টেশন পর্যন্ত গেলাম, তখন সন্ধ্যা ৭ টা! অনেক জার্নি হয়েছিল! আমরা পাহাড়ের উঁচু জায়গায় স্টেশন থেকে ড্রাইভ করে যেতে হবে, আমাদের পাঁচ দিনের টুর, তাই নেমেই আমরা পাঁচ দিনের খাবার দাবার কিনে নিয়েছিলাম গাড়ি বোঝাই করে! ছোট্ট কারটি এক এক করে তিন ভাগে খাবার সহ আমাদেরকে ড্রাইভ করে নিয়ে যেতে হবে! দেড় ঘন্টা উঁচু পাহাড়ি পথ ধরে যেতে হবে দেড় ঘন্টা করে! ড্রাইভিং এর দায়িত্ব নিলো লার্স আর ডাফনে আর মারিয়া! যাওয়া আসা সব মিলিয়ে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে, এ ছাড়া যদিও আমাদের কোনো উপায় ছিল না! জানুয়ারীর বরফ ডাকা সন্ধ্যা, চারিদিকে চরম স্নো ফ্লেগ পড়ছে! যদিও আমরা সবাই অসলো থেকে কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ কারে করে হেমসডেল স্টেশনে এসেছিলাম, কিন্তু সেই বরফ ডাকা আল্পসের কাছে যেতে আমাদের শুধু ওই একটি গাড়িই ভরসা ছিল! দুর্গম পথ বেয়ে, তিনজনকে নামিয়ে দিয়ে আসলো লার্স! এবার আমি মারিয়া, ডাফনে আর লার্স পেছনে বেশ কিছু খাবার নিয়ে রওনা দিলাম! চারিদিকে জঙ্গল, অন্ধকারে সাদা সাদা বরফের কিছুটা হালকা আলো দেখা যাচ্ছে! আমাদের ছোট্ট কারটি ভারভাহী পাঁচদিনের খাবার, ব্যাকপ্যাক সহ আমাদেরকে নিয়ে ছুটলো, যতই উপরে যাচ্ছে ততই যেন দম নিচ্ছিলো কারটি! হটাৎ ভোঁ ভোঁ শব্দ করতে করতে থেমে গেলো গাড়িটি! গাড়ি আর চলছে না, স্নো, পাহাড়ি জঙ্গল, ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যে আমরা গাড়ি থেকে নেমে চাকা চেঞ্জ করলাম ১ ঘন্টা ধরে, সবাই  পেছন দিয়ে গাড়িটাকে ঠেলে উপরের দিকে উঠানোর চেষ্টা করলাম কোনো কাজ হলো না, আমাদের মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও কাজ করছে না যে কারো হেল্প নিবো! ঠান্ডায় জমে যাওয়া হাত পা মাইনাস থার্টি ফাইভ ডিগ্রিতে মনে হয় কেটে যাচ্চিলো! এর মধ্যে প্রচন্ড স্নোফল হচ্ছে, কোথাও কেউ নেই! এই রাতে কোথায় যাবো আমরা?, মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকলাম আমি, বার বার গাড়ির প্রব্লেম টা কি তা দেখার ট্রাই করছি আমরা, অনেক চেষ্টায় ২ ঘন্টা পরে গাড়ী ঠিক হলো, সামনের দিকের কোনো একটা তারে প্রব্লেম হয়েছিল! ওই দিকে নর্ডিক আল পাইন কটেজের মধ্যে আমাদের আগে যারা গিয়েছিলো তারা টেনশন করছিলো, আবার যারা স্টেশনে পরের ট্রিপে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলো তারাও! অনেক রাতে আমরা আল্পসের কাছাকাছি কটেজে পৌঁছালাম! গিয়ে দেখি পুরো কটেজের অর্ধেক স্নো তে ঢেকে আছে, দরজার সামনে অন্যরা স্নো কেটে সরানোর চেষ্টা করছে! আমরাও একসাথে শুরু করলাম! তারপর কটেজের ভেতরে আমি ঢুকে দেখি সেই এক ভিন্ন জগৎ! কি চমৎকার, ভেতরে রয়েছে ১২ টি রুম, প্রত্যেকটি রুমের নাম রয়েছে, আমাকে থাকতে দেয় হলো সিস্টার্স রুম নামক একটি রুমে, তাদের পূর্ব পাঁচ জেনারেশনের ছবি দেয়ালে, বাড়িটির পূর্বের ইতিহাস, আগে যখন এইখানে কেউ আসতো তখন তারা কিভাবে থাকতো, বেজমেন্টে স্কি করার সব ইকুইপমেন্ট! বিশাল এক ডাইনিং, কিচেন, ফায়ার প্লেস, বাড়িটির বেশিরভাগ অংশই গ্লাস ফিটিংস! আর তার বাইরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্নো আর স্নো! 

