Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


বাঁশখালীতে বাঘ হত্যার পর ফেসবুকে বুনো উল্লাস!

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ৫ জুন ২০২০
বাঁশখালীতে বাঘ হত্যার পর ফেসবুকে বুনো উল্লাস!

বাঁশখালীতে একটি মেছোবাঘকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় কিছু যুবক। হত্যার পর ‘বীরপুরুষ’ সাজতে বাঘটিকে কাঁধে নিয়ে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করা হয়। পরে বাঘটিকে পাশের একটি খোলা জায়গায় মাটিতে পুঁতেও ফেলে ওই যুবকেরা।

গত বুধবার (৩ জুন) উপজেলার কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাগমারা (টোনাইয়ার বাড়ী) নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বুধবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে যুবকদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা গেলেও আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন জলদী অভ্যারন্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও  বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জান শেখ।

তিনি বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই থেকে আমাদের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ ঢাকা অফিসকে জানানোর পর বনবিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। তারা মছোবাঘটি গর্ত থেকে তুলে উচ্চতা এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।’

তিনি আরো বলেন, “২০০৮ সালে মেছো বাঘকে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে আইইউসিএন। তাছাড়া বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রজাতি সংরক্ষিত। তাই এই প্রাণীটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে বা যারা বাঘটিকে হত্যা করে আবার ফেইসবুকে আনন্দ উল্লাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক বনবিভাগের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।'

স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে রাস্তার পাশে ধানক্ষেত থেকে  মেছোবাঘটিকে গ্রামীণ সড়ক রাস্তার পাশে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন যুবক মিলে সেটিকে ধাওয়া করে ধরে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে। পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ‘বীরপুরুষ’ সাজতে মেছোবাঘটি কাঁধে নিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে আপলোড দেয়। পরবর্তীতে তারা বাঘটিকে পার্শ্ববতী খোলা জায়গায় গর্ত করে রাতেই পুঁতে ফেলে।

কাথরিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রমিজ আহমদ জানান, বিগত ১ মাস যাবত আমাদের গ্রামে প্রায় ৯টির মতো ছাগল কে হত্যা করেছে বাঘটি। ঘটনার একদিন আগে মঙ্গলবার স্থানীয় বদি আহমদের পুত্র মো. জাহাঙ্গীরকে (৩৫) পাঁয়ে আঁচড় দিয়ে আক্রমণ করে পায়ে পালিয়ে যায় মেছো বাঘটি। ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে স্থানীয় আলিকদার ভিটার কবর স্থানের একটি গাছের উপর বাঘটি অবস্থান করতে দেখে গাছের নিচে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনে এলাকাবাসীরা এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বাঘটি গাছের উপরে বসে থাকতে দেখে শত শত নারী- পুরুষ জুড়ো হতে থাকে।  এক পযার্য়ে  চতুর্দিক থেকে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। পরবর্তীতে বাঘটি গাছ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব বাগমারা ৪,৭ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মাথায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসীরা। 

বনবিভাগ বলছে ‘"মেছো বাঘ (Fishing Cat) মূলত এক ধরনের বিড়াল। প্রাণীটি মানুষকে আক্রমণ করে না। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীটি বিচরণ রয়েছে। তবে জলাভূমি রয়েছে এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়। মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি খায়। তবে কখনো কখনো হাঁস-মুরগিও ধরতে পারে। জনবসতি স্থাপন, বন ও জলাভূমি ধ্বংস, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।”

বাঁশখালী প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়