Cvoice24.com


তৃণমূল থেকে ‘জননেতা’ আ.জ.ম নাছির

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
তৃণমূল থেকে ‘জননেতা’ আ.জ.ম নাছির

আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে। কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। বলা যায় তৃণমূল থেকেই ছাত্ররাজনীতির নানা ধাপ পেরিয়ে, নানা প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে আজকের এই আ.জ.ম নাছির হয়ে ওঠেছেন তিনি। তবে খুব একটা মসৃণ ছিলোনা তাঁর এই রাজনৈতিক পথচলা।

প্রাথমিক জীবন: নাছির উদ্দীনের জন্ম চট্টগ্রামে। তার বাবা সৈয়দ মঈনুদ্দিন হোসাইন ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগি এবং মা ফাতেমা জোহরা বেগম। তিনি ১৯৭৩ সালে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পাস করেন।

রাজনৈতিক কর্মজীবন: নাছির উদ্দীন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। বিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দেন উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের মিছিলে। আশির দশকের শুরুতে নাছির উদ্দিন রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৭ সালে, তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং একই সাথে নগর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১৯৮০ এবং ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। নাছির উদ্দীন পর পর দুইবার নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। নভেম্বর ২০১৩ সালে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৫ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ৭ মে শপথ গ্রহণ করেন।

ক্রীড়া কর্মজীবন: দীর্ঘকালীন ক্রীড়া সম্পৃক্ততার কারণে ক্রীড়া বিনোদনের মাধ্যমেই নাছির উদ্দিন পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে তিনি নানাভাবে সম্পৃক্ত।

সম্প্রতি সিভয়েসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি থেকে শুরু করে এখনকার সময়ে চলমান রাজনীতির নানা দিক। 

সিভয়েস: রাজনীতিতে কিভাবে সম্পৃক্ত এবং কখন থেকে আপনার রাজনীতিতে হাতেখড়ি?

আ.জ.ম নাছির উদ্দীন: আসলে রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি ১৯৬৯ সালে। আমি যখন চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে ছাত্র সমাজ ছিলো তারা তখন দেশকৃষ্টি আন্দোলন করেছিলো। যেটি পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিলো। তখন ছাত্রলীগের নেতারা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় শহর ছাত্রলীগের একদল নেতা সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলো। তারা শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্রদের সামনে আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ও মিছিলে অংশ নেয়ার আহবান জানান। আমি তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে সেই মিছিলে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। বলা যায় ঐদিনই আমার রাজনীতিতে হাতে খড়ি।

সিভয়েস: কিভাবে আপনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন?

আ.জ.ম নাছির উদ্দীন: শুরু হলো ৭০ সালের নির্বাচন। গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলেন। দেশের মানুষকে সংগঠিত করলেন। সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। তারপরও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়া হয়নি। বলা যায় বাঙালির স্বার্থের বিপক্ষে পাক জান্তারা অবস্থান নেয়। বঙ্গবন্ধু তখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণের মাধ্যমে তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং একত্রিত করেছিলেন। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো ও দেশ স্বাধীন করেছিলো। স্বাধীনতার পর দেশকে অর্থহীন করার জন্য বিভিন্ন দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা উঠে পড়ে লাগে। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়েই মূলতঃ আমি পুরোপুরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। তখন আমি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যয়ন করি। ১৯৭৬ এর প্রথম দিকে কলেজের লিচুতলায় আমরা কয়েকজন সমবেত হয়ে ‘জয় বাঙলা,জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করি। বলা যায় তখন চলমান মার্শাল ল বলবৎ থাকা সত্বেও আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে ঝটিকা মিছিল করে চন্দনপুরা দিয়ে বের হয়ে যাই। বলা যায় তখন থেকেই সচেতনভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হই। এরপর শহর ছাত্রলীগের (বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। 

সিভয়েস: কিভাবে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন?

আ.জ.ম নাছির উদ্দীন: তখন আমরা যারা চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ করতাম একটি শ্রেণিকক্ষে সম্মেলনের ব্যবস্থা করেছিলাম। সেখানে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছিলো। সেখানে আমি সর্বসম্মতিক্রমে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। 

সিভয়েস: ছোট বেলার ছাত্র-রাজনীতি থেকে আজ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার নেপথ্য?

আ.জ.ম নাছির উদ্দীন: ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে শহর ছাত্রলীগের (বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগ) সম্মেলন হয়। সেখানে আমি শহর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। এরপর যখন মহানগর ছাত্রলীগ গঠিত হয় তখন আমি মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। পরবর্তী সম্মেলনে আমি আবারো মহানগর ছাত্রলীগের সাধরণ সম্পাদক নির্বাচিত হই এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়। তখন সহ-সভাপতি ছিলো ৭জন। তাদের তখন বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বগুলো পালন করতে হতো। এর পরের সম্মেলনে ১৯৭৯ সালের দিকে আমি সরাসরিভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। তখন সভাপতি ছিলো আবদুল মান্নান (যিনি বগুড়া থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন) আর সাধরণ সম্পাদক ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। এরপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমি।

সিভয়েস: আপনার রাজনৈতিক চলার পথে কোনো প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়েছিল কিনা?

আ.জ.ম নাছির উদ্দীন: আমার এই রাজনৈতিক চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিলনা। বার বার বিরোধী শক্তির ঘাত প্রতিঘাত ও নানা প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে আজকের এই অবস্থানে আমি। কখনো মিথ্যা ও অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি। মাননীয় নেত্রীই আমাকে খুঁজে নিয়েছেন। আমাকে তিনি এই সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসিয়েছেন। তিনিই আমাকে মেয়র নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আমৃত্যু তাঁর এই প্রতিদান দিয়ে যাবো। দলের জন্য দেশের জন্য নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে কাজ করে যাবো। এটাই আমার অঙ্গীকার। এটাই আমার প্রত্যয়।

-সিভয়েস/এমএম

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়