সিভয়েস: স্কি পারেন?

নাজমুন নাহার: হাহাহা। মারিয়া শিখিয়েছিল।
জীবনের প্রথম সেই স্কি করার মুহূর্ত মারিয়া আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলো! অনেকবার পরে ব্যাথা পেয়েছিলাম, তারপর গিয়েছিলাম ওদের সাথে স্কি করতে করতে, অনেক ভালো লেগেছিলো যখন আমরা উঁচু চূড়ায় গিয়ে বরফের মধ্যে গর্ত করে একটা কাপড় বিছিয়ে সবাই মিলে বসে ফ্লাক্সে করে বহন করা গরম গরম বেরী ফলের জুস্ খেয়েছিলাম! ওই ঠান্ডার মধ্যে তখন ওই গরম জুস্ যে কি মজা লেগেছিলো! আর একটি কথা না বললেই নয়, যখনি প্রচন্ড ঠান্ডায় হাতের আংঙুলের মাথায় রক্ত জমে ব্যাথা শুরু করতো আমরা তখনি হাতে ক্লাব দেয়া শুরু করতাম! আমি শিখেছিলাম ভয়ঙ্কর ঠান্ডায়ও কিভাবে বেঁচে থাকতে হয়! পৃথিবীর পথে পথে জীবনের ওই সব এডভেঞ্চার থেকে এই ভাবেই আমার অজানাকে জানার দিগন্ত প্রসারিত হতে থাকে! আর এটাই আমার কাছে এক ভিন্ন জীবন! 


সিভয়েস: মেয়েরা বাবার আদর অনেক বেশি পায়। এটা আপনার ক্ষেত্রে কেমন?

নাজমুন নাহার: বাবা মা দুজন সব সন্তানকে সমানভাবে দেখেন। তবে আমার ক্ষেত্রে বাবা সব কিছুতেই অনুপ্রেরণা দিতেন! ভালো কোনো কিছু করতে তার যেন না নেই! পরীক্ষায় খারাপ করলেও মাথা মুছে দিয়ে বলতেন পরের বার ভালো করবে, মন খারাপ করো না! অকারণে কখনো বকা দিতেন না! জীবনের শুদ্ধতা কি বাবা যেন ছোটবেলা থেকে তা শিখিয়ে দিয়েছিলেন! প্রতিটি মুহূর্তে তার যত্ন, তার খেয়াল, তার উৎসাহ ছিল অনেক বেশি! কোথাও কোনো প্রতিযোগিতা থাকলে নিজেই আগ্রহ করে নিয়ে যেতেন! আমিও ছিলাম তার একান্ত বাধ্য! বাবা আদর দিয়ে পথ দেখাতেন! অনেক গল্প শুনাতেন, পৃথিবীর গল্প, সাফল্যময় মানুষের গল্প, ঐতিহাসিক সব গল্প! বিভিন্ন দেশের গল্প! জীবনের বড় প্রেরণা তাই বাবা! বাবা পরীক্ষার হলের সামনে চকলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন,  একজন বাবা যে একটি সন্তানের নৈতিক ও সুস্থ চিন্তা শক্তি বিকাশে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে তা আমি দেখেছি! 

