Cvoice24.com


সহজে মিলছে এন্টিবায়োটিক, বাড়ছে ঝুঁকি, সীমাবদ্ধ নজরদারি

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সহজে মিলছে এন্টিবায়োটিক, বাড়ছে ঝুঁকি, সীমাবদ্ধ নজরদারি

ছবি : সিভয়েস

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে সরকারের নীতিমালা থাকলেও, উপযুক্ত নজরদারি না থাকায় মানা হচ্ছে না নীতিমালা। ২০১৭ সালে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় বলা হয়, কেবল রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক এন্টিবায়োটিক বিক্রয়, সেবন বা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে কেবল সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী কর্তৃক সরবরাহকৃত এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু সেই নির্দেশের বাস্তবায়ন নেই।

বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন কারণে হঠাৎ ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-জ্বর হওয়া যে কারো জন্য খুবই সাধারণ একটি বিষয়। ঠান্ডা বা সর্দি-জ্বর মানুষকে খুবই সামান্য কারণে যেমন ভোগাতে পারে, তেমনি সহজেই সেরেও যেতে পারে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল সামান্য এ-জ্বরে, কোন রকম ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসিতে গিয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধের পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কিনছে মানুষ, যা মানব জাতির জন্য হুমকি স্বরুপ।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারি পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান সিভয়েসকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু অফিসে লোকবল সংকটের কারণে আমরা সবখানে নজরদারি করতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, এন্টিবায়োটিকের সু-ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জনগণের সচেতনতা খুবই জরুরী। আমাদের দেশে রোগীরা ওষুধের দোকান থেকে মুখস্থ এন্টিবায়োটিক ক্রয় করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেবন করে থাকেন। তারা খুব দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি চান। ফলে এন্টিবায়োটিকের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়ায় জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এন্টিবায়োটিকের অপরিকল্পতি ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের হাসপাতালে আইসিইউগুলোতে ৮০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং হতে পারে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা অণুজীব বা সুপারবাগ। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের চিত্র ভয়াবহ। পৃথিবীতে ৩০-৩৫ ধরনের  এন্টিবায়োটিকের মধ্যে অনেক এন্টিবায়োটিক কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে লাগে ১৫ বছর, বিপরীতে ব্যাকটেরিয়া রেজিস্টেন্স হতে লাগে এক বছর। আগামী সাত বছরে দুইবারের বেশি এন্টিবায়োটিক আসার সম্ভাবনা নেই। এক সময় দেখা যাবে, রোগের জীবাণুকে কোনো ওষুধ দিয়েই ধ্বংস করা যাচ্ছে না। এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে দেশের শিশুরা।

নগরীর চকবাজার, বাহদ্দারহাট, হাজারীগলি, আগ্রবাদ এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা চাহিবার মাত্র ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা প্রেসক্রিপশনবিহীন বিভিন্ন রকম সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে জটিল রোগের এন্টিবায়োটিক বিক্রয় করছে।

কেন প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রয় করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আগ্রাবাদের ফার্মেসি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, অনেকে আমাদের কাছে এসে নানা ধরণের অসুখের কথা বলে এবং অনুরোধ করে ওষুধ দেওয়ার জন্য। আমরা যেহেতু অনেক বছর ধরে ওষুধ ব্যবসার সাথে আছি, আমাদেরও একটা অভিজ্ঞতা আছে রোগ নিয়ে। তিনি আরো বলেন, কোর্স এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি ক্রেতাদের।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সাইদুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, সাধারণ জ্বর ও সর্দি কাশিতে সাধারণত কোনো এন্টিবায়োটিকের দরকার হয় না। কিন্তু ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র না লাগায় মানুষ সাধারণত অসুখ-বিসুখের জন্যও নিকটবর্তী দোকান থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে তা সেবন করছে।

জীবাণু সংক্রমণ নিশ্চিত না করে কখনো এন্টিবায়োটিক গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক খাজা নাজিমুদ্দিন বলেন, সাধারণত জীবাণুর কালচার সেনসিটিভিটি করেই নিশ্চিত হওয়া যায় কোন জীবাণু দিয়ে সংক্রমণ হয়েছে এবং কোন এন্টিবায়োটিক আপনার জন্য প্রযোজ্য। কালচারের রিপোর্ট পেতে সময় লাগে, ততদিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো। চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া কখনো নিজে বা কারো কথায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না। এন্টিবায়োটিক গ্রহণের আগে সঠিক ডোজ, কত দিন খেতে হবে ও কোন সময় খেতে হবে, ভালো করে জেনে নিন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ডোজ পড়তে হবে। অধিকাংশ ভাইরাসজনিত রোগ ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। এসময়টুকুতে কোনো ওষুধ না খাওয়াই ভালো। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সন্দেহ হলে সঠিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ফেলুন।

-সিভয়েস/এসসি

তাপস বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়