Cvoice24.com


গণপরিবহনের ভাড়া বাড়লো ৬০ ভাগ, যাত্রী সমিতির প্রত্যাখান

প্রকাশিত: ১৫:০১, ৩১ মে ২০২০
গণপরিবহনের ভাড়া বাড়লো ৬০ ভাগ, যাত্রী সমিতির প্রত্যাখান

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পর মালিক সমিতির দাবির মুখে ৬০ ভাগ বাসভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। তবে সরকারি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে পুর্বের ভাড়া বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। 

রোববার (৩১ মে) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।

রোববার করোনাকালীন গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও তা কমিয়ে ৬০ শতাংশ করে মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৪ এর ২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরসহ) বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া নিম্নোক্তভাবে পুনর্নির্ধারণ করল।

তবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, সরকার যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে মালিকদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে করোনার এই মহাসংকটে থাকা দেশের অসহায় জনগণের উপর একচেটিয়াভাবে বাসের ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া অযৌক্তিকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে। এতে যাত্রীস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হবে।

এ বর্ধিতকরণের মাধ্যমে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানীকে আরো উসকে দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সাধারণ জনগণের মাঝে ভোগান্তি অনেকটায় বাড়বে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ না করে, যাত্রীসাধারণকে মালিকদের সাথে দর কষাকষির সুযোগ না দিয়ে, ভুয়া এবং অযৌক্তিক হিসাব দেখিয়ে এভাবে ভাড়া বৃদ্ধি অসহায় জনগণের উপর জুলুমের সামিল। তাই দেশের যাত্রীসাধারণ এই অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, করোনার এই সংকেট সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার নয়। সাধারণ মানুষ এমনিতেই খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন। প্রায় মানুষের আয়ের পথ বন্ধ। এর মধ্যে বাসভাড়া বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। তাই আমরা বাসভাড়া যেটা সরকার নির্ধারণ করলো তার প্রত্যাখ্যান চাই এবং বাসভাড়া পূর্বের মতো রাখার আবেদন জানায়।

এদিকে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৪ এর ২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরসহ) বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া নিম্নোক্তভাবে পুনর্নির্ধারণ করল।

(ক) আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ৩ মে প্রজ্ঞাপনমূলে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়ার (যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১.৪২ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো।

খ) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়ার (ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১.৭০ টাকা ও ১.৬০ টাকা। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়ার বিদ্যমান হার ৭ টাকা ও ৫ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।

(গ) ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে ভাড়ার হার প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ১.৬০ টাকার ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।

এ জন্য কিছু শর্ত দেয়া হয়, শর্তাবলি হচ্ছে-

>> একজন যাত্রীকে বাস বা মিনিবাসের পাশাপাশি দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না।

>> বর্ণিত প্রজ্ঞাপনদ্বয়ে উল্লিখিত ভাড়ার বিদ্যমান হারে প্রচলিত ভাড়ার চার্টে বর্ণিত ভাড়ার সাথে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ভাড়া বৃদ্ধির হার যোগ করে নতুন ভাড়া নির্ধারিত হবে।

>> স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক বাস বা মিনিবাস পরিচালনা করতে হবে।

>> অনুমোদিত ভাড়ার হার করোনাভাইরাসজনিত (কোভিড-১৯) সংকটকালের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ সংকট দূর হলে প্রজ্ঞাপনদ্বয়ের বিদ্যমান হারের ভাড়া পুনঃপ্রযোজ্য হবে।

জনস্বার্থে জারিকৃত এ ভাড়ার হার ১ জুন হতে কার্যকর হবে।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়