সিভয়েস: কিউবা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা কেমন?

নাজমুন নাহার: কিউবার অভিজ্ঞতা? সেই বার কিউবার সিনফুয়েগোস শহরে যাবার সময় গাড়ি নষ্ট হয়ে দুর্গম এলাকায় খাবার না পেয়ে শুধু আখের রস খেয়ে বেঁচে ছিলাম!

সিভয়েস: আর পেরুতে?

নাজমুন নাহার: সমুদ্র লেভেল থেকে ১৪০০০ ফুট পেরুর রেইনবো মাউন্টেন অভিযাত্রার সময় অল্টিটুডের জন্য তিনবার শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে উঠেছিলাম সেই সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে!


সিভয়েস: একজন নারীর দিকে সমাজ আলাদা একটা দৃষ্টি রাখে যেটি অনেকটা সংসারি হওয়ার কথা বলে। আপনিওতো একজন নারী । বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

নাজমুন নাহার: নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখবে। পৃথিবীর জন্য, দেশের জন্য একজন মানুষ হিসেবে যা যা কর্তব্য তা পালন করতে হবে! নিজেকে নারী ভেবে পিছিয়ে পড়লে চলবে না! জীবন যেন কোনো গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়। চেষ্টা করলে এই জীবন অনেক সুন্দর হতে পারে, সে জন্য নারীদেরকে শিক্ষিত হতে হবে, আত্মনির্ভরশীল হতে হবে!

সিভয়েস: কেনো বিশ্ব ভ্রমন করছেন?

নাজমুন নাহার: এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের এক ক্ষুদ্র ধূলিকণা আমি! মানুষের জীবনকাল খুবই অল্প সময়ের! এই জীবনটা বিধাতার আশীর্বাদ স্বরূপ আমি সুযোগ পেয়েছি এই পৃথিবীতে আসার! যে পৃথিবীতে আমি জন্ম নিয়েছি সেই পৃথিবীটা কেমন, সেই পৃথিবীর ভিন্ন গোলার্ধের মানুষ গুলো কেমন, তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি কেমন, এই পৃথিবীর প্রকৃতিকে বিধাতা কিভাবে সৃষ্টি করেছেন তা দেখার এবং অজানাকে জানার অদম্য ইচ্ছা ছোট বেলা থেকেই আমার ভেতরে লালিত হয়ে আসছিলো! বাবার কাছে দেশ বিদেশের অনেক ভ্রমণ কাহিনী শুনতাম, এছাড়াও আমার দাদা আলহ্বাজ মৌলভী আহাম্মদ উল্লাহ একজন ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ ছিলেন, তিনি আরবের অনেক দেশেই ভ্রমণ করেছেন ১৯২৬ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত! তিনি ঘোড়ায় চড়ে, জাহাজে করে ভ্রমন করতেন! 

সিভয়েস: বই তো পড়েন। কার কার লেখা আপনাকে অনুপ্রানিত করে?

নাজমুন নাহার: মুজতবা আলীর দেশ বিদেশে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির দেশে কবিতার দেশে, জ্যাক কেরুয়াকের 'অন দ্য রোড', এরিক উইনারের 'দ্য জিওগ্রাফি অব ব্লিস' সুজানা রবার্টসের ' অলমোস্ট সাম হয়ার', চেরিল স্টেরয়েডের 'ওয়াইল্ড: ফ্রম লস্ট টু ফাউন্ড' অন দ্য প্যাসিফিক ক্রেস্ট ট্রেইল', এবং মাসুদ রানা সমগ্র বইগুলো ও বিভিন্ন ট্রাভেল ব্লগার্সদের ব্লগ গুলো আমাকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করেছে!


