স্পট : উত্তর কাট্টলী
কাঁদা মাটি জল মাড়িয়ে করোনা আক্রান্তদের এ কেমন শবযাত্রা! 

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ৩০ মে ২০২০
কাঁদা মাটি জল মাড়িয়ে করোনা আক্রান্তদের এ কেমন শবযাত্রা! 

উপরের ছবিতে যা দেখছেন তা যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনও দেশের মরদেহ পরিবহনের চিত্র নয়। শবযাত্রা নিয়ে এটি চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর কাট্টলীর একটি শ্মশানে যাওয়ার চিত্র। যেই পথ দিয়ে প্রতিদিন দুই কিংবা একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া হিন্দুধর্মের মানুষের মরদেহ নিয়ে যেতে হয়। ভাঙাচোরা সড়ক ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই দাহ কাজে যুক্ত যুবকদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় কষ্ট। এরপরও এই স্বেচ্ছাসেবীরা থামছেন না এই মহৎ কাজ থেকে। বন্ধুর পথ মাড়িয়ে তারা প্রতিদিন একের পর এক সৎকার করে যাচ্ছের করেনা আক্রান্ত রোগীদের।      

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাহ করা হচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত শ্মশানে। তা নগরীর উত্তর কাট্টলী সনক দত্ত সার্বজনীন মহাশ্মশান নামে পরিচিত। 

এ দাহ কাজের জন্য সিটি করপোরেশন স্থান নির্ধারণ থেকে শুরু করে একটি কমিটিও গঠন করে। যেটির প্রধান করা হয়েছে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরলাল হাজারীকে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ওই কমিটি মাঝেমধ্যে দাহ করার কাঠের ব্যবস্থা করে দিলেও আরও কোনও দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকটা নীরবেই নিজ উদ্যোগে সৎকার করছেন 'করোনা মৃতদেহ সৎকার স্বেচ্ছাসেবক সংঘ চট্টগ্রামে'র সদস্যরা। 

তারা জানান, নগরীর উত্তর কাট্টলী টোল রোডের পাশে সমুদ্র পাড়ে অবস্থিত এ  মহাশ্মশান। কিন্তু এ কাজে নিয়েজিত স্বেচ্ছাসেবকদের মরদেহ নিয়ে যেতে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। কখনো বৃষ্টি পনিতে আবার কখনো জোয়ারের পানিতে কাঁদা মাটি মাড়িয়ে পিপিই পরে যেতে হয় তাদের। অনেক সময় করোনা আক্রান্ত মরদেহ স্ট্রেচার থেকেও মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

করোনা মৃতদেহ সৎকার স্বেচ্ছাসেবক সংঘ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক সুমন পাল সিভয়েসকে বলেন, 'সিটি করপোরেশন থেকে জহুর লাল হাজারী দাদাকে প্রধান করে একটি কিমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই যে দুর্ভোগ অবর্ণনীয় কষ্ট সেটা কি তারা জানেনা? আমরা নিজ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে চট্টগ্রামে যতজন করোনা আক্রান্ত হিন্দু মানুষ মারা যান তাদের সৎকার করি। কাঠ যদি পরিবার থেকে দিতে না পারে আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা করি, আর পরিবার থেকে দিতে পারলে তাদের দেওয়া কাঠেই দাহ করা হয়।' আসলে কমিটি থাকলেও সেভাবে সাপোর্ট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ সুমন পালের। 

একই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক জুয়েল শীলও৷ তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম নগরীর করোনা আক্রান্ত মৃতদেহগুলোকে দাহ এখানে করা হয়। সিটি কর্পোরেশন এটা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্তা ঠিক করে দেয়নি।প্রতিদিন ২-৩টি মরদেহ এখানে দাহ করা হয়। জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায় শ্মশান ও আসার রাস্তা। আবার ভাটার সময় পুরো রাস্তা হয়ে যায় কাঁদামাটি।এসবের উপর দিয়ে মরদেহ নিয়ে যেতে হয়। স্বেচ্ছাসেবক ভাইের খুব কষ্ট করে যেতে হয়। এই বিষয় দেখার যেন কেউ নেই। যত দ্রত সম্ভব রাস্তাটি যেন মেরামত করে দেয়।'

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সিভয়েসকে শনিবার রাতে বলেন, 'হিন্দু ধর্মের ভাই বোনরা যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাদের সৎকারের জন্য পৃথক একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কাউন্সিলর জহুর লাল হাজারীকে। এছাড়া সিটি করপোরেশনে  যারা হিন্দু ধর্মের কাউন্সিলর ও প্রকৌশলী আছেন তাদেরও কমিটিতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তাদেরই দেখভাল করার কথা। এই রকম দুর্ভোগের কথা জানতাম না আমি। যাই হোক আমি কালই কমিটিকে সেখানে পাঠাবো। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিব।'   

সিভয়েস- এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়