Cvoice24.com


জিয়ার জন্ম বিহারে, খালেদার শিলিগুড়িতে, এরশাদের কুচবিহারে: শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
জিয়ার জন্ম বিহারে, খালেদার শিলিগুড়িতে, এরশাদের কুচবিহারে: শেখ হাসিনা

ছবি : সংগৃহীত

ইতালি সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোমের পার্কো দে প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “জিয়াউর রহমানের জন্ম বিহারে, এরশাদের (এইচ এম এরশাদ) জন্ম কুচবিহারে, খালেদা জিয়ার জন্ম শিলিগুড়ি। একজনও এই মাটির সন্তান না। একমাত্র আমার বাবা এবং আমি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটির সন্তান।

তিনি বলেন,বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের মধ্যে কেবল তিনি এবং তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই এ মাটির সন্তান ছিলেন, এবং সে কারণেই তিনি ত্যাগ স্বীকার করেও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এভাবে চিন্তা করেনি। তাদের ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। আমাদের মাটির টান আছে এজন্য আমাদের একটা কর্তব্যবোধ আছে। আর আমরা মনে করি ক্ষমতা মানে কাজ করার সুযোগ, জনসেবা করার সুযোগ, আমরা জনগণের সেবক। সেবক হিসেবে কাজ করি। সেটা হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আমাদের আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না, আমরা এগিয়ে যাবো।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে দেশকে জানতে হয়। অনেকেই ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু এদেশ সম্পর্কে জানে না। কারণ যাদের জন্ম বাংলাদেশের মাটিতে হয়নি তারা জানবে কোথা থেকে।’

দেশের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে বিদেশিদের নেতিবাচক মনোভাবের ছিল। এমন একটা অবস্থা ছিল এক সময়, বাংলাদেশ শুনলে আগেই বলত ওহ… বাংলাদেশ ওখানে তো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মানুষ খেতে পায় না, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। বাংলাদেশটাকে একটা হেয়'র  চোখে দেখতো। যেটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ছিল। যেটা আমাদের জন্য কষ্টের ছিল।

আর এক সময়ের ‘দাতা দেশগুলোও’ এখন বাংলাদেশকে আর ‘ভিক্ষা দিতে’ না এসে বরং ‘উন্নয়ন সহযোগী’ মনে করে সহযোগিতা করতে আসে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “কারো কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজেরা পারি সেটা প্রমাণ করেছি। এখন আর কেউ ওই দাতা দাতা বলে আমাদের ভিক্ষে দিতে আসে না। উন্নয়ন সহযোগী বলে আরও কত উন্নয়ন করবো সে সহযোগিতা করতে আসে।"

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চেয়েছিল আমাদেরকে বদনাম দিতে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারপর বলেছিলাম ওটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করব। আজকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি।”

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা আজকে সেখানে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিরোধী দলে থাকতেই তার প্রতিজ্ঞা ছিল, কোনোদিন সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করবেন।

“এমনভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব… যে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে, সেই বাংলাদেশ শুনলে যেন মানুষ বলে… নাহ বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে মুজিববর্ষে এসে এইটুকু দাবি করতে পারি, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে সেই জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছি।”

বিদেশে যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, প্রবাসীদের সেভাবে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আচার-আচরণ, ব্যবহার সব কিছুতে যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।’

বিমানবন্দরে অনেকসময় প্রবাসীদের হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, “আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শুনে বাইরে থেকে আসবে, ভাবে যে একটু চাপ দিলেই মনে হয় কয়েকটা ডলার পাওয়া যাবে।

“একটা কথা মনে রাখবেন। ঘুষ যে দেয় সেও যেমন অপরাধী, যে নেয় সেও অপরাধী। এই দিয়ে দিয়ে অভ্যাসটা আপনারা খারাপ করেন। আগামীতে আর করবেন না।” ‌

আর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, আমার কিন্তু বয়স হয়ে গেছে। আমার কিন্তু ৭৩ বছর বয়স, এটা মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আগে যখন অল্প বয়স ছিল অনেক ঘুরেছি। এখন আর এত সম্ভব না। তারপরও কাজ অনেক বাকি রয়ে গেছে।

“কাজেই যতটুকু সময় পাই, ততটুকু সময় দেশের কাজ করার চেষ্টা করি। ‌যত দ্রুত এই দেশটাকে উন্নত করতে চাই। সেজন্য সকলের সহযোগিতা চাই।”

প্রত্যেক উপজেলা থেকে আরও ১ হাজার করে লোক প্রবাসে পাঠাতে সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ডিজিটাল পাসপোর্টের পর এখন ই-পাসপোর্ট চালুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ই-পাসপোর্টের যুগ, আমরা ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি। যাতে কেউ আর ধোঁকায় না পড়ে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।’

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি যে, প্রবাসী কেউ যদি দেশে যায় বিমানবন্দরে মাঝে মধ্যে খুব হয়রানির শিকার হতে হয়। আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শুনে বাইরে থেকে আসবে তখন ভাবে একটু চাপ দিলে বোধহয় ডলার পাওয়া যাবে।’

ঘুষ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন ঘুষ যে দেয় সেও যেমন অপরাধী আর যে নেয় সেও অপরাধী। যে নেয় শুধু সে অপরাধী নয়, যারা দেয় তারাও অপরাধী। এই দিয়ে দিয়ে অভ্যাসটা আপনারা খারাপ করলেন। আগামীতে আর করবেন না।’

‘প্রত্যেকটা জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছি। কোথাও কোন অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ধরা পড়ে। ধরা পড়া শুধু না, তথ্য সরাসরি আমার কাছে চলে আসে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ইতালি আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস ফরাজি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন হোসনে আরা বেগম।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার।

-সিভয়েস/এসসি

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়