সিভয়েস: ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেন কিভাবে?

নাজমুন নাহার: এক দু মাস আগে থেকেই প্লেনের টিকেট কেটে রাখি। বাই রোডে ভ্রমণ করলে আগে থেকেই ম্যাপ দেখে যে যে দেশের শহরগুলোতে যাবো, কি কি দেখবো, কোথায় থাকবো তার প্ল্যান করে নেই! ওই দেশ গুলোর উপর একটু পড়াশুনা করি, ট্রাভেল ব্লগ গুলো দেখি, আর  ব্যাকপ্যাক, মেডিসিন, ডাইরি, কলম, হাইকিং কেডস, ঠান্ডা ওয়েদারে জ্যাকেট, গরমে পাতলা জামাকাপড়, শুকনো খাবার, পানি, মেডিসিন, সেলফি স্টিক, ক্যামেরা, মোবাইল, হ্যাট, একটা বই, সানস্ক্রিন লোশন, সানগ্লাস, ছোট টর্চ লাইট এসব রেডি রাখি।

সিভয়েস: কোনপথে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং কেনো?

নাজমুন নাহার: বাইরোডে রোডেই ভ্রমন করতেই আমি বেশি স্বাছন্দ্য বোধ করি! কারণ পথে পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশ ভ্রমন করলে  অনেক বেশি কিছু দেখা যায় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ থাকে! দুই দেশের পাশাপাশি শহর গুলোর ল্যান্ডস্ক্যাপ গুলো কেমন, তাদের মানুষ, সংস্কৃতি, ভাষাগত, খাদ্যাভ্যাস ও মানুষের আত্মীয়তার বন্ধন গুলো কাছ থেকে দেখার সুযোগ থাকে! তাই আমি দক্ষিণ আমেরিকার দেশে গুলোর দক্ষিণ প্যাসিফিক থেকে আটলান্টিক সমুদ্রের  পাশ দিয়ে ঘেঁষে  যাওয়া প্রতিটি শহরে ৩৪০ ঘন্টা বাই রোডে ভ্রমণ করি! এ ছাড়াও আমি পূর্ব  যুগোস্লাভিয়ার প্রতিটি  দেশ এবং ইউরোপের  অনেক দেশেই বাই রোডে ভ্রমন করি! আমার সর্বোচ্চ  একটানা বাস  জার্নি  ছিল ২৮ ঘন্টা পেরুর চিকলায় থেকে লিমা শহর পর্যন্ত।


সিভয়েস: ২০১৮ সালের পরিকল্পনা কি কি?

নাজমুন নাহার: ১০০ টি দেশ ভ্রমনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিশ্বের দরবারে উত্তোলন! বাংলাদেশের নারীশক্তির অভিষেক বিশ্বের দরবারে! 
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মহাদেশে পদযাত্রার ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে আমি বই লেখা শুরু করেছি! আশা করি এই বছরের মধ্যেই শেষ করবো আমার ভ্রমণ বিষয়ক বইটি!
ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিলো অনাথ বাচ্চাদের জন্য উৎসাহ মূলক কোনো প্রজেক্ট চালু করা! তাই আমি 'ইন্সপেরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন' নামে একটি প্রজেক্ট চালুর মাধ্যমে আমার বিশ্ব ভ্রমণের কাহিনী নিয়ে উৎসাহমূলক পরিক্রমা দেয়ার জন্য বাংলাদেশের অনাথ শিশু, স্কুল কলেজের বাচ্চাদের সাথে কাজ করবো! পৃথিবীর আলোয় আলোকিত করার জন্য আমার  বিশ্ব ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতা তাদের সাথে শেয়ারের মাধ্যমে তাদেরকে কিছুটা সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করবো! 

সিভয়েস: ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।

নাজমুন নাহার: আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

-সিভয়েস/এইচআর/এমইউ

192

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়