Cvoice24.com


লকডাউনকে পুঁজি করে চার-ছক্কায় আমদানিকারক ও মিল মালিকরা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৭ এপ্রিল ২০২০
লকডাউনকে পুঁজি করে চার-ছক্কায় আমদানিকারক ও মিল মালিকরা

ছবিঃ সিভয়েস

সম্প্রতি সারাদেশে সরকার ঘোষিত লকডাউনকে পুঁজি করে লাগামহীন দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে চার-ছক্কায় মেতে উঠেছেন আমদানিকারক ও মিল মালিকরা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি আটা-ময়দার লাগামহীন দাম বড়িয়ে বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছেন আমদানিকারক ও মিল মালিকরা। এতে আমাদের করণীয় কিছু নাই।

গমের দাম বাড়ায় গম থেকে তৈরি খোলা আটা ও ময়দার পাশাপাশি প্যাকেটজাত পণ্যের দামও বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারেও গমের দাম নিম্নমুখী রয়েছে।

ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে গমের টন প্রতি দাম ছিল ২২৪ ডলার ৫০ সেন্ট। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে দাম কমে ২১৫ ডলার ৩২ সেন্টে নেমে আসে। যদিও গত বছরের একই সময়ে পণ্যটির দাম ২২৩-২৩০ ডলারের মধ্যে ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর যোগান বেশি, আমদানি মূল্যও কম। গমের আমদানির পরিমাণ  এ বছর  ৪৩ শতাংশ বেড়েছে এবং আমদানি ব্যয় ৬০-৭০ টাকা কমলেও, করোনার প্রভাবে গমের তৈরী আটা ও ময়দার চাহিদাকে পুঁজি করে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে মন প্রতি ৭০-৮০ টাকা। 
 
সরেজমিনে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে গমের দাম মন প্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে গম থেকে তৈরি আটা-ময়দার বাজারেও। খোলা আটা ও ময়দার দাম পাইকারী বাজারে কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মানভেদে খোলা আটা ২৩-২৭ টাকা এবং ময়দা ৩৪-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জে গত শুক্রবার মন প্রতি কানাডায় গম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ১০০ টাকা দরে। এছাড়া রাশিয়া থেকে আমদানি করা গম মানভেদে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯০০ টাকায়। যা গত এক সপ্তাহ আগেও যথাক্রমে ৬০ ও ৮০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল।

খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন  বলেন, দেশের বিভিন্ন মিলে ডিও ব্যবসায়ীরা গমের সরবরাহ দেয়। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে খাতুনগঞ্জে গমের সংকট রয়েছে বলে দাবি করছে আমদানিকারকরা। এতে গমের দাম প্রতি মণে ৬০-৮০ টাকা বেড়েছে। চাহিদা থাকায় মিলগুলো বাড়তি দামে গম কিনে আটা ও ময়দা তৈরি করছেন। তারাও বাড়তি দাম যোগ করে আমাদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে খুচরা ও পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ছে।  

ফ্লাওয়ার মিল মালিকরা জানান, দেশীয় বাজারে হঠাৎ করেই গমের চাহিদা বেড়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু আমদানিকারক মন প্রতি ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছেন। ফলে এর প্রভাব বাজারে পড়ছে। এছাড়াও দেশে চলমান লকডাউনের কারণে কিছু কারখানা বন্ধ থাকায় আটা ও ময়দার কিছুটা সংকট তৈরী হয়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকায় সম্প্রতি বাজারে গম, আটা ও ময়দার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারক ও মিল মালিকরা। এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।

রাশিয়া ও কানাডা থেকে নিয়মিত গম আমদানিকারক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আহমেদ আলী বলেন, সম্প্রতি লকডাউনের সময় বন্দর থেকে পণ্য খালাসে পরিবহনসহ কিছু জটিলতার কারণে পণ্যটির দাম কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া চাহিদা বেশি থাকায় দামও একটু বেড়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশর অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশের সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ আপদকালীন সময়ে আটার উপর নির্ভরশীল থাকেন। দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটে আটা-ময়দা বিক্রি হলেও খোলা আটা-ময়দার উপরই ভরসা গরীব ও শ্রমজীবি মানুষ। বর্তমান সংকটকালীন সময়ে আটা ময়দার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চরম বিপদে রয়েছে নিম্নবিত্তের মানুষ। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা না হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না বলে মত দেন তিনি।

বর্তমানে খুচরায় প্রতিকেজি প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়, ময়দা কোম্পানি প্যাকেট ভেদে ৪২ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি করছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৮ টাকা দরে। সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা খোলা আটা-ময়দার দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।   

চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্যবৃত্ত মানুষের কাছে খোলা আটার পাশাপাশি প্যাকেট আটা-ময়দার চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু হঠাৎ করেই অতিরিক্ত চাহিদার কারণে সরবরাহ চেইনে ঘাটতি দেখা দেয়। এতে দাম বাড়লেও সংকট কাটেনি বাজারে।

-সিভয়েস/টিবি/এমএম

তাপস বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়