Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


লামায় শহীদ মিনার নেই ১১৭ শিক্ষালয়ে

প্রকাশিত: ১৮:০০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
লামায় শহীদ মিনার নেই ১১৭ শিক্ষালয়ে

বান্দরবানের লামা উপজেলার শহীদ মিনার নেই ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ দ্বারা অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ১২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে শহীদ মিনার স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। যার কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সকল বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা
নিবেদনের যথাযথভাবে সুযোগ পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস সম্পর্কে তারা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে জানলেও তাদের এ দিবস পালনে উৎসাহিত করা যাচ্ছেনা।

সচেতন মহলের মতে, মহান ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শহীদ মিনার না থাকা লজ্জাজনক! এটা বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা, চেতনা ও শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি)র ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।

আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসের এই দিনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধারা।

জানা গেছে, নুনারবিল মডেল, রাজবাড়ি, লামামুখ, ছাগল খাইয়া লাইনঝিরি, কলিঙ্গাবিল পাড়া ও সাবেক বিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিল করে শহীদ দিবস পালন করে দায়সারে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে তা-ও করা হয় না।

উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৩টি কলেজ, সরকারি প্রাথমিক ৮৫টি, রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪টি, কিন্ডারগার্টেন ৫টি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৪টি।  এছাড়া বেসরকারি বিদ্যালয় ও মাদরাসা মিলিয়ে আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে অন্তত ১৯টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে । অপর দিকে উপজেলায় দুই লাখের কাছাকাছি জনগণের বসবাস। আগের তুলনায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন হলেও পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের ক্ষেত্রে।

জানা গেছে, লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মাতামুহুরী কলেজ, কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজে, চাম্বি স্কুল এন্ড কলেজ, ডলুছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়, গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মেরাখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩নং রিপুজিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয় শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি বিদ্যালয়গুলোতে এখনো নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভাষা দিবসের মত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নুনারবিল সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহেদ সরোয়ার বলেন, সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা যায়নি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি এলে লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপজেলা সদরের বা ইউনিয়ন সদরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র কাছে স্থানীয়দের দাবির
প্রেক্ষিতে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি শহীদ মিনার তৈরি করে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মাহাবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সাথে অনেক আগে আলাপ করেছিলাম।

অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কান্তি চৌধুরী বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়না।

এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষার অর্জন-ইতিহাস উপস্থাপন করার জন্য অবশ্যই শহীদ মিনার জরুরি। পর্যায়ক্রমে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

রফিকুল ইসলাম, লামা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়