Cvoice24.com


বাড়ির উঠানে ভিজলো লাশ, দাফন কাফনে আসেনি পরিবারের কেউ

প্রকাশিত: ১৬:১০, ৩ জুন ২০২০
বাড়ির উঠানে ভিজলো লাশ, দাফন কাফনে আসেনি পরিবারের কেউ

মিরসরাই উপজেলার ৫নং ওচমানপুর ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের কালা মিয়ার বাড়ির সালেহ আহম্মদ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজ বাসাতেই মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে গেছেন আরেক ভাই নুর আহম্মদ। স্ত্রী, ভাতিজারা কেউ লাশের সাথে গ্রামের বাড়ি যেতে রাজি হননি। বুধবার ভোরে এ্যম্বুল্যান্স যোগে ভাইয়ের লাশ নিয়ে একাই শহর থেকে আসেন নুর আহম্মদ। গ্রামে আসার পর পড়েন বড় বিপত্তিতে, লাশের সাথে পরিবারের কোন সদস্য না আসায় বাড়ির কোন লোকও এগিয়ে আসছেনা।

বাড়ির উঠোনের এক কোনে পড়ে আছে নূর আহমদের নিথর দেহ! বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে একাকার হচ্ছে। এ যেন এক পশুপাখির মৃত দেহ। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, গ্রামবাসী কেউ এগিয়ে আসেনি। গ্রামবাসী এগিয়ে আসা তো দূরের কথা লাশ দাফনে বাধা হয়ে দাঁড়ালো।

নুর আহম্মদ পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। এভাবে কেটে গেল পুরোদিন। এর মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজেছে সালেহ আহম্মদের নিথর দেহ! পরে বিকেলে খবর পেয়ে ছুটে যান ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ সংগঠনের সদস্যরা। লাশের গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করেন তারা।
 
জানা গেছে, দীর্ঘদিন কুয়েতে থাকার পর করে ২ বছর আগে দেশে এসে চট্টগ্রাম শহরে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন সালেহ আহম্মদ। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর জ্বর কাশি ছিল। এরমধ্যে তাঁর ভাইয়ের ছেলের পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সবাই ওই নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত ছিল। বাসার মধ্যে একা ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত ৩টায় তিনি মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে যান আরেক ভাই নুর আহম্মদ। স্ত্রী, ভাতিজারা কেউ লাশের সাথে গ্রামের বাড়ি যেতে রাজি হননি। 


জানতে চাইলে ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক জানান, বুধবার ভোরে একটি এ্যম্বুল্যান্স যোগে সালেহ আহম্মদের লাশ বাড়ি নিয়ে আসেন তার ভাই। লাশের সাথে স্ত্রী সন্তান কেউ না আসায় এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে যান। এজন্য কেউ পাশে যায়নি। তিনি জানান, সালেহ আহম্মদ প্রবাসে থাকতে দুবার স্ট্রোক করেছিলেন।

শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিক নুরুল আলম জানান, ওচমানপুর ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের সালেহ আম্মদের লাশ পড়ে থাকার খবর আসে। এরপর আমাদের সংগঠনের ওচমানপুর ইউনিয়নের সদস্যরা দ্রুত গিয়ে লাশের গোসল, কাফন দাফন সম্পন্ন করেছেন। তিনি আরো জানান, করোনা মহামারির সময়েই আমরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। সংগঠনটির কার্যক্রমের মূলে রয়েছে কোনো লোক মারা গেলে তাদের কাফন দাফন সম্পন্ন করা। এ ক্ষেত্রে তাদের খবর দিলেই সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে নিজ খরচায় সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়।

মিরসরাই প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়